Advertisement
E-Paper

অবহেলার লাইব্রেরিতে হারিয়েছে দুষ্প্রাপ্য নথি থেকে চিঠি-পত্রও

মেঝেতে সিমেন্টের আস্তরণ উঠে গিয়েছে। কয়েক জায়গায় গর্তও হয়েছে। নোনা ধরতে শুরু করেছে দেওয়ালে। নীচতলার ঘরগুলিতে ঢুকলেই নাকে আসে সোঁদা গন্ধ। নীচতলার এমনই একটি ঘরে রয়েছে ‘রিডিং রুম’। প্রতি সন্ধ্যায় সেই ঘরে ভিড় করেন পাঠকরা। যাঁদের মধ্যে বয়স্কদের সংখ্যা বেশি হলেও, তরুণ-তরুণীরাও রয়েছেন। নিয়মিত পাঠকদের একাংশের দাবি, অন্যান্য গ্রন্থাগারের তুলনায় মালদহ জেলা গ্রন্থাগারের রিডিং রুমে আসা পাঠক সংখ্যা বেশি।

সায়নী মুন্সি

শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:২৫

মেঝেতে সিমেন্টের আস্তরণ উঠে গিয়েছে। কয়েক জায়গায় গর্তও হয়েছে। নোনা ধরতে শুরু করেছে দেওয়ালে। নীচতলার ঘরগুলিতে ঢুকলেই নাকে আসে সোঁদা গন্ধ। নীচতলার এমনই একটি ঘরে রয়েছে ‘রিডিং রুম’। প্রতি সন্ধ্যায় সেই ঘরে ভিড় করেন পাঠকরা। যাঁদের মধ্যে বয়স্কদের সংখ্যা বেশি হলেও, তরুণ-তরুণীরাও রয়েছেন। নিয়মিত পাঠকদের একাংশের দাবি, অন্যান্য গ্রন্থাগারের তুলনায় মালদহ জেলা গ্রন্থাগারের রিডিং রুমে আসা পাঠক সংখ্যা বেশি।

গ্রন্থাগারের সদস্য সংখ্যাও কম নয়। কমবেশি পাঠকদের অনেকেরই গ্রন্থাগারের পরিকাঠামো নিয়ে অভিযোগ বিস্তর। মাঝারি বৃষ্টি হলেও, জমা জল ঠেলে পাঠকদের গ্রন্থাগারে ঢুকতে হয়। ঘরের নানা পরিকাঠামো বেহাল। অভিযোগ রয়েছে বিদ্যুত্‌ সংযোগ নিয়েও। পুরোনো দিনের বিদ্যুত্‌ সংযোগের ব্যবস্থায় আলো জ্বলে টিমটিম করে।

পাঠকদের অভিযোগ, রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে গ্রন্থাগারে থাকা বহু দুষ্প্রাপ্য নথি যেমন বিখ্যাত ব্যক্তিত্বদের লেখা চিঠি-পত্র খুঁজে পাওয়া যায় না। এক সময়ে গ্রন্থাগারের দেওয়ালে ঝোলানো উইলিয়াম হেনরি ক্রেটনের আঁকা ছবিটিও এখন দেখা যায় না। পাঠকদের একাংশের অভিযোগ, ছবিটি খোয়া গিয়েছে। যদিও, গ্রন্থাগার কর্তৃপক্ষের দাবি, ছবিটি তাদের কাছেই রয়েছে। দেওয়ালে নোনা ধরতে শুরু করায় সম্ভব হচ্ছে না বলে একাংশের দাবি। মালদহ জেলা গ্রন্থাগারের গ্রন্থাগারিক শম্ভু ভট্টাচার্য দাবি করেছেন রিডিং রুম নিয়ে নানা পদক্ষেপ করার পরিকল্পনা হয়েছে। তিনি বলেন, “গ্রন্থাগারে বইয়ের সংখ্যা বেড়েছে। তরুণ পাঠকদের সংখ্যা বেড়েছে। তাদের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার বইয়ের চাহিদা রয়েছে। বিভিন্ন বয়সের পাঠকরা রিডিং রুমে আসছেন, তাই সেই ঘরকে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।” পরিকাঠামো এবং বইয়ের সংখ্যা, দুটি বিষয়েই রামমোহন লাইব্রেরি ফাউন্ডেশন-এর সহায়তা মিলেছে বলে দাবি করেছেন শম্ভুবাবু।

১৯৩৭ সালে মালদহে ‘বি আর সেন পাবলিক লাইব্রেরি অ্যান্ড মিউজিয়ম’ স্থাপিত হয়। পরে গ্রন্থাগারটি মিউজিয়ম থেকে আলাদা হয়ে যায়। গ্রন্থাগারের নাম হয় মালদহ জেলা গ্রন্থাগার। জেলার অন্যতম প্রাচীন এই গ্রন্থাগারের পরিষেবা নিয়েও অভিযোগ রয়েছে। তালিকা মিলিয়ে বই খুঁজে পেতেও সমস্যা হয় বলে পাঠকদের একাংশের অভিযোগ। দীর্ঘদিন ধরে কর্মী নিয়োগ না হওয়াতেও পরিষেবায় প্রভাব পড়েছে বলে দাবি। পাঠকদের একাংশের দাবি, বাম-ডান দুই আমলেই গ্রন্থাগারের পরিকাঠামো বাড়তে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়নি। রাজ্যের অনান্য গ্রন্থাগারে কম্পিউটারের বোতাম টিপেই বইয়ের হদিশ মিললেও, মালদহে এখনও পর্যন্ত সে পরিষেবা মেলেনি বলেও দাবি করা হয়েছে।

গ্রন্থাগারে নিয়মিত যাতায়াত রয়েছে গবেষক কমল বসাকের। তিনি অভিযোগ করে বলেন, “গ্রন্থাগারের সম্ৃদ্ধ ঐতিহ্য থাকলেও, পরিকাঠামো বা পরিষেবা দু’ক্ষেত্রই উপেক্ষিত থেকেছে। বহু ঐতিহাসিক নথি-পত্রের কোনও হদিশ মেলে না। উইলিয়া়ম হেনরি ক্রেটনের আঁকা ছবিটিও হারিয়ে গিয়েছে।” তবে জেলার আরেক গবেষক তথা তথ্য সংগ্রহক ওঙ্কার বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, “মালদহের গ্রন্থাগারটি এখন অনেক সমৃদ্ধ। বহু তরুণ পাঠক-পাঠিকা গ্রন্থাগারে আসে। সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে গ্রন্থাগারটিরও বদল ঘটেছে এবং সেটি ইতিবাচক।”

তবে পাঠকদের একাংশে দাবি, পরিকাঠামো বলতে গ্রন্থাগারের শৌচাগার আগের থেকে ঝাঁ-চকচকে হয়েছে। কিন্তু গ্রন্থাগারের ঘরগুলিতে টিমটিম করে আলোর পরিবর্তন হয়নি। যদিও, নানা সমস্যা সত্ত্বেও আশার আলোও দেখছেন পাঠকদের অনেকেই। গ্রন্থাগারের শিশু-কিশোর বিভাগটির সংস্কার ও উন্নতি হওয়ায় এই বিভাগে পাঠক সংখ্যা অনেকটাই বেড়েছে বলে গ্রন্থাগারিক দাবি করেছেন।

sayani munshi malda
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy