আলু বিক্রয় কেন্দ্রের উদ্বোধনে এলেন মন্ত্রী। কিন্তু সেখানে সকল ব্যবসায়ীকে না ডাকায় ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
উত্তরবঙ্গের অন্যতম প্রধান আলু উত্পাদন কেন্দ্র ধূপগুড়ি। বৃহস্পতিবার সেখানে গিয়ে কৃষি বিপণন মন্ত্রী অরূপ রায় নবনির্মিত বিক্রয় কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন। ক্ষুব্ধ আলু ব্যবসায়ীদের একাংশের অভিযোগ, আলু বিক্রি নিয়ে যে সমস্যা চলছে সেই ব্যাপারে খোলাখুলি আলোচনার একটা সুযোগ থাকলেও তা কাজে লাগাতে চায়নি কৃষি বিপণন দফতর। সে জন্যই মন্ত্রীর অনুষ্ঠানে আলু ব্যবসায়ীদের একটি বড় অংশকে ডাকাই হয়নি। উত্তরবঙ্গ আলু ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষে জানানো হয়েছে, মন্ত্রী যে ধূপগুড়ি নিয়ন্ত্রিত বাজারের স্টল উদ্বোধন করবেন সে বিষয়ে তাদের জানানো হয়নি। যাঁদের ডাকা হয়েছে, তাঁদের শুধু মন্ত্রীকে ফুল দিয়ে সম্বর্ধনা জানানোর দায়িত্ব দিয়েছিলেন উদ্যোক্তারা। যেমন, ধূপগুড়ি পটেটো মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে মন্ত্রীকে ফুল দিয়ে সম্বর্ধনা দেওয়া হয়। কিন্তু আলু বিক্রির সমস্যা নিয়ে কোনও আলোচনার সুযোগ তাঁরা পাননি বলে জানিয়েছেন। মন্ত্রী জানিয়েছেন, আলু ব্যবসায়ীদের রাজ্য সংগঠনের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনা চলছে।
এ দিন কৃষি বিপণন মন্ত্রী জানান, বাজারের চাহিদার তুলনায় কম পরিমাণে আলু হিমঘর থেকে বার হচ্ছে। সে জন্যই দাম কমছে না বলে তাঁর দাবি। তিনি বলেন, “হিমঘর থেকে পর্যাপ্ত আলু বাজারে ছাড়ার জন্য এবার সরকার উদ্যোগী হবে। তাতে সাড়া না মিললে হিমঘর সংরক্ষণ আইন কাজে লাগাবে রাজ্য সরকার।”
এদিন প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি ওই ভবনের উদ্বোধন হয়। ২৬টি কৃষিজ পণ্য বিক্রয় কেন্দ্র তৈরি হয়েছে। অরূপবাবু বলেছেন, “টাস্ক ফোর্স আলুর বাজার দর নিয়ে নজরদারি করছে। আলুর দাম নিয়ে এবং মজুত করা নিয়ে সরকার কী ধরণের পদক্ষেপ নেবে, সেই ব্যাপারে শুক্রবার উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা হবে।”
ব্যবসায়ীদের দু’টি সংগঠন থেকে ধূপগুড়িতে তিনটি স্টল খুলে ১৪ টাকা কেজি দরে খুচরো আলু বিক্রি করা হচ্ছে। কিন্তু ওই ব্যবসায়ীরা পাইকারি বাজারে ১৬ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি করছেন। ফলে দাম সর্বত্র কমছে না। কারণ উত্তরবঙ্গে হাতে গোনা কয়েকটি জায়গায় ব্যবসায়ীরা ১৪ টাকা কেজি স্টল খুলে আলু বিক্রি করছেন। উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে লোকজনকে মূলত কুড়ি টাকা থেকে পঁচিশ টাকা কেজি দরে আলু কিনতে হচ্ছে। অথচ ব্যবসায়ীরই জানিয়েছেন, ধূপগুড়ি ও ফালাকাটায় ১২টি হিমঘরে যে পরিমাণ আলু বর্তমানে মজুত রয়েছে, তার অর্ধেক পরিমাণ আলুর চাহিদা রয়েছে উত্তরবঙ্গে। ব্যবসায়ীরা গড়ে প্রতিটি হিমঘর থেকে মাত্র ২০০ প্যাকেট আলু বার করছে। দরকার দু’হাজার প্যাকেট আলুর।
ধূপগুড়ির পরে জলপাইগুড়িতে যান মন্ত্রী। সেখানে তিনি জানান, স্টল খুলে জলপাইগুড়ি জেলাতেও ১৪ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রির কথা ভাবছে কৃষি বিপণন দফতর। জলপাইগুড়িতে তিনি বলেন, “প্রয়োজন হলে এখানেও কলকাতার মতো স্টল খুলে ১৪ টাকা দামে আলু বিক্রি করা হবে।” তবে কবে থেকে ওই আলু জেলার বাসিন্দারা পাবেন তা মন্ত্রী স্পষ্ট করে কিছু বলেননি।
রাজ্যে আলু সঙ্কটের জন্য তিনি এদিন কেন্দ্রীয় সরকারকে দায়ী করেন। তাঁর অভিযোগ, “দেশ জুড়ে আলুর সঙ্কট চলছে। পঞ্জাব, উত্তর প্রদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গে আলুর উত্পাদন হয়ে থাকে। পঞ্জাব ও উত্তরপ্রদেশের আলু বাইরে চলে যাওয়ায় পশ্চিমবঙ্গের উপরে চাপ বেড়েছে।” তিনি বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকার কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তবুও আমরা ১৪ টাকা দামে আলু বিক্রি করছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy