Advertisement
০৯ মে ২০২৪

জমি নিয়ে উত্ত্যক্ত করায় আত্মঘাতী শিক্ষিকা

সাড়ে ৭ কাঠা জমির লোভে উত্ত্যক্ত করা হতো এক শিক্ষিকাকে। তিনি তা মেনে নিতে পারেননি। শনিবার গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেন রীতা সরকার (৩২) নামে ওই শিক্ষিকা।শিলিগুড়ির শক্তিগ়ড়ে তিন রাস্তার মোড়ে সাড়ে ৭ কাঠা জুড়ে তাঁদের জমি ও বাড়ি।

রীতা সরকার

রীতা সরকার

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০২:২৪
Share: Save:

সাড়ে ৭ কাঠা জমির লোভে উত্ত্যক্ত করা হতো এক শিক্ষিকাকে। তিনি তা মেনে নিতে পারেননি। শনিবার গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেন রীতা সরকার (৩২) নামে ওই শিক্ষিকা।

শিলিগুড়ির শক্তিগ়ড়ে তিন রাস্তার মোড়ে সাড়ে ৭ কাঠা জুড়ে তাঁদের জমি ও বাড়ি। শক্তিগড় বালিকা বিদ্যালয়ের ভূগোলের শিক্ষিকা রীতা সেখানে মায়ের সঙ্গে থাকতেন। দাদা বিক্রম থাকেন রায়গঞ্জে। তিনি বলেন, ‘‘মা আর বোনকে বাড়ি ছাড়া করতেই অভিযুক্তরা আমার বোনকে রাস্তায় কটূক্তি করত। অভিযুক্তেরা চেয়েছিল জমিটা নিয়ে নিতে।’’ তিনি জানান, বাড়ির দরজায় দাঁড়িয়ে গালাগালি করত। মা-কে তুলে শ্মশানে নিয়ে যাওয়ার হুমকিও দিয়েছে। বোন এ সব মেনে নিতে পারেনি।’’ বিক্রম জানান, সুইসাইড নোটে তাঁর বোন মাকেও বাড়ি থেকে চলে যেতে লিখে গিয়েছে।

রীতার মা রেখাদেবী বলেন, ‘‘স্কুলে যাতায়াতের পথে ওরা মেয়েকে উত্ত্যক্ত করত। প্রাণে মারার হুমকি দেওয়ায় মেয়ে পুলিশে বা কোথাও অভিযোগও করতে পারেনি। আমি সুবিচার চাই। আমাদের জমি হাতানোর জন্যই এ সব চলছিল বলে মনে হচ্ছে।’’ তিনি জানান, রটিয়ে দেওয়া হয়েছিল, তাঁরা না কি বাড়ি বিক্রি করে দেবেন।

রীতা সুইসাইড নোটে অভিযুক্তদের নাম লিখে গিয়েছেন। তাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ সূত্রের খবর, ধৃত মিঠুন দাস এলাকার তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী বলেই পরিচিত। বিধানসভা নির্বাচনে তিনি দলের হয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহের কাজ করেছিলেন। তিস্তা ব্যারেজ এবং পূর্ত দফতরের ঠিকাদারিও করেন তিনি। তাঁর সঙ্গী সুবীর সাহার এলাকায় একটি সিমেন্টের দোকান রয়েছে।

ঘটনায় তৃণমূলের নাম জড়ানোয় অস্বস্তিতে দল। স্থানীয় বিধায়ক তথা মন্ত্রী গৌতম দেব কলকাতায়। বিরোধী দলনেতা রানা সরকার-সহ তৃণমূল নেতারা এ দিন রীতাদের বাড়ি যান। গৌতমবাবু বলেন, ‘‘দোষীর কোনও রং হয় না। এমন একটা মেয়ের মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না। পরিবারটির পাশে থাকব।’’ দলের স্থানীয় ওয়ার্ড সভাপতি কৌশিক দত্ত বলেন, ‘‘মিঠুন তৃণমূল করত। নেতা বা কোনও পদে নেই। ছোট মাপের ঠিকাদার। প্রোমোটার নয়।’’ তিনিও জানান, রাজনীতির রং দেখা হবে না।

দোষীদের বিরুদ্ধে আইন মোতাবেক ব্যবস্থা হবে। কৌশিকবাবু রীতাদেবীর স্কুলের পরিচালন সমিতিরও সভাপতি। তিনি জানান, মেয়েটি খুব ভাল ছিল। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘সমস্যা হলে পাড়ার মেয়ে আমাদের তো একবার জানাতে পারত। ওঁর দাদা, মামা এখন এসে সব শুনছেন। কেউ কোনও দিন কিছুই বলেননি।’’

ঘটনার দিন বিকালে ঘর থেকে রীতার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। টেবিলের উপর পড়ে থাকা সুইসাইড নোটে তাঁর মৃত্যুর জন্য মিঠুন এবং সুবীরকে দায়ি করে যান। সেই সঙ্গে স্কুলের তিন পার্শ্বশিক্ষিকা তাঁকে ঈর্ষা করতেন বলেও সুইসাইড নোটে রীতা লিখেছেন। রবীন্দ্রনাথের কবিতা এবং ‘আই ক্যুইট’ লেখা দিয়ে শুরু করে দোষীদের কড়া শাস্তি চেয়ে গিয়েছে রীতা। সেখানে কটূক্তি, কুপ্রস্তাব, হামলা, ধর্ষণের চেষ্টার মতো অভিযোগও লিখে গিয়েছেন। তবে মৃতার মা জানান, ‘‘আমাদের বাড়িতে ওরা কোনওদিন ঢোকেনি। বাইরেই মেয়েকে উত্ত্যক্ত করত।’’

রীতার বাড়ির সামনে যখন কয়েকশো বাসিন্দার ভিড়, তখন পাশেই বাড়ির গেটের সামনে দাঁড়িয়ে মিঠুনের বোন বলেন, ‘‘দাদা নির্দোষ। কেউ তো আগে অভিযোগ করেনি। ওকে ফাঁসানো হল।’’ সুবীরের বাড়ির বারান্দায় বসে তাঁর এক আত্মীয়া জানান, তাঁরা আইনি লড়াই লড়বেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Teacher Suicide Land
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE