ডুয়ার্সের একটি বন্ধ চা বাগানে ৪ দিনের মধ্যে অসুস্থ হয়ে ৩ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। নাগেশ্বরী চা বাগানে পরপর মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে বিশদে খোঁজখবর নিচ্ছে জেলা প্রশাসন।
চলতি মাসের ৯ তারিখে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে মৃত্যু হয় বাগানের এক প্রসুতি মহিলা রিমা থাপার (১৯)। উচ্চ রক্তচাপ জনিত কারণে তিনি মারা যান বলে জানা গিয়েছে। সোমবার নাগেশ্বরী বাগানে সাড়ে পাঁচবছরের একটি শিশুকন্যার মৃত্যু হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরেই সে জ্বরে ভুগছিল বলে জানা গিয়েছে। ওই একই দিনে ঝোরায় স্নান করতে যাওয়ার পথে আচমকা রাস্তাতেই পড়ে গিয়ে মারা যান বাগানের গোপাল লাইনের বাসিন্দা রাজেশ খেড়িয়ার (৪৫)। মঙ্গলবার রাজেশ খেড়িয়ার দেহ ময়নাতদন্ত করতে জলপাইগুড়িতে পাঠায় মেটেলি থানার পুলিশ। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি অসুস্থ ছিলেন বলে জানা গিয়েছে।
বিভিন্ন কারণে এই তিনটি মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও একে ঘিরে আতঙ্কের চোরা স্রোত বন্ধ বাগানে। দ্রুত বাগান স্বাভাবিক না হলে আর্থিক অনটনে থাকা শ্রমিকদের মধ্যে অপুষ্টি ছড়াবে এবং তার জেরে আরও মৃত্যুর ঘটনা বলেই আশংকা শ্রমিক সংগঠনগুলির। কংগ্রেসের চা শ্রমিক সংগঠন এনইউপিডব্লুর কেন্দ্রীয় স্তরের নেতা তথা নাগরাকাটার কংগ্রেস বিধায়ক জোশেফ মুন্ডা বলেন, ‘‘এই মৃত্যুগুলি সরাসরি অপুষ্টিতে না হলেও এখন থেকেই প্রশাসনকে সতর্ক হতে হবে। দ্রুত বাগান যদি না স্বাভাবিক হয় তা হলে অপুষ্টি চা বাগানে থাবা বসাবেই।’’
মৃত রাজেশ খেড়িয়ারের স্ত্রী রশ্মিতার কথায়, ‘‘ বাগানে অস্থায়ী ভিত্তিতে কাজ করতেন আমার স্বামী। দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন। বাগান বন্ধের পর কাজ না মেলায় টাকার অভাবেই অসুস্থতা বাড়ে।’’ একই বক্তব্য মৃত প্রসুতি রিমা থাপার মা হিরা মাহালিরও। কংগ্রেস শ্রমিক সংগঠনের স্থানীয় ইউনিটের নেতা অজয় শর্মার কথায়, ‘‘বাগানে মার্চের মজুরি আজও মেলেনি। ফলে, সব শ্রমিক পরিবারই অনটনে রয়েছে।’’
গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই উত্তরবঙ্গে একটি বেসরকারি চা গোষ্ঠীর একাধিক বাগানে অচলাবস্থা শুরু হয়। উত্তরবঙ্গে ওই সংস্থার ১৬টি বাগান রয়েছে। তার মধ্যে নাগেশ্বরীও একটি। গত ৯ তারিখ বাগানে রেশন দিলেও বকেয়া মাসিক মজুরি এখনো মেটাননি মালিক পক্ষ। বাগান মালিকের সঙ্গে শ্রম দফতরের মারফত আলোচনা চলছে বলে জানান মালবাজারের মহকুমাশাসক জ্যোতির্ময় তাঁতি। তিনি বলেন, ‘‘বাগানে স্বাস্থ্যশিবির করার পাশাপাশি শ্রমিকদের একশোদিনের কাজ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।’’
৬০০হেক্টর জমির উপর নাগেশ্বরী চা বাগানে ১২০০ স্থায়ী শ্রমিক রয়েছেন। মার্চ মাস থেকে মজুরি বন্ধ থাকায় সমস্যায় পড়েছেন সকলেই। বাগানের ম্যানেজার শিলাদিত্য বসুর কথায়, ‘‘মার্চ মাসের মজুরি দু’টি কিস্তিতে দেওয়ার কথা রয়েছে। গত মঙ্গলবারই প্রথম কিস্তি মিটিয়ে দেওয়ার কথা ছিল। তা করা যায়নি। দ্রুতই সেই টাকা শ্রমিকদের দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে রেশনও জারি রাখা হয়েছে।’’
এদিকে প্রশাসনিক স্তর থেকেও নাগেশ্বরীর মৃত্যুর ঘটনার পর বাগানে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বুধবারে মেটেলি ব্লক থেকে স্বাস্থ্যকর্মীরা বাগানে গিয়ে স্বাস্থ্য শিবির করেন। বাগান ম্যানেজারের সঙ্গে মালবাজারের সহকারি শ্রম আধিকারিক শ্যামল রায়চৌধুরী পুরো বিষয়টি নিয়ে ফোনেও কথা বলেছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy