Advertisement
E-Paper

দেহের মধ্যে লুকনো ৬ সোনার বাট

তরুণটির দেহের কাছে যখনই নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল সুপার স্ক্যানার ‘হ্যান্ড হেল্ড মেটাল ডিটেক্টর’টি, শোনা যাচ্ছিল বিপ বিপ আওয়াজ। সন্দেহ হয় পরীক্ষাকারী সিআইএসএফ-এর জওয়ানের। 

নিজস্ব প্রতিবেদন 

শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০১৯ ০৫:০২

তরুণটির দেহের কাছে যখনই নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল সুপার স্ক্যানার ‘হ্যান্ড হেল্ড মেটাল ডিটেক্টর’টি, শোনা যাচ্ছিল বিপ বিপ আওয়াজ। সন্দেহ হয় পরীক্ষাকারী সিআইএসএফ-এর জওয়ানের।

তরুণটিকে আলাদা করে নিয়ে প্রশ্ন করা হয়, পিছনে কি কিছু লুকোনো আছে? জবাব আসে, না। পরের প্রশ্ন, কোনও অস্ত্রোপচার হয়েছে দেহের? শরীরে কোনও ধাতু আছে? জবাব— না! এ বারে প্রশ্ন, কোথা থেকে আসছেন? জবাব দিল তরুণ, গুয়াহাটি থেকে। সতর্ক হয়ে যান জওয়ান। গুয়াহাটি থেকেই তো দিল্লির বিমানবন্দর ছিল। তা হলে বাগডোগরায় এসে বিমান ধরছেন কেন? ১৬ বছর সাত মাস বয়সী ছেলেটির মুখে কোনও জবাব নেই।

মঙ্গলবার দুপুর ১টা ৪০ মিনিটের ওই উড়ানে আর ওঠা হয়নি ছেলেটির। তাঁকে টানা জেরা করেন সিআইএসএফ-এর গোয়েন্দারা। এক সময়ে ভেঙে পড়েন তিনি। তাঁর পায়ুদ্বার থেকে উদ্ধার হয় ছ’টি সোনার বাট, যেগুলির মোট ওজন ৯৯৭.৪১ কেজি। জানা যায়, পায়ুর ভিতরে লুকিয়ে তিনি সোনা পাচার করছিলেন। বাগডোগরা দিয়ে এ ভাবে পায়ুর ভিতরে করে সোনা পাচার ধরা পড়ার ঘটনা এর আগে মনে করতে পারছেন না কর্তব্যরত অফিসারেরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, এর আগে ২০১৫ সালে বাগডোগরা বিমানবন্দরে পঞ্জাবের বাসিন্দা দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। অভিযুক্তরা ব্যাংকক থেকে শিশুদের ‘ডায়াপার’-র মধ্যে ৩ কেজি সোনার বিস্কুট লুকিয়ে এনেছিল। তা নিয়ে দিল্লি যাওয়ার চেষ্টা করছিল। গত অক্টোবরে ভুবনেশ্বর বিমানবন্দরে কুয়ালালামপুর থেকে আসা তামিলনাড়ুর এক যুবককে ধরা হয়। তারও পায়ুদ্বার থেকে ৫ লক্ষ টাকা মূল্যের সোনার বিস্কুট উদ্ধার হয়। কিন্তু বাগডোগরায় এমন ঘটনা চট করে মনে পড়ছে না কারও।

তদন্ত করতে নেমে গোয়েন্দারা জানতে পারেন, এই তরুণের বাড়ি মধ্যপ্রদেশে ভিন্দে। গোয়েন্দাদের দাবি, জেরায় তরুণ জানান, তিনি দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ছেন। মাত্র ৫ হাজার টাকার বিনময়ে তিনি এই কাজ করছিলেন বলেও দাবি করেন। জিজ্ঞাসাবাদ করার সময়েই জানা যায়, গুয়াহাটিতে তাঁরা তিন জন ছিলেন। ট্রেনে চেপে তিন জনই বাগডোগরায় আসেন। তবে বাগডোগরার সিসিটিভি ক্যামেরায় দেখা যায়, বিমানবন্দরে তাঁকে একজনই ছেড়ে দিয়ে যান। ওই তরুণ জানিয়েছেন, অন্য জন হোটেল থেকেই অন্যত্র চলে যান।

ওই তরুণকে জেরা করে আরও জানা গিয়েছে, তাঁর বিমানের টিকিট, হোটেলে থাকা ও খাওয়ার খরচও পাচারকারীরা বহন করছিল। মঙ্গলবার সকালে সোনার ৬টি টুকরোকে দু’টি প্যাকেটে ভাগ করে তা লুব্রিকেন্টের সাহায্যে তাঁর পায়ুর ভিতরে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। সেই অবস্থায় তাঁকে নিয়ে এক ব্যক্তি গাড়ি করে বাগডোগরা বিমানবন্দরে নামিয়ে দিয়ে চলে যায়।

বিমানবন্দরের সিআইএসএফের এক কর্তা জানান, শরীরের ভিতরের কিছু ঢুকিয়ে রাখলে হ্যান্ডহেল্ড মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে অনেক সময়ই তা ধরা পড়ে না। কিন্তু এখন অত্যাধুনিক ডিটেক্টর তৈরি হয়েছে। প্রযুক্তির ভাষায় এগুলিকে সুপার স্ক্যানার, গোল্ড হ্যান্টিং ডিটেক্টর বলা হয়। শরীরের ৩-৫ ইঞ্চি ভিতরে সোনা বা কোনও ধাতু লুকিয়ে রাখা থাকলেও তা সাধারণত বেজে ওঠে। এদিন যে কনস্টেবল দিল্লিগামী বিমানের ওই যাত্রীকে পরীক্ষা করেছিলেন, তার কাছে উন্নত মানের ডিটেক্টর ছিল। তাই সোনা ধরা সম্ভব হয়েছে।

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ওই তরুণের মতো অপ্রাপ্তবয়স্কদের এই ধরনের কাজে করানোর পিছনে অনেকগুলো সুবিধা রয়েছে। এক, তাদের কম টাকা দিলেই কাজ হাসিল হয়ে যায়। দুই, তাদের শিশুসুলভ মুখ দেখে সাধারণত সন্দেহ হয় না শুল্ক বা সিআইএসএফ অফিসারদের। তিন, ধরা পড়ে গেলে জুভেনাইল আদালতে তাদের বিচার হয়। তুলনায় সাজা কম হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাদের। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বাগডোগরা বিমানবন্দরের শুল্ক অফিসারদের হাতে তুলে দেওয়া হয় ওই তরুণকে।

Bagdogra Gold Arrest
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy