Advertisement
১৮ মে ২০২৪

লোকালয়ে ফের বুনো হাতির হামলায় মৃত্যু

সারা রাত ধান পাহারা দিয়ে বাড়ির পথ ধরেছিলেন মধ্যবয়স্ক কৃষক। রাস্তায় হঠাৎই সামনে চলে আসে হাতির দল। পালানোর সুযোগও পাননি তিনি। একটি দাঁতাল এগিয়ে এসে শুঁড়ে পেঁচিয়ে আছাড় দেয় মাটিতে। গুরুতর জখম অবস্থায় জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

পার্থ চক্রবর্তী
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৬ ০২:১৩
Share: Save:

সারা রাত ধান পাহারা দিয়ে বাড়ির পথ ধরেছিলেন মধ্যবয়স্ক কৃষক। রাস্তায় হঠাৎই সামনে চলে আসে হাতির দল। পালানোর সুযোগও পাননি তিনি। একটি দাঁতাল এগিয়ে এসে শুঁড়ে পেঁচিয়ে আছাড় দেয় মাটিতে। গুরুতর জখম অবস্থায় জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতের নাম বীজেন রায় (৪৮)। ঘটনার পরে এলাকায় বিক্ষোভ শুরু হয়। লাগোয়া বৈকুন্ঠপুর বনাঞ্চল থেকে প্রতিদিন লোকালয়ে হাতির দল ঢুকে পড়লেও বন দফতর কোনও পদক্ষেপ করছে না বলে অভিযোগ। রাতের বেলায় মশাল-পটকা নিয়ে পাহারা না দিলে হাতির দল শস্য খেত মুড়িয়ে দিচ্ছে, আবার কোনও ভাবে হাতির দলের সামনে পড়ে গেলে মৃত্যু অনিবার্য বলে বাসিন্দাদের দাবি।

বীজেনবাবুর মৃত্যুর খবর গ্রামে ছড়িয়ে পড়তেই বাসিন্দারা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। বনকর্মী এবং আধিকারিকরা ঘটনাস্থলে গেলে তাঁদের ঘিরে বিক্ষোভ চলতে থাকে। মৃতের পরিবারকে দ্রুত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানানো হয়। লোকালয়ে হাতির হানা রুখতে পদক্ষেপের আশ্বাস দিলে বনকর্মীরা বিক্ষোভ থেকে রেহাই পান। বন দফতরের বেলাকোবার রেঞ্জ অফিসার সঞ্জয় দত্ত বলেন, ‘‘এলাকায় নিয়মিত টহলদারি চলছে। প্রয়োজনে টহলদারি আরও বাড়ানো হবে। মৃতের পরিবার দ্রুত ক্ষতিপূরণের আড়াই লক্ষ টাকা পাবে। এ দিন ৪০ হাজার টাকা পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।’’

বীজেনবাবুর বাড়ি বেলাকোবার লোধাবাড়ি এলাকায়। রাতে তো বটেই ভোর এমনকী বিকেলেও বৈকুন্ঠপুরের জঙ্গল থেকে হাতির দল গ্রামে ঢুকে পড়ছে বলে অভিযোগ। রাতভর ফসল পাহারা দিচ্ছেন বাসিন্দারা। এ দিন ভোরবেলায় বাড়ি ফিরতে গিয়ে বুনোর দলের সামনে পড়ে মৃত্যু হয়েছে বীজেনবাবুর। এলাকার এক বাসিন্দার অভিযোগ, ‘‘রাতের বেলায় ফসল বাঁচাতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খেত পাহারা দিচ্ছি। এখন যদি ভোরবেলাতেও হাতি গ্রামে ঢুকে মানুষ মেরে যায়, তবে আমরা থাকব কী ভাবে?’’

লোধাবাড়ি এবং লাগোয়া গ্রামে রাতভর ফসল আঁকড়ে পড়ে রয়েছে বন দফতরের ‘হুলাপার্টি’ও। হাতির দল দেখলেই মশাল জ্বালিয়ে ক্যানেস্তারা পিটতে শুরু করেন বাসিন্দারা। আগুন দেখে নাগাড়ে শব্দ শুনে হাতির দলও অন্যত্র সরে যায় অথবা জঙ্গলে ঢুকে পরে বলে দাবি। বাসিন্দান্দের একাংশের অভিযোগ, বন দফতরের থেকে নিয়মিত পটকাও মেলে না। নিজেদের ফসল বাঁচানোর জন্য নিজেদেরই টাকা তুলে পটকা, মশালের কেরসিন তেল জোগাড় করতে হয় বাসিন্দাদের। এ দিন বীজেনবাবুর মৃত্যুর পরে যাবতীয় অভিযোগকে কেন্দ্র করে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ শুরু হয়।

মাস কয়েক আগে জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া রংধামালি এলাকায় চিতাবাঘের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। রংধামালি থেকে বোদাগঞ্জ হয়ে বেলাকোবার লোধাবাড়ি বৈকুন্ঠপুর জঙ্গল লাগোয়া গ্রাম এবং জনপদগুলিতে বুনোদের আনাগোনা লেগেই রয়েছে বলে বাসিন্দাদের দাবি। টহলদারি না বাড়ালে বুনোদের লোকালয়ে ঢুকে পড়া রোখা সম্ভব নয় বলে বাসিন্দাদের দাবি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

elephant killed
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE