শোকার্ত নিহতের স্ত্রী। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক।
বালি তোলা নিয়ে গোলমালে কেন্দ্র করে ঘিস নদীর চরে এক যুবককে কুপিয়ে খুন করা হয়েছিল বুধবার। তারপর থেকেই অগ্নিগর্ভ ছিল জলপাইগুড়ির ওদলাবাড়ি। বৃহস্পতিবার তা চূড়ান্ত আকার নেয়। দফায় দফায় অভিযুক্তদের বাড়িতে হামলা চলে। আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় দোকানে। পুড়িয়ে দেওয়া হল তাদের একটি গাড়ি, দু’টি মোটরবাইক। ভাঙা হয় তৃণমূল কাউন্সিলের গাড়ির কাচও। বিকেল ৩টের পরে চর এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন। নামানো হয় র্যাফ। তার মধ্যেই পাথর ছুড়তে থাকে ক্ষুব্ধ জনতা। পুলিশও লাঠি চালায়, কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে।
বুধবার বিকেলে ঘিসের চরে থেকে বালি তুলতে গিয়েছিলেন মহম্মদ ইলিয়াস নামে এক যুবক। নদী থেকে বালি তোলার সরকারি বরাত ছিল তাঁদের। তাঁকে বাধা দেন স্থানীয় কয়েকজন যুবক। তার মধ্যে মহম্মদ সোহেল সরকার নামে এক যুবক ইলিয়াসের পেটে ছুরি ঢুকিয়ে দিয়ে খুন করে বলে অভিযোগ। ইলিয়াস ও সোহেল দু’জনেই তৃণমূল কর্মী বলে পরিচিত। সোহেলের দাদা রাসেল সরকার মালবাজার ব্লক তৃণমূলের নেতা। সোহেল, রাসেল ও তাঁর বাবা সহ তাঁদের পরিবারের মোট সাত জনের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে খুনের অভিযোগ করেছেন ইলিয়াসের স্ত্রী মহসিনা বেগম।
উত্তেজনা ছড়ায় বুধবার রাত থেকেই। নদীর চরে দাঁড় করিয়ে রাখা সোহেলদের দু’টি গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তাদের বাড়িতেও ভাঙচুর করা হয়। সোহেল, রাসেল রাতেই পালিয়ে যায়। সোহেল এ দিন জলপাইগুড়ি থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করে। রাত থেকেই চরে উত্তেজনা ছিল বলে মালবাজার থানায় যাওয়ার ঝুঁকি নিতে চায়নি সোহেল।
পরিস্থিতি তেতে উঠতে পারে বুঝে বেলা বাড়ার আগেই বিরাট পুলিশ বাহিনী নিয়ে চরে চলে যান জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার অমিতাভ মাইতি। সকাল হতেই বালি-পাথর খাদানের সিন্ডিকেট চক্রে শাসক দলের যোগ রয়েছে বলে অভিযোগও উঠতে শুরু করেছিল। জলপাইগুড়িতে ময়নাতদন্তের পরে ইলিয়াসের দেহ চরে পৌঁছনোর পরেই তুমুল গোলমাল শুরু হয়ে যায়। বিকেল ৩টের সময় পুলিশ চর এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে। তা সত্ত্বেও পুলিশকে লক্ষ করে ইট ছোড়া শুরু হয়ে যায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, পুলিশ লাঠি চালায়। তাতেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে না পেরে কাঁদানে গ্যাসও ছোড়া হয়। জলপাইগুড়ির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পুলিশের উপরে আক্রমণ হয়েছে। গোটা ঘটনাটাই আমরা খতিয়ে দেখছি। খুনের অভিযোগের তদন্তও পুরোদমে চলছে।’’ বিক্ষোভকারীদের কয়েকজনকে আটকও করেছে পুলিশ।
বিকেলের পরে আসেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তীও। তিনি বলেন, ‘‘সিন্ডিকেটের কোনও প্রশ্ন নেই। এলাকায় শান্তি ফেরানোর চেষ্টা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy