Advertisement
E-Paper

আগে ব্যবস্থা না নেওয়াতেই দুর্ভোগ

তিলক সাধু রোডের বাসিন্দা ৬৭ বছর বয়স্ক রীতা দত্ত চৌধুরীকে দুই বেলা রিকশা করে দেড় কিলোমিটার দূরে জল আনতে যেতে হচ্ছে। সকালে পড়াশোনা ফেলে দাদার সাইকেলে করে ইস্কন মন্দির রোড থেকে পাঞ্জাবিপাড়ায় জল আনতে যেতে হচ্ছে জসমিন পরভিনকেও। সকালে গিয়ে দোকান খুলবেন কী, দুই কিলোমিটার দূরে গিয়ে লাইনে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে বাড়িতে জল পৌঁছে দিতে হচ্ছে ব্যবসায়ী উমেশ শর্মাকে। পরেশনগর এলাকায় পুরসভার পানীয় জল সরবরাহের পাম্প খারাপ হয়ে যাওয়ায় গত ১০ দিন ধরেই এ ভাবে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে পুরসভার সংযোজিত ওয়ার্ডগুলির বাসিন্দাদের। ৩৬-৪৪ নম্বর ওয়ার্ডেও কার্যত জল সরবরাহ বন্ধ।

সৌমিত্র কুণ্ডু

শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০১৪ ০১:২৬
রিকশা করে জল সংগ্রহ করতে আসতে হয় বাসিন্দাদের। —নিজস্ব চিত্র।

রিকশা করে জল সংগ্রহ করতে আসতে হয় বাসিন্দাদের। —নিজস্ব চিত্র।

তিলক সাধু রোডের বাসিন্দা ৬৭ বছর বয়স্ক রীতা দত্ত চৌধুরীকে দুই বেলা রিকশা করে দেড় কিলোমিটার দূরে জল আনতে যেতে হচ্ছে। সকালে পড়াশোনা ফেলে দাদার সাইকেলে করে ইস্কন মন্দির রোড থেকে পাঞ্জাবিপাড়ায় জল আনতে যেতে হচ্ছে জসমিন পরভিনকেও। সকালে গিয়ে দোকান খুলবেন কী, দুই কিলোমিটার দূরে গিয়ে লাইনে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে বাড়িতে জল পৌঁছে দিতে হচ্ছে ব্যবসায়ী উমেশ শর্মাকে। পরেশনগর এলাকায় পুরসভার পানীয় জল সরবরাহের পাম্প খারাপ হয়ে যাওয়ায় গত ১০ দিন ধরেই এ ভাবে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে পুরসভার সংযোজিত ওয়ার্ডগুলির বাসিন্দাদের। ৩৬-৪৪ নম্বর ওয়ার্ডেও কার্যত জল সরবরাহ বন্ধ।

সকাল ৮ টাতেই পঞ্জাবী পাড়ার একটি কলের সামনে ভিড়। তবে কেউই এলাকার নন। ৪০, ৪১, নম্বর ওয়ার্ড থেকে জল নিতে এসেছেন। পঞ্জাবিপাড়া ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে জল থাকলেও আশপাশের ৪০, ৪১ নম্বর ওয়ার্ডে নেই। দেড়-দুই কিমি দূরে বৈকুণ্ঠপল্লি, বঙ্কিমনগর থেকে তাঁরা কেউ মোটরবাইকে চড়ে, কেউ সাইকেল নিয়ে জল নিতে আসছেন। সকালে ৮টা থেকে দু’ঘণ্টা জল সরবরাহ হয়। পানীয় জলের জন্য তাই আগে থেকে সেখানে গিয়ে লাইন দিতে হচ্ছে বাসিন্দাদের। ৩৬, ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের জল নিতে আসতে হচ্ছে আলতে হচ্ছে রথখোলা, সুভাষপল্লি বাজার এলাকাতে।

সকালে স্ত্রীকে নিয়ে ব্যাগে করে বোতল, জ্যারিকেন নিয়ে প্রণামী মন্দির রোডে জল নিতে গিয়েছিলেন ৪০ নম্বর ওয়ার্ডে গীতালপাড়ার বাসিন্দা অশোক পাল। তিনি বলেন, “প্রতিদিন বাড়ি থেকে ১ কিলোমিটার দূরে গিয়ে জল আনতে হচ্ছে। জলের জন্য গরমের মধ্যে এ ভাবে দুর্ভোগ পোহাতে হবে কেন শহরবাসীকে। আগে থেকে সমস্যা মেটাতে ব্যবস্থা না নেওয়ার জন্যই আমাদের মতো বাসিন্দাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।”

এ দিন সকালে রিকশা করে নেতাজিনগরে জল আনতে এসেছিলেন ৬৭ বছরের রীতা দেবী। তিনি জানান, স্বামী হৃদরোগে আক্রান্ত। কাজের লোকদের বললেও দূর থেকে জল নিয়ে যেতে তারা রাজি নন। বাধ্য হয়ে তিনি নিজে রিকশা নিয়ে জল নিতে এসেছেন। ক্ষুব্ধ রীতা দেবী বলেন, “এই বয়সেও এ ভাবে জল আনতে হবে স্বপ্নেও ভাবিনি। পুরসভার অকর্মন্যতার জন্যই মানুষের এই কষ্ট। এলাকার জনপ্রতিনিধিদেরও বিষয়টি দেখা দরকার।”

উমেশবাবুর সেলুন রয়েছে হায়দরপাড়ায়। সকালে খদ্দেররা বেশি আসেন। তাই সকাল ৮ টা থেকে ১১টা পর্যন্ত ভিড় বেশি থাকে। অথচ সকালে ওই সময় এখন এক দেড় ঘন্টা নষ্ট হচ্ছে জল আনতে যেতে। উমেশবাবু বলেন, “দোকান খুলব কী? স্কুটারের তেল পুড়িয়ে সকালে জল আনতে যেতে হচ্ছে অন্য ওয়ার্ডে। ভিড়ে লাইনে দাঁড়িয়ে জল আনতে কমপক্ষে ১ ঘন্টা নষ্ট হচ্ছে।” বোনকে সাইকেলে করে ব্যাগে বোতল নিয়ে জল আনতে এসেছে মহম্মদ আদনান। আদনান বলেন, “ইস্কন মন্দির রোডে বাড়ির সামনেই কল। ১০ দিন ধরে জল পড়ছে না। অন্য ওয়ার্ডে গিয়ে লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে। অনেকগুলি বোতল ভরতে হয়। বোন থাকলে সুবিধা হয়। জল ভরতে দেরি হলে অন্যদের সমস্যা হয়। তাঁরা তাড়া দেন।”

পুর কমিশনার জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের সঙ্গে কথা বলে জল সরবরাহের ব্যবস্থা করতে তারা চেষ্টা করছেন। কবে থেকে জল সরবরাহ হবে তা স্পষ্ট করে কিছু না জানানোয় উদ্বেগ প্রকাশ করেন বাসিন্দারা। জলের মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে আগে থেকে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি সেই প্রশ্ন তুলেছেন ৩৭ নম্বর এলাকার বাসিন্দা গোবিন্দ নন্দী, বাবু সাহা, সুভাষ সাহারা। হায়দরপাড়া, দশরথপল্লি, গাঁধীনগর, ভানুনগর, রবীন্দ্রনগর, ঘোঘোমালি কোথাও পানীয় জল সরবরাহ নেই। রবীন্দ্রনগর এলাকার বাসিন্দা গোবিন্দবাবু বলেন, “এক সপ্তাহ ধরে কলে জল নেই। পরিস্থিতি অসহ্য হয়ে পড়েছে। জল কেনার সামর্থ্য না থাকলেও বাধ্য হয়ে তাই করতে হচ্ছে।” বাঘা যতীন কলোনির বাসিন্দা দিলা সরকার, প্রকাশনগর এলাকায় রামবিলাস সাহানির মতো গরিব বাসিন্দাদের দেড় দুই কিলোমিটার হেঁটে অন্য ওয়ার্ডে গিয়ে বোতল, জ্যারিকেনে জল ভরে ফের হেঁটে বাড়িতে ফিরতে হচ্ছে।

সবিস্তার দেখতে ক্লিক করুন

soumitra kundu water crisis siliguri
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy