রোদ রোদ মাথায় নিয়ে গাড়ির অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। রাষ্ট্রীয় পরিবহণের বাস কিংবা ছোট গাড়িতে উঠতে হচ্ছে হুড়োহুড়ি করে। মালদহে টোল নিয়ে লাগাতার আন্দোলনের জেরে চারদিন ধরে এমনই সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে যাত্রীদের। রবিবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। যার জেরে চরম হয়রানির মুখে পড়ে প্রশাসনের প্রতি তীব্র ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন যাত্রীরা।
দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুরের বাসিন্দা বলরাম সরকার বলেন, ‘‘চিকিৎসার জন্য সপরিবারে কলকাতায় গিয়েছিলাম। এদিনই ট্রেন থেকে নেমে বাস স্ট্যান্ডে গিয়ে জানতে পারি মালদহ থেকে গঙ্গারামপুরে বাস যাচ্ছে না। পরিবার নিয়ে রোদের মধ্যে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করার পর ছোট গাড়িতে ঠাসাঠাসি করে গন্তব্যে পৌঁছাতে হচ্ছে। পরিবহণ ধর্মঘটের বিষয়টি প্রশাসনের গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত।’’
বলরাম বাবুর মতো এ দিন রাস্তায় বেড়িয়ে সমস্যায় পড়েছেন অঞ্জনা সরকার, অজয় দাসেরা। দক্ষিণ দিনাজপুরের অনেকে আবার নালাগোলা হয়ে ঘুরপথে যাচ্ছেন। তবে সব থেকে বেশি সমস্যায় পড়েছে উত্তর দিনাজপুর ও মুর্শিদাবাদের যাত্রীরা। ওই দুই জেলার যাত্রীদের ছোট গাড়িতে করে বাদুরঝোলা হয়ে যেতে হচ্ছে গন্তব্যস্থলে। চারদিন ধরে আন্দোলনের পরেও টোল নিয়ে কেন দ্বন্দ্ব কাটছে না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন যাত্রীরা। মালদহ বাস ও মিনিবাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য নিমাই বিশ্বাস বলেন, ‘‘যাত্রীদের সমস্যার কথা আমাদের অজানা নয়। তবে যে হারে টোল নেওয়া হচ্ছে তাতে আমাদের লোকসানে গাড়ি চালাতে হবে। এমন চলতে থাকলে বেসরকারি পরিবহণ বলে কিছুই থাকবে না।’’ জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের মতো জেলা প্রশাসনও টোল কমানোর বিষয়ে নিশ্চুপ রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন নিমাই বাবু। তাই পরিবহণ ধর্মঘট চলবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। মালদহের অতিরিক্ত জেলা শাসক দেবতোষ মণ্ডল বলেন, ‘‘বিষয়টি আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। মঙ্গলবার ফের সব পক্ষকে নিয়ে আলোচনায় বসে সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করা হবে।’’
মালদহে যাত্রীরা বেসরকারি পরিবহণের উপরেই পুরোপুরি নির্ভরশীল। উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণের বাস সমস্ত রুটে চলাচল করলেও তা পর্যাপ্ত নয়। ফলে যাতায়াতের জন্য বেসরকারি বাস, ম্যাক্সিট্যাক্সি, ট্রেকারের মতো গাড়ির উপরেই বেশি নির্ভরশীল যাত্রীরা। আর এই বেসরকারি পরিবহণ ধর্মঘট গত বৃহস্পতিবার থেকেই চলছে। মালদহের নালাগোলা, মানিকচক রুটে গাড়ি চলাচল করলেও টোল প্লাজার উপর দিয়ে যাওয়া মুর্শিদাবাদ, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুরের বেসরকারি পরিবহণও বন্ধ রয়েছে। কারণ গত, সোমবার থেকে জাতীয় সড়কের উপরে জেলার দুই প্রান্ত গাজল ও বৈষ্ণবনগরের ১৮ মাইলের টোল প্লাজা দু’টি চালু হয়েছে। আর এতেই বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
অভিযোগ, বেসরকারি গাড়িগুলির থেকে অতিরিক্ত টোল আদায় করা হচ্ছে। টোল ট্যাক্স কমানোর দাবিতে জেলার পরিবহণ ও বণিক মহল একযোগে লাগাতার ভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। তবে নিজেদের অবস্থানে অনড় জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ। তাঁদের দাবি, জাতীয় সড়কের কাজ করছে বেসরকারি ঠিকাদার সংস্থা। চুক্তি অনুযায়ী সেই সংস্থাই টোল আদায় করবে। আর টোল ট্যাক্স জাতীয় সড়কের আইন অনুসারে হয়। তাই এক জেলার জন্য পৃথক আইন হবে না বলে জানিয়েছেন প্রজেক্ট ডিরেক্টর দিনেশ হানসারিয়া। জেলা প্রশাসনও দু’পক্ষকে নিয়ে একাধিকবার বৈঠক করে সমস্যার সুরাহা করতে পারেনি। যার ফলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy