Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

তদন্তে গাফিলতি, থানাকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা

নিখোঁজ এক ব্যক্তিকে খুঁজে বার করার মামলায় পুলিশের ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করে দক্ষিণ দিনাজপুরের কুশমণ্ডি থানার বিরুদ্ধে ১০ হাজার টাকার জরিমানা ধার্য করল আদালত। শনিবার গঙ্গারামপুরের মহকুমা আদালতের বিচারক অর্পণ চট্টোপাধ্যায় দু’মাসের মধ্যে ওই নিখোঁজ ব্যক্তির দাদা সুভাষ সিংহকে জরিমানার টাকা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বালুরঘাট শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৫ ০২:০৭
Share: Save:

নিখোঁজ এক ব্যক্তিকে খুঁজে বার করার মামলায় পুলিশের ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করে দক্ষিণ দিনাজপুরের কুশমণ্ডি থানার বিরুদ্ধে ১০ হাজার টাকার জরিমানা ধার্য করল আদালত। শনিবার গঙ্গারামপুরের মহকুমা আদালতের বিচারক অর্পণ চট্টোপাধ্যায় দু’মাসের মধ্যে ওই নিখোঁজ ব্যক্তির দাদা সুভাষ সিংহকে জরিমানার টাকা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। জেলাশাসক এবং জেলা পুলিশ সুপারকে ওই নির্দেশ পালনের বিষয়টি দেখতে বলেছেন তিনি। পাশাপাশি মহকুমা পুলিশ আধিকারিককে ওই মামলাটি তদন্ত করে দেখতে বলেছেন বিচারক।

আদালত সূত্রের খবর, রায় ঘোষণার সময় মহকুমা আদালতের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মামলার তদন্তে কুশমণ্ডি থানার আইসি-র গাফিলতির বিষয়টি উল্লেখ করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। অসম্পূর্ণ চার্জশিট দাখিল এবং আদালতে গ্রহণের বিষয়টিও উল্লেখ করেছেন। দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলা পুলিশ সুপার শীশরাম ঝাঝারিয়া বলেন, ‘‘আদালতের নির্দেশের নথি এখনও পাইনি। পেলে যথাযথ ব্যবস্থ নেওয়া হবে।’’ আর গঙ্গারামপুরের মহকুমা পুলিশ আধিকারিক রাজীব ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আদালতের নির্দেশের কথা শুনেছি। অর্ডারের কপি পেলে বিষয়টি দেখব।’’

গত ২০০৮ সালে উত্তরপ্রদেশের আলিগড়ের বাসিন্দা ইয়াদরাম দক্ষিণ দিনাজপুরের কুশমণ্ডি থানার দাউদ গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে এসে নিখোঁজ হয়ে যান। দীর্ঘ দিন ভাই ইয়াদরামের খোঁজ না পেয়ে দাদা সুভাষ সিংহ ওই গ্রামে আসেন। ভাইয়ের স্ত্রী আদরি, তাদের শিশুকন্যা ডলিকে দেখতে পেলেও ভাইয়ের কোনও সন্ধান পাননি। এরপর সুভাষবাবু কুশমণ্ডি থানায় ভাইকে ‘গুম’ করা হয়েছে সন্দেহ করে আদরি ও তাঁর ভাই-বোনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করতে যান। কিন্তু পুলিশ তা নেয়নি বলে অভিযোগ। ইয়াদরাম উত্তরপ্রদেশে ফিরে গিয়েছে বলে দাবি করছিলেন স্ত্রী আদরিদেবী। তাঁর বক্তব্যকে পুলিশ গুরুত্ব দেয় বলে সুভাষবাবুর অভিযোগ। অগত্যা তিনি মানবধিকার কমিশনের দ্বারস্থ হন। মানবাধিকার কমিশনের নির্দেশে শেষ পর্যন্ত কুশমণ্ডি থানার পুলিশ গত ২০০৯ সালের ৫ জুন নিখোঁজ অভিযোগ লিপিবদ্ধ করে। অভিযুক্তপক্ষ অবশ্য আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন পেয়ে যান।

আদালত সূত্রের খবর, তৎকালীন মামলার তদন্তকারী অফিসার বসির খান গত ২০১৩ সালের ৮ মার্চ মহকুমা আদালতে চার্জশিট দাখিল করলেও নিখোঁজ ইয়াদরামের কোনও হদিশ দিতে পারেননি। তিনি চার্জশিটে উল্লেখ করেন, ‘নিখোঁজ ইয়াদরামের স্ত্রী ও শ্বশুরবাড়ির লোকেদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে ইয়াদরাম উত্তরপ্রদেশে ফিরে গিয়েছেম।’ সিনিয়র অফিসারদের পরামর্শে তিনি চার্জশিট জমা দিলেন বলে রিপোর্টে তদন্তকারী উল্লেখ করেন। এরপর মামলাটি এসিজেএম কোর্ট থেকে অতিরিক্ত জেলা দায়রা আদালতে ওঠে। এদিন বিচারক ক্ষোভ প্রকাশ করেন, কুশমণ্ডি থানার সংশ্লিষ্ট আইসিকে তলব করা হলেও তিনি পরপর চার বার আদালতের কাছে সময় চেয়েও নিখোঁজ ব্যক্তিকে উদ্ধারের ব্যাপারে সদর্থক পদক্ষেপ করতে পারেননি। অভিযু্ক্তপক্ষকেও বিচারক আপাতত আদালতে হাজিরা দিতে বারণ করেছেন। আদালত মহকুমা পুলিশ আধিকারিককে মামলাটি তদন্তের নির্দেশ দেওয়ায় খুশি প্রায় সাত বছর ধরে ভাইয়ের খোঁজে অপেক্ষারত সুভাষবাবু। মামলাটির পরবর্তী দিন ৬ অক্টোবর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Balurghat Police Gangarampur UP Uttar Pradesh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE