Advertisement
E-Paper

ছ’কাঠার জন্য খুন, কাকা ধৃত হরিশ্চন্দ্রপুরে

রাতে শৌচকর্মের জন্য বাইরে যাওয়ার পরে শেয়ালের কামড়েই মারা গিয়েছে ভাইপো। ১১ বছরের ভাইপোর গলাকাটা দেহ উদ্ধারের পর এমনটাই দাবি করেছিলেন কাকা। কিন্তু শেষরক্ষা হল না।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৬ ০১:৪২

রাতে শৌচকর্মের জন্য বাইরে যাওয়ার পরে শেয়ালের কামড়েই মারা গিয়েছে ভাইপো। ১১ বছরের ভাইপোর গলাকাটা দেহ উদ্ধারের পর এমনটাই দাবি করেছিলেন কাকা। কিন্তু শেষরক্ষা হল না। মাত্র ছয় কাঠা জমির লোভে ভাইপোকে গলা কেটে খুন করার অভিযোগ উঠল সেই কাকার বিরুদ্ধেই।

সেই অভিযোগকে ঘিরে রবিবার সকাল থেকে তেতে উঠল মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের তালগাছি-আলমগঞ্জ এলাকা। খবর পেয়ে বালকের দেহ উদ্ধার করতে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়ে পুলিশ। দেহ তুলতে গেলে পুলিশের সঙ্গে বাসিন্দাদের রীতিমতো ধ্বস্তাধ্বস্তিও বেধে যায়। বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, ভোর রাতে তার এক কাকার পায়ে রক্ত লেগে থাকতে দেখেছিলেন তারা। ফলে অভিযুক্ত কাকা গ্রেফতার না হওয়া পর্যন্ত বালকের দেহ তুলতে না দিয়ে পুলিশকে ঘেরাও করে রাখা হয়। পরে বিরাট পুলিশ বাহিনী নিয়ে এলাকায় যান এসডিপিও। তদন্তের পর ভাইপোকে খুনে জড়িত সন্দেহে কাকাকে গ্রেফতার করার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

চাঁচলের এসডিপিও রানা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সম্পত্তি হাতিয়ে নিতেই যে ছেলেটিকে খুন করা হয়েছে, তদন্তে তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। তবে ঘটনার সঙ্গে আরও কেউ জড়িত কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ এসডিপিও বলেন, ‘‘বাবা-মা না থাকায় ছেলেটিকে সবাই ভালোবাসত। তাই আবেগের বশেই বাসিন্দাদের একাংশ উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলেন।’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মৃত বালকের নাম সহিদুল ইসলাম। মায়ের মৃত্যুর পর বাবা আব্দুর রহিম দ্বিতীয় বিয়ে করেন। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে দুই দিদি বিবাহিত। বাড়িতে রয়েছেন সৎমা রুবেদা বেওয়া ও দুই বোন। কিন্তু পাঁচ মাস আগে তার বাবাও মারা যান। কিছু দিন আগে পারিবারিক কিছু জমি বিক্রির ভাগের টাকা পেয়েছিল সহিদুল। তা দিয়ে আত্মীয়রাই কাকা আব্দুল গাফ্ফারের বাড়ির পাশে সহিদুলকে পাকা বাড়ি বানিয়ে দেন। দরজা-জানালাহীন ওই অসম্পূর্ণ বাড়িতেই সমবয়সী খুড়তুতো ভাইকে সঙ্গে নিয়ে ঘুমতো সহিদুল। আর দুই মেয়েকে নিয়ে পুরনো বাড়িতে থাকতেন রুবেদা বেওয়া। এদিন ভোর চারটেয় বাড়ির বাইরে রাস্তায় সহিদুলের দেহ পড়ে থাকতে দেখেন বাসিন্দারা। ধারালো অস্ত্র দিয়ে তার গলার নলি অর্ধেক কাটা ছিল। রমজান মাস চলতে থাকায় বাসিন্দারা প্রত্যেকেই ভোরে জেগে ছিলেন। ঘটনার কথা চাউর হতেই এলাকা জুড়ে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ওই সময় কাকা গাফ্ফারকে ভাইপো খুন হওয়ার কথা জানাতে গেলে তার হাঁটুতে রক্ত লেগে থাকতে দেখেছিলেন বলে দাবি বাসিন্দাদের একাংশের। খবর পেয়ে পুলিশ এলাকায় পৌঁছালে কাকা গাফ্ফারকে গ্রেফতারের দাবিতে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে গোটা এলাকা। কিন্তু তদন্ত না করে পুলিশ কাকা গাফ্ফারকে প্রথমেই ধরতে চায়নি। কিন্তু অভিযুক্ত কাকাকে ধরতে পুলিশ গড়িমসি করছে বলে অভিযোগে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে গোটা এলাকা।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সহিদুলের বাবারা পাঁচ ভাই। তাদের মোট সাড়ে পাঁচ বিঘে জমি রয়েছে। পাঁচ অংশীদারের প্রত্যেকের এক বিঘে দু কাঠা করে জমি ভাগ পাওয়ার কথা। কিন্তু একজন অংশীদার কমে গেলে বাকি চার কাকাদের প্রত্যেকেই প্রায় ছয়কাঠা করে জমি ভাগে বেশি পাবেন। ফলে সম্পত্তি হাতানোই সহিদুলকে খুনের মূল উদ্দেশ্য হলেও কাকা গাফ্ফার ছাড়া অন্য কেউ ওই খুনে জড়িত কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।

পুলিশ জানায়, যে ভাইয়ের সঙ্গে রাতে ঘুমিয়েছিল সহিদুল সেই তহিদুল ইসলাম কিছু জানে না বলে দাবি করে। আর শেয়ালের কামড়ে ভাইপোর মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেন কাকা গাফ্ফার। জিজ্ঞাসাবাদের সময় কাকার অসংলগ্ন কথাবার্তাতেই সন্দেহ দৃঢ় হওয়ার পর পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। তবে গাফফারের বাড়ি থেকে অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করা হয়েছে। রুবেদা বলেন, ‘‘ওকে নিজের ছেলের মতোই ভালোবাসতাম, কিন্তু ওর যে আপনজন, সেই কাকা যে ওর এমন সর্বনাশ করবে ভাবতেই পারছি না।’’

murder
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy