মাছ চাষের জন্য মালদহে সরকারি পুকুর লিজ দেওয়ার ক্ষেত্রে এক লাফে বাড়িয়ে দেওয়া হল টেন্ডারের ন্যূনতম দর। আগামী সপ্তাহে জেলার বিভিন্ন ব্লকে থাকা ৭৯টি পুকুরে মাছ চাষের জন্য টেন্ডার ডাকা হবে। তার আগে জেলার প্রশাসনিক স্তরে ওই রাজস্ব নির্ধারণের যে পাঁচ সদস্যের জলকর কমিটি রয়েছে, তারাই এবার ওই ন্যূনতম দর বা রিজার্ভ প্রাইস বিগত বছরের চেয়ে গড়ে অন্তত দু-আড়াই গুণ বাড়িয়েছেন। কোনও ক্ষেত্রে তা বেড়েছে বেশ কয়েক গুণ।
সরকারি হিসেবই বলছে, গত বছর কালিয়াচক-১ ব্লকের যে পুকুরটির লিজ দেওয়া হয়েছিল ১৫৩৭ টাকায়, সেটিই এবার বেড়ে হয়েছে ১৬ হাজার ২৫৭ টাকা। টেন্ডারে শেষের এই টাকার ওপর দর হাঁকতে হবে।
প্রশাসনের দাবি, এভাবেই ন্যূনতম দর বাড়ায় পুকুর লিজের জন্য টেন্ডার ডাকা হলে সেই দর আরও বাড়বে। এবং এতে সরকারি কোষাগারে রাজস্ব আদায়ও বেশি হবে। জানা গিয়েছে, সরকারি নিয়মানুযায়ী ফিশারি এক্সটেনশন অফিসাররা নির্ধারিত মানদণ্ডে সমীক্ষা ও হিসেব-নিকেশ করে ওই ন্যূনতম দর ঠিক করেন এবং তার ভিত্তিতেই জেলা জলকর কমিটি তাতে চূড়ান্ত শিলমোহর দেয়।
কিন্তু এবার তার ব্যতিক্রম হয়েছে। প্রশাসনিক বৈঠকে ফিশারি এক্সটেনশন অফিসারদের নির্ধারিত ওই ন্যূনতম দর নিয়ে আপত্তি জানান জেলা জলকর কমিটির চেয়ারম্যান তথা জেলাশাসক শরদ দ্বিবেদী। এবং তিনি ওই বৈঠকেই পদাধিকার বলে কমিটির সদস্য, জেলার দুই মহকুমা শাসককে কয়েকটি পুকুর পরিদর্শন করে রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশ দেন।
মহকুমা শাসকরা সংশ্লিষ্ট ফিশারি এক্সটেনশন অফিসার, ব্লক ভূমি সংস্কার অফিসার ও আমিনদের নিয়ে পুকুর পরিদর্শন করে পৃথক একটি রিজার্ভ প্রাইস নির্ধারণ করেন। প্রশাসন সূত্রেই জানা গিয়েছে, দু’টি দরের মধ্যে অসঙ্গতি দেখা দেওয়ায় কমিটি ধন্ধে পড়ে। শেষ পর্যন্ত অবশ্য দু’টি দর মিলিয়েই পুকুর লিজের চূড়ান্ত ন্যূনতম দর নির্ধারণ হয়। এখন প্রশ্ন উঠেছে, তবে কী মৎস্য দফতরের নির্ধারিত দর কমিয়ে দেখানো হচ্ছিল।
যদিও প্রশাসন সেই যুক্তি মানতে নারাজ। জেলা মৎস্য দফতরের অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর পার্থপ্রতিম দাস বলেন, ‘‘সরকারি রেকর্ডে পুকুরের এলাকা যে পরিমাণ দেখানো রয়েছে, বাস্তবে অনেকক্ষেত্রে সেই জমি কমে গিয়েছে। কোথাও খাস ওই পুকুরের পাশে ধান চাষ হয়েছে, কোথাও আবার ঘরবাড়ি তৈরি হয়ে গিয়েছে। স্বাভাবিকভাবে কিছু পুকুরের এলাকা কমে যাওয়ায় মাছ চাষের এলাকাও কমেছে। তাই লিজের ন্যূনতম দর কম হয়েছে। এখানে কারচুপি করার অবকাশ নেই।’’ জেলা ভূমি সংস্কার দফতর আধিকারিক কাঞ্চন চৌধুরি বলেন, ‘‘লিজের রিজার্ভ প্রাইস নিয়ে একটা সমস্যা তৈরি হয়েছিল, তবে তা মিটে গিয়েছে। আগামী সপ্তাহেই ৭৯টি পুকুরের লিজের টেণ্ডার ডাকা হবে।’’ জেলাশাসক বলেন, ‘‘প্রথমে যে রিজার্ভ প্রাইস ধার্য হয়েছিল তা দু’বছরের পুরনো হিসেবে করা হয়েছিল। পরে তা ঠিক করা হয়। এবার রিজার্ভ প্রাইস বাড়ায় লিজে বাড়তি রাজস্ব আদায় হবে।’’
মালদহ জেলা ভূমি সংস্কার দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় মোট ২১১টি সরকারি পুকুর রয়েছে। ৫ একরের বেশি যে সমস্ত পুকুর রয়েছে সেগুলিতে তিন বছর অন্তর মাছ চাষের জন্য লিজ দেওয়া হয়। লিজের ক্ষেত্রে জেলা মৎস্য দফতরের অর্ন্তভুক্ত ফিশারম্যান কো-অপারেটিভ সোসাইটিগুলিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। লিজের জন্য রিজার্ভ প্রাইস ঠিক করে জেলা জলকর কমিটি। টেন্ডারে যারা অংশ নেবে তাঁদের ওই রিজার্ভ প্রাইসের উপরেই দর হাঁকাতে হয়। সর্বোচ্চ দর যাঁরা হাঁকে তাদেরই তিন বছরের জন্য লিজ দেওয়া হয়। তবে প্রথম বছর লিজের জন্য যে টাকার অঙ্ক থাকবে তা পরের দু’বছর তা পাঁচ শতাংশ করে বাড়বে।
এ বার পুকুর লিজ নেওয়ার জন্য রিজার্ভ প্রাইস আচমকা বাড়িয়ে দেওয়া নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইংরেজবাজারের একটি ফিশারম্যান কো-অপারেটিভ সোসাইটির সম্পাদক বলেন, ‘‘আমাদের সোসাইটিতে বেশিরভাগ মৎস্যজীবীই গরিব। এবার যে হারে লিজের রিজার্ভ প্রাইস বাড়ানো হয়েছে বলে শুনছি তাতে আমাদের বিপাকে পড়তে হবে। মাছ চাষ করে লাভের মুখ আর দেখা যাবে না। মাছের দাম বাড়ানো ছাড়া গতি থাকবে না।’’
জেলাশাসক অবশ্য বলেন, ‘‘বাজারে মাছের যে দাম রয়েছে তার চেয়ে অনেক কমেই লিজের রিজার্ভ প্রাইস রয়েছে। এর সঙ্গে মাছের দাম বাড়ার কোনও সম্পর্ক নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy