Advertisement
০৮ মে ২০২৪

আত্রেয়ীর পাশে চাই সকলকেই

আত্রেয়ী নদীকে ঘিরে জলসংকট, আত্রেয়ীতে নদী বাঁধ দিয়ে (বাংলাদেশের মোহনপুরে) জল আটকানোর চেষ্টা, দক্ষিণ দিনাজপুরের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, জীবনরেখা আত্রেয়ী নদীকে ঘিরে সমস্যা সমাধানের জন্য আত্রেয়ী বাঁচাও আন্দোলন, এ সব কারও অজানা নয়। পরিবেশ আন্দোলনে সংযুক্ত মানুষ কিংবা পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ মানুষের কাছে নদী ঘিরে এমন স্বতস্ফূর্ত আবেগপ্রবণ পরিবেশ বান্ধব আন্দোলনকে পৌঁছে দেওয়ার পেছনে জনমতকে গড়ে তোলার জন্য সংবাদমাধ্যমও ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে এবং করছেও।

এমন চেহারাতেই ফিরে আসুক আত্রেয়ী। চান সকলে। —ফাইল চিত্র।

এমন চেহারাতেই ফিরে আসুক আত্রেয়ী। চান সকলে। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বালুরঘাট শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০১৫ ০২:২২
Share: Save:

আত্রেয়ী নদীকে ঘিরে জলসংকট, আত্রেয়ীতে নদী বাঁধ দিয়ে (বাংলাদেশের মোহনপুরে) জল আটকানোর চেষ্টা, দক্ষিণ দিনাজপুরের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, জীবনরেখা আত্রেয়ী নদীকে ঘিরে সমস্যা সমাধানের জন্য আত্রেয়ী বাঁচাও আন্দোলন, এ সব কারও অজানা নয়। পরিবেশ আন্দোলনে সংযুক্ত মানুষ কিংবা পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ মানুষের কাছে নদী ঘিরে এমন স্বতস্ফূর্ত আবেগপ্রবণ পরিবেশ বান্ধব আন্দোলনকে পৌঁছে দেওয়ার পেছনে জনমতকে গড়ে তোলার জন্য সংবাদমাধ্যমও ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে এবং করছেও। উপগ্রহ চিত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশের মোহনপুরে নদীবাঁধ দেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরে প্রথম দিশারী সংকল্পর পক্ষ থেকে দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলাশাসক, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এমনকী বাংলাদেশের পরিবেশমন্ত্রীকেও ই মেলের মাধ্যমে ছবি সহ বিষয়টি জানাই। পরবর্তী কালে রাজ্যের সেচমন্ত্রীকে বিষয়টি অবহিত করি, পূর্তমন্ত্রী বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখতে শুরু করেন। দিন কয়েক আগে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ফ্যাক্স করি।

ঘটনাচক্রে এর পরই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের প্রাক্কালে বিষয়টি বিধানসভায় উত্থাপিত হয় এবং মুখ্যমন্ত্রী বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আত্রেয়ীতে বাঁধ কেন এই শীর্ষক চিঠি দেন। আমরা জেনেছি ইতিমধ্যেই আত্রেয়ীর উপর নির্মিত নদীবাঁধের স্বরূপ আত্রেয়ী জলসংকটে পড়েছে। তার সামাধান ইত্যাদি নিয়ে আমরা যেমন চিন্তিত, তেমনই চিন্তিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীও। মাঝে একবার সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই বিষয়কে প্রাধ্যন্য দিয়েই বালুরঘাটে আসার কথা ছিল। যদিও পরে তা পরিবর্তন হয়। অতি সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর সফরকে ঘিরে দক্ষিণ দিনাজপুরের মানুষ ভীষণ আশাবাদী ছিল, যে তিনি এ জেলায় আসবেন। এবং আমাদেরকে আশার বাণী শোনাবেন আত্রেয়ীর ব্যাপারে। আপাতত তিনি এ বার না আসায় আমরা কিঞ্চিৎ হতাশ হলেও মনোবল হারাচ্ছি না। দিন কয়েক আগেই ঢাকা সফর পরবর্তী ক্ষেত্রে আবার মুখ্যমন্ত্রীকে ফ্যাক্স করেছি। আমরা ভীষণ আশাবাদী বালুরঘাট সহ জেলাকে দেশের রেল মানচিত্রে সংযুক্ত করার জন্য ওঁর যে ইতিবাচক সদর্থক ভূমিকা ছিল (সে কথা এখনও স্মরণ করেন জেলাবাসী) আত্রেয়ী নদীকে ঘিরে উদ্ভুত সমস্যাটির সমাধানেও উনি দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।

আত্রেয়ী নদীতে জল নেই। এই নদীর সম্পদ হারিয়ে যাচ্ছে(উদাহরণ রাইখর, চ্যালা ইত্যাদি মাছ) প্রায় ৫৮ কিমি ভারতবর্ষের এই জেলার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত এই নদীর উপর নির্ভরশীল অসংখ্য মতস্যজীবী, কৃষিজীবী মানুষ তাদের কর্মসংস্থান, জীবন আজ আক্রান্ত। যা সমস্যায় ফেলছে জেলার অর্থনৈতিক উন্নয়নকে। আমরা ভীষণ ভাবেই জেগে আছি। আত্রেয়ী নদীকে ঘিরে বালুরঘাট থেকে উদ্ভুত দেশের নদী সম্পদকে বাঁচিয়ে রাখার এই আন্দোলন প্রবহমান রাখতে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। যে নদীকে আমরা মা রূপে বর্ণনা করি তাকে হারিয়ে যেতে দেওয়া কোনও কাজের কথা নয়। নতুন প্রজন্মরা আমাদের সাথেই আছে।

তুহিনশুভ্র মণ্ডল, বেলতলা পার্ক, বালুরঘাট।

একজোট হয়ে নদী বাঁচাবোই

আমরা জানি আমাদের সভ্যতা নদীকেন্দ্রিক। নদীকে ঘিরে গড়ে উঠেছে কত শহর, নগর, বন্দর। বড়দের মুখে শুনেছি আমাদের জেলার মূল নদী আত্রেয়ীও এক সময় খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কত জল, কত মাছ, কত ব্যবসা বাণিজ্য এই নদীকে ঘিরে হতো। গত কয়েক বছর ধরে দেখি আত্রেয়ী নদীতে বর্ষার সময় ছাড়া জলই থাকে না। নদীর অনেক মাছই নাকি পাওয়া যায় না। এ কথাও শুনি। নদীতে যদি জল না থাকে তাহলে কেমন করে হবে? কিছু দিন আগে থেকে শুনছি আত্রেয়ী নদীতে নাকি নিয়ম না মেনে বাঁধ দেওয়া হয়েছে। আমরা তো এর প্রতিবাদে আত্রেয়ীর নামে পথ নাটকও করলাম। শহরের নাটকের দল তূণীর, যৌথমঞ্চ আত্রেয়ী সত্যাগ্রহ মুভমেন্ট কমিটি, ইলেকট্রন ব্যান্ডের সদস্যরা মিলে মিছিল করলাম। আত্রেয়ী নদীকে নিয়ে গান তৈরি হল। এখনও সব সময় কোনও না কোনও কর্মসূচি চলছে। এই নদী মাঠের চেহারা নেয় অনেক সময়ই। নদীটি দূষিত হয়ে চলেছে। শহরের প্লাস্টিক, ক্যারিব্যাগ নিষিদ্ধ না হওয়ায় সেটাও নদীর দূষণ সৃষ্টি করছে। কিন্তু এ ভাবে নদীকে নষ্ট হতে দেওয়া যায় না। আত্রেয়ী নদীকে বাঁচাতেই হবে। এটাই সকলের অঙ্গীকার হওয়া উচিত। না হলে সমূহ বিপদ।

মুনমুন বর্মন, প্রিয়া সরকার, অযোধ্যা, বালুরঘাট।

আত্রেয়ী নদীর মৃত্যু রুখতে চাই সচেতনতা

বালুরঘাট শহরের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে আত্রেয়ী নদী। আত্রেয়ী নদীকে ঘিরে গড়ে উঠেছে নানান জনপদ। অনেক মানুষের জীবন ও জীবিকা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে এই নদীর উপর নির্ভরশীল। অতীতের বর্তমানেও আমাদের গর্বের নদী আত্রেয়ী। কিন্তু এখন তা চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে। আত্রেয়ীতে বাঁধ দিয়ে জল আটকে সমস্যা তৈরি করেছে। অনেক সময়ই জল থাকছে না নদীতে এ কথা ঠিক। তার সঙ্গে এটাও কি আলোচনার বিষয় না যে আত্রেয়ী নদীকে আমরা যারা এর উপর নির্ভরশীল, যাদেরকে সমৃদ্ধ করেছে এই জীবনরেখা তারা কি এর যতটুকুই জল আছে, তাকে রক্ষা করতে পারছি? রক্ষা করতে পারছি এই নদীর সম্পদকে? নদীর বুকে কীটনাশক দিয়ে চাষবাস হচ্ছে। আত্রেয়ী নদীর দূষণ হচ্ছে। আত্রেয়ীতে এক সময় রাইখর, পুতুল, খলসে, চেলা, মহাশোল, বাঘা আড়, রিঠা ইত্যাদি মাছ পাওয়া যেত। কীটনাশকের দূষনে ওই সমস্ত নদীয়ালি মাছ হারিয়ে গেল। তাছাড়া শহরের সমস্ত আবর্জনা, বর্জ্য গিয়ে জমা হচ্ছে আত্রেয়ী নদীতে। নদীটি একটি ডাস্টবিনে পরিণত হয়েছে। নিষিদ্ধ প্লাস্টিক, ক্যারিব্যাগ রমরমিয়ে চলছে শহরে। তা গিয়ে যে জমা হচ্ছে নদীতে, তা নদী লাগোয়া নিকাশি নালার মুখ দেখলেই বোঝা যায়। আত্রেয়ী নদীর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ডাঙা খাঁড়ি। মৎস্য চাষ, নৌকা বিহার ইত্যাদি সহযোগে এই জলাশয়টি যখন সম্পদ হয়ে উঠতে পারে, তখন আমরা সেই সম্ভাবনাটি দেখতে পাচ্ছি না কেন? নদী লাগোয়া অনেক বাড়ির আবর্জনা নদীতে গিয়ে মিশছে। নদীর পাশে শ্মশানের বর্জ্য মিশছে নদীতে। বালুরঘাট পুরসভা, সেচ দফতর এ সব দেখবে না কেন? প্রতিমা বিসর্জন জনিত দূষণ নিয়েও কি আমরা সঠিক মাত্রায় সচেতন? আত্রেয়ী নদীকে বাঁচাতে প্রশাসন, সাধারণ মানুষকে একযোগে কাজ করতে হবে। নইলে এক দিন আত্রেয়ী মৃত নদী বলে গণ্য হবে।

বিক্রমজিৎ ভৌমিক, মাস্টারপাড়া, বালুরঘাট।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE