Advertisement
E-Paper

বেরোতে ভয় পাচ্ছেন কলেজ ছাত্র

ওই ছাত্র বলেন, “আমি তো ‘ভারত মাতা কি জয়’, ‘ইন্ডিয়ান আর্মি কি জয়’ বলি। আমার মামা সেনাবাহিনীতে আছেন। কিন্তু এমন ভাবে আমাকে বলতে হবে ভাবিনি।”

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০১:৫৮
পুলওয়ামা হামলা নিয়ে সোশ্যাল নেটওয়ার্কে পোস্ট করে বিক্ষোভ এর মুখে পড়ল এক কলেজ পড়ুয়া।—ছবি রয়টার্স।

পুলওয়ামা হামলা নিয়ে সোশ্যাল নেটওয়ার্কে পোস্ট করে বিক্ষোভ এর মুখে পড়ল এক কলেজ পড়ুয়া।—ছবি রয়টার্স।

প্রকাশ্যে রাস্তায় বেরোলে কী বলবেন মানুষ, সেই চিন্তায় রাতে ঘুমোতে পারেননি এক কলেজ পড়ুয়া। সোমবার সকালে বলছিলেন, “আমি তো দেশের বিরুদ্ধে নই। পনেরই অগস্ট, ২৬ জানুয়ারি আমরা পতাকা তুলি। যে দিন কাশ্মীরে সেনা জওয়ানদের উপরে জঙ্গি হামলা হল, সেদিন থেকে সোশ্যাল নেটওয়ার্কে প্রতিবাদ জানিয়েছি।” রবিবার দুপুরে একদল মানুষ হামলা করে তাঁদের বাড়িতে। অভিযোগ ছিল, ‘দেশবিরোধী’ কথা বলেছেন ছাত্র। তাঁকে অর্ধনগ্ন অবস্থায় শোওয়ার ঘর থেকে টেনে বের করে এনে প্রকাশ্য রাস্তায় কান ধরে ওঠবস করানো হয়। তাঁকে বলতে বলা হয়, ‘ভারত মাতা কি জয়, ইন্ডিয়ান আর্মি কি জয়।’ তা বলার পরেই ছেড়ে দেওয়া হয় তাঁকে।

ওই ছাত্র বলেন, “আমি তো ‘ভারত মাতা কি জয়’, ‘ইন্ডিয়ান আর্মি কি জয়’ বলি। আমার মামা সেনাবাহিনীতে আছেন। কিন্তু এমন ভাবে আমাকে বলতে হবে ভাবিনি।”

কেন ‘দেশবিরোধী’ অভিযোগ উঠল ছাত্রের বিরুদ্ধে?

তুফানগঞ্জ কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছাত্র জানান, তাঁদের একটি ‘বাংলা ব্যান্ড’ রয়েছে। তিনি গান করেন। আরও ছয় জন সদস্য রয়েছেন। যাঁরা নানা বাদ্যযন্ত্র বাজান এবং গানও করেন। তাঁদের একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ রয়েছে। কাশ্মীরের ঘটনার প্রতিবাদে মোমবাতি জ্বালিয়ে প্রতিবাদের ডাক দেওয়া হয় শহরে। সেখানে তাঁদের সবারই যাওয়ার কথা ছিল।

কিন্তু তাঁর ঠাকুমার শ্রাদ্ধ থাকায় তিনি যেতে পারেননি ওই প্রতিবাদে। তা নিয়ে ওই গ্রুপে ব্যান্ডের এক সদস্য প্রশ্ন তোলেন। দু’জনের মধ্যে বিতর্ক শুরু হয়। সেখানে তিনি লোকদেখানো দেশভক্তি দেখান না বলে জানান। তাতে তাঁকে কেউ দেশদ্রোহী মনে করলে গর্বিত হবেন বলেও মন্তব্য করেছিলেন। এর পরেই তাঁর সেই কথা ভাইরাল করে দেওয়া হয় বলে দাবি। তিনি বলেন, “পুরো কথা কেউ শোনেনি। কেউ দেখতেও চায়নি কী কথা হয়েছিল আমাদের মধ্যে। আমার তো অনেক ক্ষতি হয়ে গেল। কলেজে তো সবাই আমাকে অন্য চোখে দেখবে।”

ওই দিন রাতে পুলিশ যায় ছাত্রদের বাড়িতে। ফোন নম্বর দিয়ে পাশে থাকার আশ্বাস দেয়। ছাত্রের মা বলেন, “আমরা রাতে আতঙ্কে ছিলাম। আর সব থেকে খারাপ লেগেছে আমার ছেলের বিরুদ্ধে মিথ্যে অপবাদ দিয়ে তা ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে।”

রবিবার ওই এলাকাতেই আরও এক ছাত্রের বিরুদ্ধেও দেশবিরোধী পোস্টের অভিযোগ ওঠে। ওই ছাত্র যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। তাঁর বাবা শিক্ষকতা করেন। স্ত্রীকে নিয়ে তিনি বাড়িতে থাকেন। তাঁর বাড়িতেও একদল যুবক চড়াও হয়। তাঁদের অভিযোগ ছিল, ফেসবুকে ওই ছাত্র সেনাবাহিনী ও দেশের বিরুদ্ধে পোস্ট করেন। তাঁকে বাড়িতে না পেয়ে তাঁর বাবাকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান ওই যুবকরা। তাঁর বাবা নিরাপত্তার অভাবের কথা জানিয়ে পুলিশে অভিযোগ জানিয়েছেন।

দু’টো ঘটনাই ফেসবুক ‘লাইভ দেখানো হয়। যাঁরা করেন, তাঁদের একজন সর্বজিৎ সাহা। তিনি বলেন, “আমিও সোশ্যাল নেটওয়ার্কে বিষয়টি জানতে পারি। দেশ ও সেনা বিরোধী পোস্ট করেছে জেনে খারাপ লাগে। তাঁদের বোঝাতে অনেকেই সেখানে যান। আমিও যাই। সেখান থেকেই লাইভ করেছি।” কোচবিহার পুলিশ সুপার অভিষেক গুপ্ত বলেন, “সমস্ত ঘটনার দিকে নজর রয়েছে। কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

Tufanganj college তুফানগঞ্জ কলেজ
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy