Advertisement
E-Paper

অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে নাটক বোর্ড মিটিংয়ে

বোর্ড মিটিংয়ে মেয়রের নেতৃত্বাধীন পুর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পাশ করানোর ‘নাটক’ ঘিরে বিতর্ক দানা বেঁধেছে। মঙ্গলবার শিলিগুড়ি পুরসভায় বোর্ড মিটিংয়ে তৃণমূলের কাউন্সিলর জয়দীপ নন্দী অনাস্থা প্রস্তাব আনেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০১৪ ০২:৩৩

বোর্ড মিটিংয়ে মেয়রের নেতৃত্বাধীন পুর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পাশ করানোর ‘নাটক’ ঘিরে বিতর্ক দানা বেঁধেছে। মঙ্গলবার শিলিগুড়ি পুরসভায় বোর্ড মিটিংয়ে তৃণমূলের কাউন্সিলর জয়দীপ নন্দী অনাস্থা প্রস্তাব আনেন। চেয়ারম্যান সভার পরিচালনার দায়িত্বে থাকা অরিন্দম মিত্র এ নিয়ে কাউন্সিলরদের মতামত-ও চান।

মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত জানান, এ ধরনের অনাস্থা বোর্ড মিটিংয়ে আনা যায় না। বোর্ডের বা মেয়রের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনতে চাইলে তার প্রক্রিয়া আলাদা। সে কারণেই এই প্রস্তাব বাতিল করা হোক। তা ছাড়া ইতিমধ্যেই সোমবার তিনি চেয়ারম্যানকে বিষয়টি চিঠি দিয়ে জানিয়েছেনও। তাঁকে হেনস্থা করতে নিয়মের বাইরে এ ভাবে অনাস্থা আনা হচ্ছে বলে তাঁর অভিযোগ।

চেয়ারম্যান জানান, পুর আইনে মেয়র বা পুর কর্তৃপক্ষের অপসারণের জন্য আলাদা প্রক্রিয়ার কথা বলা থাকলেও বোর্ডের সভায় অনাস্থা প্রস্তাব আনা যাবে না বলা নেই। সেই কারণে তিনি প্রস্তাবের পক্ষে এবং বিপক্ষে মত চান। বামেরা চেয়ারম্যানের ওই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে তা থেকে বিরত থাকেন। তারা চান, প্রস্তাব সংশোধন করে পুরসভার অচলাবস্থা কাটাতে নির্বাচনের প্রস্তাব আনা হোক। চেয়ারম্যান জানান বামেরা তা চাইলে আলাদা করে তা বোর্ড মিটিংয়ের ৪৮ ঘণ্টা আগে তা জানিয়ে প্রস্তাব আনতে হবে। এ দিন ১৩ তৃণমূল কাউন্সিলর জয়দীপবাবুর প্রস্তাব সমর্থন করেছেন। বিপক্ষে ছিলেন কংগ্রেসের ৮ জন কাউন্সিলর। সেই কারণে প্রস্তাবটি গ্রহণ করা হল বলে চেয়ারম্যান জানিয়ে দেন। তৃণমূল কাউন্সিলররা আগেও একই ভাবে বোর্ড মিটিংয়ে অনাস্থা এনেছিলেন। তা রাজ্য সরকারের কাছেও পাঠিয়েছিলেন। সরকারি ভাবে তা অবশ্য গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। তা নিয়ে বিতর্কের মধ্যেই বোর্ড মিটিংয়ে মেয়র পারিষদের সিদ্ধান্ত পেশ করা হয়। চেয়ারম্যান সে ব্যাপারে মতামত জানতে চাইলে বামেরা নীরব থাকেন। তাঁরা চেয়ারম্যানের সভা পরিচালনার ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করে মত দেবেন না বলে জানান। পরে সভা ছেড়ে বেরিয়েও যান। তৃণমূলের কাউন্সিলররা জানান, বোর্ডের বিরুদ্ধে আস্থা নেই সেই প্রস্তাব ইতিমধ্যেই তাঁরা এনেছেন। তাই মেয়রের তরফে এসব পেশ করার কোনও অর্থ তাঁদের কাছে নেই। তাঁদের আস্থা নেই। ৮ জন কংগ্রেসের কাউন্সিলর সভায় থাকায় এ দিন সিদ্ধান্তগুলি-ও আটকে যায়। তাতে মে মাসে পুরসভার বিভিন্ন কাজকর্মে সমস্যা তৈরি হবে বলে তারা জানিয়েছেন। আটকে পড়েছে অনেক বাড়ি তৈরির নকশার অনুমোদন।

মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত বলেন, “যে ভাবে অনাস্থা প্রস্তাব পাশ করানো হল তা করা যায় না। সিপিএম, তৃণমূল এক হয়ে এই কাজ করছে। রাজনৈতিক ভাবে আমাদের পদক্ষেপ কী হবে জেলা সভাপতির সঙ্গে কথা বলে ঠিক করব।” অনাস্থা আনতে এক তৃতীয়াংশ কাউন্সিলর থাকা দরকার। অনাস্থা প্রস্তাব ৪৭ আসনের পুরসভার ১৮ জন বাম কাউন্সিলর। কংগ্রেসের ১৪ জন এবং তৃণমূলের ১৫ জন রয়েছেন। এই মূহূর্তে চাইলে একমাত্র বামেরাই অনাস্থা আনতে পারে। তৃণমূলের ৩৩ জন কাউন্সিলর নেই। এ দিন অনাস্থার ব্যাপারে জয়দীপবাবু বলেন, “মেয়রের নেতৃত্বে থাকা এই সংখালঘু পুর বোর্ড বাসিন্দাদের পরিষেবা দিতে ব্যর্থ। এই বোর্ডের প্রতি আমাদের অস্থা নেই তাই তিনি প্রস্তাব দিয়েছিলেন। চেয়ারম্যান গ্রহণ করেন।’’ তৃণমূল কাউন্সিলরদের পক্ষে কৃষ্ণ পাল জানান, এর পর নৈতিকভাবে মেয়রের ও তাদের বোর্ড সদস্যদের সরে দাঁড়ানো উচিত।”

এ দিন বামেদের ২ জন কাউন্সিলর উপস্থিত ছিলেন না। সভার মাঝপথে আরও এক জন চলে যান। কংগ্রেসের ৬ জন কাউন্সিলর ছিলেন না। চেয়ারম্যান বাদে তৃণমূলের ছিলেন ১৩ জন। পুরসভার বিরোধী দলনেতা মুন্সি নুরুল ইসলামের অভিযোগ, “এটা শিলিগুড়ি পুরসভার ইতিহাসে একটা কালো দিন হয়ে থাকল। আজ পর্যন্ত কোনও চেয়ারম্যান সভা পরিচালনার নিয়ম ভেঙে কাজ করেননি। বর্তমান চেয়ারমান যা করলেন তাতে পুরসভার নয় তাঁকে মনে হয়েছে তিনি ‘তৃণমূলের চেয়ারম্যান’। আমরা তাঁর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”

চেয়ারম্যান অরিন্দমবাবু বলেন, ‘‘যা বলার সভাতেই বলেছি। আলাদা করে কিছু বলার নেই।” বামেদের অভিযোগ, মেয়র বা তাঁর নেতৃত্বে থাকা পুরবোর্ডের বিরুদ্ধে ‘অনাস্থা’ বা ‘অপসারণ’ একই ব্যাপার। তৃণমূলের হয়ে চেয়ারম্যান যে নাটক করলেন তাতে তিনি নিয়মকে অমান্য করলেন। নুরুলবাবু বলেন, “এই বোর্ডের বিরুদ্ধে আমরাও। তাই আমরা বাসিন্দাদের স্বার্থে নির্বাচন চেয়েছিলাম।”

no trust motion siliguri municipality
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy