এই তিন-পুকুরকে ঘিরেই এক সময়ে পর্যটনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল ফাঁসিদেওয়ায়।
দীর্ঘদিন ফাঁসিদেওয়া যাওয়ার রাস্তা বলতে বোঝাত, দু’টি রাস্তাকে। মাটিগাড়া, খড়িবাড়ির সঙ্গে দু’টি পাথর বিছোনো রাস্তাই ছিল ভরসা। ব্যবসায়ীরা কোনও সময় বর্ধমান রোড দিয়ে মহানন্দা নদী পার হয়ে ঘোড়া বা গরুর গাড়িতে মালপত্র নিয়ে যাতায়াত করতেন জেলার বন্দরগছ নামের অন্যতম ব্যবসায়িক কেন্দ্রে।
ধীরে ধীরে ফুলবাড়ি বাইপাস তৈরি হয়েছে। ফাঁসিদেওয়ার প্রধান পূর্ত সড়ক দুই পাশে বাইপাসের ক্যানাল রোড এবং ঘোষপুকুর, গোয়ালটুলিতে রাস্তার বড় মিলেছে। গ্রাম থেকে নতুুন করে শহরায়ণের দিকে এগোতে থাকা ফাঁসিদেওয়ার সংযোগকারী যোগাযোগ ব্যবস্থা এখনও বেহাল।
শিল্পোদ্যোগী, ব্যবসায়ীদের অনেকেই জানিয়েছেন, ওই এলাকায় সম্ভাবনা থাকলেও বাইপাসকে ঘিরেই ফুডপার্ক, বিনোদন পার্ক তৈরি হয়েছে মাত্র। কিন্তু রাস্তার খারাপের জন্য পরবর্তীতে তুলনামূলকভাবে কিছুটা ভাল বিধাননগর, রাঙাপানি, ঘোষপুকুরের দিকেই শিল্পদ্যোগী ব্যবসায়ীদের যাওয়ার ঝোঁক বেড়েছে। তা পেপার মিল, প্লাইউড ও সার কারখানা, সিমেন্ট ফ্যাক্টারি, রিসর্ট, হ্যাচারি বা আনারস প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রই হোক। এখন নতুন করে এলাকার ফাঁসিদেওয়ার মডেল হাইস্কুল, মডেল কলেজ থেকে কিসাণ মান্ডি তৈরি হচ্ছে। আইটিআই কলেজ অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। চা বাগানের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন কারখানা, পোলট্রি ফার্ম তৈরি হচ্ছে। জমির চাহিদা বাড়ায় গত বছরই পঞ্চায়েত সমিতিকে পঞ্চায়েত আইন মেনে ‘ল্যান্ড ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট’ এবং ‘বিল্ডিং প্ল্যান’ প্রথা চালু করতে হয়েছে।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, ফুলবাড়ি বাইপাসের বিরাট অংশ এখন খানাখন্দে ভরে গিয়েছে। বর্ষায় যা ছোট ছোট পুকুরে পরিণত হচ্ছে। গাড়ি উল্টে দুর্ঘটনা ও যানজট নিত্যদিনের ব্যাপার। আবার সদর ফাঁসিদেওয়ায় ঘণ্টায় ঘণ্টায় বাস, অটোও তেমন নেই। এখনও ঠিকঠাক গড়ে ওঠেনি ছোট গাড়ির স্ট্যান্ডও। নেই কোনও বাস স্ট্যান্ড, ট্রাক স্ট্যান্ডও। এলাকার যাত্রী প্রতিক্ষালয় হয় ভবঘুরে বা ব্যবসায়ীদের মালপত্রের দখলে থাকে বলে অভিযোগ। এই অবস্থায় নতুন করে শিক্ষা, শিল্প-কারখানা, পর্যটন, শিক্ষা, কৃষিতে এগোনোর চেষ্টা কতটা ফলপ্রসূ হবে তা নিয়েই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। আর লাগোয়া ফুলবাড়ি বাণিজ্যপথ পুরোপুরি খুললেও যোগাযোগের সুফল কতটা ফাঁসিদেওয়া পাবে তা নিয়েও সন্দিহান বাসিন্দারা। প্রশাসনের দাবি, ফুলবাড়ি বাইপাস বা ঘোষপুকুর বাইপাসের বেহাল অংশ সংস্কারের অপেক্ষা।
ফাঁসিদেওয়ার গোয়ালটুলি মোড়ে বেহাল রাস্তা।
আবার কল-কারখানা, কৃষির উপর নির্ভরশীল ফাঁসিদেওয়ায় বরাবর পর্যটন শিল্প কার্যত উপেক্ষিতই থেকে গিয়েছে। অথচ সম্ভাবনা রয়েছে অনেকই, এমনটাই মনে করেন বাসিন্দারা ও পর্যটন ব্যবসায়ীরা। ফুলবাড়ি ব্যারেজের পরিযায়ী পাখিদের আস্তানাই হোক, লিউসিপাখুরি লাগোয়া তিন-পুকুরই হোক। আবার চোপড়া ব্লকের সঙ্গে সংযোগকারী মহানন্দী নদীর এলাকাই হোক। বিশেষ করে, ফুলবাড়ি ব্যারাজের পরিযায়ীদের কথা গোটা রাজ্য তো বটেই দেশের বাইরেও পৌঁছেছে। অথচ জায়গাটিকে ঘিরে কোনও সময়ই বিশেষ কিছু ভাবেনি সেচ দফতর বা পর্যটন দফতর। তেমনিই তিন পুকুরের মাছের চাষকে ঘিরে বিনোদন পার্ক তৈরির প্রক্রিয়া প্রায় আট বছর আগে থমকে গিয়েছে।
ইস্টার্ন হিমালয়ান ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশেন কার্যকরী সভাপতি সম্রাট সান্যাল বলেন, “ফুলবাড়ি ব্যারাজের মত শিলিগুড়ি শহর লাগোয়া এত সুন্দর জায়গায় ট্যুরিস্ট স্পট খুব দরকার। তেমনিই, বাকি জায়গাগুলিকে নিয়ে প্রশাসনকে দ্রুত ভাবতে হবে।”
আবার ফাঁসিদেওয়ার নামের সঙ্গে জড়িত সীমান্তবর্তী কয়েকশো বছরের প্রাচীন মন্দিরকে ঘিরে কোনও উদ্যোগ এখনও চোখে পড়েনি বলে অভিযোগ। তেমনিই, বন্দরগছরের ঐতিহাসিক ‘বন্দর’। উত্তরবঙ্গের লেখক গৌরীশঙ্কর ভট্টাচার্য বা অশেষ কুমার দাসেরা বলেন, “ফাঁসিদেওয়ার মত বিশাল ইতিহাস এই অঞ্চলের কোনও শহরের নেই। তা সংরক্ষণ করাটা প্রয়োজন।”
ছবি দু’টি তুলেছেন বিশ্বরূপ বসাক।
কেমন লাগছে আমার শহর?
নিজের শহর নিয়ে আরও কিছু বলার থাকলে আমাদের জানান।
ই-মেল পাঠান district@abp.in-এ। Subject-এ লিখুন
‘আমার শহর-শহরের নাম’।
অথবা চিঠি পাঠান, ‘আমার শহর-শহরের নাম’,
আনন্দবাজার পত্রিকা,
১৩৬/৮৯ চার্চ রোড,
শিলিগুড়ি ৭৩৪০০১
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy