কোচবিহারে খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। নিজস্ব চিত্র।
পরিবহণ খরচের বোঝা কমাতে এ বার জেলায় কেনা ধান থেকে চাল উৎপাদন করে সেখানকার সরকারি প্রকল্পের উপভোক্তাদের সরবরাহের ব্যাপারে জোর দিচ্ছে রাজ্য সরকার। মঙ্গলবার কোচবিহার সার্কিট হাউসে রাজ্য সরকারের ওই পরিকল্পনার কথা জানান খাদ্য ও সরবরাহ মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক।
এ দিন কোচবিহার সার্কিট হাউসে জ্যোতিপ্রিয়বাবু বলেন, “আমরা সরকারের খরচ কমাতে চাইছি। প্রত্যেক জেলাতেই সেখান থেকে কেনা ধান দিয়ে চাল উৎপাদন করে সেখানে সরবরাহ করার ব্যবস্থা আমরা চালু করে দিয়েছি। এতে বছরে রাজ্যে পরিবহণ খরচ অন্তত ৮০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।”
দফতর সূত্রের খবর, রাজ্যজুড়ে জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্প, অন্ত্যোদয়, অন্নপূর্ণা-সহ বিভিন্ন প্রকল্পে রাজ্যজুড়ে উপভোক্তাদের চাল সরবরাহের জন্য ৪৫ লক্ষ মেট্রিক টন ধান দরকার হয়। এ বার ইতিমধ্যে ৩৭ লক্ষ মেট্রিক টন ধান কেনা হয়েছে। বাকি ৯ লক্ষ ধান কেনার জন্য তোড়জোড় চলছে। কোচবিহার-সহ একাধিক জেলায় লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ধান কেনা সম্ভব হয়নি। ওই কাজে কোচবিহার সবচেয়ে বেশি পিছিয়ে রয়েছে।
কোচবিহারের জন্য ১ লক্ষ ৭৫ হাজার মেট্রিক টন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। কেনা হয়েছে ৯২ হাজার মেট্রিক টন। আধিকারিকদের একাংশের দাবি, কোচবিহারে একেবারে শেষ দফায় বিধানসভা নির্বাচন হওয়ায় বেশি সমস্যা হয়েছে। ধান কেনার কাজ তাতে ব্যাহত হয়। এ দিন খাদ্য ও সরবরাহ মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক কোচবিহারে আয়োজিত বৈঠকে সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেন। এতদিন বাইরের জেলা থেকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চাল ঢুকত।
তাতে দেখা গিয়েছে বছরে প্রায় ২৫০ কোটি টাকা স্রেফ পরিবহণ খাতে খরচ মেটাতে হচ্ছে। বিপুল খরচ কমানর চিন্তাভাবনা থেকেই এবার জেলায় কেনা ধান দিয়ে সেখানে রাইস মিলে চাল তৈরির পর সংশ্লিষ্ট জেলাতেই মজুত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। তাতে কম খরচে চাহিদামত সব জেলা নিজেদের প্রয়োজন মত চাল সরবারের সুবিধে পাবে। তবে প্রয়োজনে পাশের জেলা ঘাটতি মেটাবে।
জ্যোতিপ্রিয়বাবু বলেন, “কোচবিহার জেলায় লক্ষ্যমাত্রা ধান কেনায় সমস্যা হবেনা। এখানকার ধানের গুণগতমান যথেষ্ট ভাল। জেলার ধান কিনে জেলায় চাল সরবরাহ করা হলে কোচবিহারের ক্ষেত্রে পরিবহণ খরচ প্রায় ৬ কোটি টাকা বাঁচবে।” দফতরের কর্তারা জানান, ওই পরিকল্পনা মাথায় রেখে এ বার কোচবিহার-সহ বিভিন্ন জেলায় ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রাও বাড়ানো হয়েছে। গতবার জেলায় ১ লক্ষ ১০ হাজার মেট্রিক টন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়। সোমবার রাতে সার্কিট হাউসে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষের সঙ্গেও বৈঠক করেন জ্যোতিপ্রিয়বাবু। সেখানে সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে দুইমন্ত্রীর কথা হয়।
খাদ্য ও সরবরাহ মন্ত্রী এদিন জানিয়েছেন, রাজ্যের কৃষক বাজারগুলির গুদামঘরগুলিকে না-মরসুমে ধান রাখার কাজে ব্যবহার করা হবে। ওই ব্যাপারে কৃষি বিপণন দফতরের সঙ্গে খাদ্য ও সরবরাহ দফতরের পদস্থ কর্তাদের বৈঠক হয়েছে। এরই পাশাপাশি কোচবিহার-সহ রাজ্যজুড়ে ধান মজুতের পরিকাঠামো তৈরির ব্যাপারে পরিকল্পনার কথা জানান তিনি। জ্যোতিপ্রিয়বাবু বলেন, “দ্রুত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ধান কেনার কাজ সম্পূর্ণ করার ব্যাপারেও ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। ব্লকে ব্লকে ধান রাখার গুদামঘর করা হবে। প্রথম ধাপে ৯২টির কাজ হবে। দ্বিতীয় ধাপে ১৪৭টির। বাকি কাজ তৃতীয় ধাপে করা হবে।” এ দিন নির্বাচন বিধির নামে ধান কেনা বন্ধ রাখার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে কেন্দ্র ও নির্বাচন বিধির সমালোচনা করেন। সেইসঙ্গে রাজ্য সরকার কোনওভাবে অভাবী বিক্রি হতে দেবেনা বলে জানান।
সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, কোচবিহার জেলাশাসকের দফতরে মন্ত্রীর বৈঠকে প্রশাসনের পদস্থ কর্তাদের পাশাপাশি দফতরের আধিকারিকরা উপস্থিত ছিলেন। বন উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান উদয়ন গুহ, বিধায়ক মিহির গোস্বামী প্রমুখও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে কোচবিহার জেলায় সহায়ক মূল্যে ধান কেনার কাজে গতি বাড়ানোর পাশাপাশি বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হয়। সেই সঙ্গে জেলার বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য কেনা ধান থেকে চাল তৈরি করে উপভোক্তাদের বিলির ব্যাপারে রাজ্য সরকারের মনোভাবের কথাও আধিকারিকদের জানিয়ে দেওয়া হয়। রাজ্যের খাদ্য ও সরবরাহ মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের হুঁশিয়ারি, অসাধু কারবার করলে কেউ পার পাবেননা। ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ডিলারশিপও বাতিল হতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy