বিষণ্ণতায় আচ্ছন্ন গ্রাম। কোনও কোলাহল নেই। নেই শঙ্খ বাজানোর শব্দ। উলুর ধ্বনিও ভেসে আসছে না। ভেসে আসছে শুধু একটানা কান্নার আওয়াজ। এক মা কেঁদে চলেছেন। বাড়ির অদূরে বাঁশবাগানের নীচে বসে আছেন দুই ভাই। গত বছরও এই দিনটি কত আনন্দে মেতে উঠেছিলেন তাঁরা। ঘরের দাওয়ায় বসে দিদি কপালে ফোঁটা দিতে দিতে বার বার বলছিল, “জমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা/ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা।” বুধবার কাঁদতে কাঁদতে বলছিল দুই ভাই, “আমরা দিদিকে বাঁচাতে পারলাম না। আর ভাইফোঁটাও নিতে পারব না। আমাদের ছেড়ে কেন চলে গেল সে!” বার বার দাবি করছিল, অপরাধীরা যেন ছাড়া না পায়। মা বলেন, “এমন দিন আসবে কখনও ভাবিনি।”
কালীপুজোর রাতে মাথাভাঙার হাজরাহাটের বেলেরডাঙা গ্রামের দুই কিশোরীকে ধর্ষণ করে পড়শি দুই যুবক। ওই দুই কিশোরী সম্পর্কে পিসি ও ভাইঝি। ওই রাতেই কীটনাশক খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে এক কিশোরী। সে মাথাভাঙা মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। রবিবার সকালে আরেক কিশোরী গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করে।
এক রাতেই বদলে যায় দুই পরিবারের চিত্র। পুলিশ অভিযুক্ত টোটন সরকার এবং রুদ্র তালুকদারকে গ্রেফতার করেছে। এ দিন তাদের কোচবিহার মুখ্য বিচার বিভাগীয় আদালতে তোলা হয়। আদালত সূত্রের খবর, আইন অনুযায়ী ধৃতদের পকসো আদালতে হাজির করানোর কথা। এদিন ওই আদালত বন্ধ থাকায় তাঁদের সিজিএম আদালতে তোলা হয়। বিচারকের নির্দেশে আজ, বৃহস্পতিবার তাদের পকসো আদালতে হাজির করানো হবে। মাথাভাঙার এসডিপিও অতুল বিশ্বনাথন বলেন, “ধৃতদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী মামলা করে আদালতে হাজির করানো হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে।”
ওই ঘটনার পর চার দিন কেটে গেলেও গ্রাম স্বাভাবিক হতে পারেনি। মৃতা কিশোরীর বাড়িতে শুধু নয়, ভাইফোঁটা হয়নি অনেক বাড়িতেই। চিকিৎসাধীন কিশোরীর বাড়িতেও কোনও অনুষ্ঠান হয়নি। তিন বোন ও এক ভাই ওঁরা। চিকিৎসাধীন কিশোরী মেজো বোন। প্রতি ভাইফোঁটায় তিন বোন মিলে খুব আনন্দ করে ভাইয়ের কপালে ফোঁটা দিতেন। এক ভাই বলেন, “বোন তো বলেছিল এ বারেও ভাইফোঁটায় অনেক আনন্দ হবে।” প্রতিবেশীদের কারও বাড়িতেই এদিন কোনও অনুষ্ঠান হয়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy