Advertisement
E-Paper

দুশ্চরিত্রা অপবাদে বিয়ে ভাঙায় আত্মঘাতী তরুণী

দুশ্চরিত্রা অপবাদে বিয়ে ভেস্তে যাওয়ায়, গায়ে আগুন দিয়ে আত্মঘাতী হয়েছিলেন এক তরুণী। বুধবার তাঁর তিন পড়শির বিরুদ্ধে অপবাদ দেওয়া এবং আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ দায়ের করেন ওই তরুণীর পরিবার।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০১৫ ০২:২৩
তরুণীর মৃত্যু নিয়ে বসেছিল সালিশি সভাও। —নিজস্ব চিত্র।

তরুণীর মৃত্যু নিয়ে বসেছিল সালিশি সভাও। —নিজস্ব চিত্র।

দুশ্চরিত্রা অপবাদে বিয়ে ভেস্তে যাওয়ায়, গায়ে আগুন দিয়ে আত্মঘাতী হয়েছিলেন এক তরুণী। বুধবার তাঁর তিন পড়শির বিরুদ্ধে অপবাদ দেওয়া এবং আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ দায়ের করেন ওই তরুণীর পরিবার। এর পরেও এদিন সন্ধ্যে পর্যন্ত অভিযুক্তদের এলাকায় দেখা গিয়েছে। কিন্তু তারপরেও পুলিশ কোনও পদক্ষেপ করেনি বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ। অভিযুক্তর অবশ্য দাবি, তিনি নিরপরাধ।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার ফালাকাটার রাইচেঙ্গা গ্রামে বছর কুড়ির এক তরুণীর অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় তাঁকে প্রথমে ফালাকাটা হাসপাতাল এবং পরে আলিপুরদুয়ার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর। মৃত্যুর আগে ওই তরুণী পড়শিদের বিরুদ্ধে অপবাদ দেওয়ার অভিযোগ করেছিল বলে তাঁর পরিবারের দাবি। ঘটনার পরে অভিযুক্তেরা হুমকি দেওয়ায় থানায় অভিযোগ জানানো হয়নি বলেও দাবি করেছেন তাঁরা।

ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে গত রবিবার বাসিন্দাদের কয়েকজনের পরামর্শে সালিশি সভাও বসেছিল। সেই সভায় অভিযুক্তরা উপস্থিত হলেও, মাঝপথে সভা ভেস্তে যায়। স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানের স্বামী তথা তৃণমূল নেতাও ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গিয়েছে। বাসিন্দাদের একাংশের দাবি ফালাকাটা ২ নম্বর পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান ভানু অধিকারীর স্বামী চঞ্চল অধিকারী আসবেন বলে আশ্বাস দেওয়ার পরেই সালিশি সভার দিন ক্ষণ স্থির হয়। সেই সভায় কোনও ফল না হওয়ায় এ দিন ফালাকাটা থানায় তরুণীর বাবা আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ দায়ের করেছেন। সালিশি সভায় তৃণমূল নেতা কেন উপস্থিত হবেন, তা নিয়ে বিরোধীরা ইতিমধ্যে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন। কাদের পরামর্শে সালিশি সভা বসেছিল তা-ও তদন্ত করে দেখার দাবি উঠেছে।

অবশ্য চঞ্চলবাবুর যুক্তি, ‘‘সভায় গিয়ে আমি ওই তরুণীর বাবাকে জানাই, বাড়িতে বসে এর মীমাংসা হবে না। কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে থানায় গিয়ে তা লিখিতভাবে জানানোর পরামর্শ দিয়েছি। আইনের পথেই থাকতে বলেছিলাম।” ফালাকাটার তৃণমূল বিধায়ক অনিল অধিকারীর যুক্তি, ‘‘ঘটনাটি জানি না। তবে মেয়েটি মারা গিয়েছিল বলে পরিবারকে সমবেদনা জানাতে তিনি গিয়ে থাকবেন।’’

আলিপুরদুয়ারের পুলিশ সুপার আভারু রবীন্দ্রনাথন বলেন, “এমন অভিযোগ জমা পড়েছে কি না, তা আমি এখনও জানি না। খোঁজ নিচ্ছি। অভিযোগ জমা হলে মামলা রুজু করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

কী অপপাদ দেওয়া হয়েছিল ওই তরুণীকে?

কিছু দিন ধরেই ওই তরুণীর বিয়ের জন্য চেষ্টা চালাচ্ছিলেন তাঁর বাবা-মা। মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ করতে না পেরে বছর তিনেক আগে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছিলেন ওই তরুণী। অভিযোগ, সম্প্রতি পাত্রপক্ষরা তাঁকে দেখে গেলেই তাদের প্রতিবেশী এক যুবক পাত্রপক্ষের কাছে দুশ্চরিত্রা বলে ওই তরুণীর বদনাম করেন। পড়শি আরও দুই মহিলাও তাঁর নামে অপবাদ ছড়াতে শুরু করে বলে অভিযোগ।

রিকশা চালিয়ে সংসার চালান ওই তরুণীর বাবা। এক চোখে ছানি থাকায় বিকেলে পরে রিকশা চালাতে পারেন না। তিন মেয়ে দুই ছেলে নিয়ে সাত জনের সংসার। বড় মেয়ের বিয়ে হয়েছে। তিন বছর আগে ওই তরুণী মাধ্যমিক পরীক্ষা দিলেও পাশ করতে পারেনি। পড়াও ছেড়ে দেন। বাড়ি থেকে বিয়ের চেষ্টা শুরু হয়। তারপরেই ওই যুবক বারবার তাঁর বিয়ে ভেঙে দিতে সচেষ্ট হন বলে অভিযোগ।

গত বৃহস্পতিবার দুপুরে অভিযুক্ত সঞ্জয়ের বাড়িতে নালিশ জানাতে গেলে ওই তরুণী এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের অপমান করা হয় বলে অভিযোগ। সেখান থেকে দৌড়ে বাড়ি ফিরে ওই তরুণী গায়ে আগুন লাগিয়ে দেন বলে তাঁর পরিবারের দাবি। ওই তরুণীর কলেজ পড়ুয়া ভাই অভিযোগ করেন, ‘‘পড়শিদের পরামর্শে সালিশি বসানো হয়েছিল। থানায় যেতে চাইলে অভিযুক্তরা হুমকি দিত। প্রথমে ভয় পেলেও, এ দিন অভিযোগ জানিয়ে এসেছি।” তরুণীর বাবার কথায়, ‘‘মেয়েকে যাদের জন্য মরতে হল তার শাস্তি চাই।”

অভিযুক্ত যুবকের বক্তব্য, ‘‘ওই তরুণীর সঙ্গে আমার কোনও সম্পর্ক ছিল না। আমি ওর সম্পর্কে কাউকে কিছু বলিনি। মিথ্যা কথা বলা হচ্ছে আমার নামে।”

Falakata girl police Alipurduar police super
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy