Advertisement
E-Paper

ঐতিহ্য রক্ষায় উদ্যোগের দাবি

বাম আমলে কোচবিহারকে হেরিটেজ শহর ঘোষণার দাবি উঠেছে বারবার। তৃণমূল সরকারের আমলেও সেই দাবি নিয়ে সরব হয়েছেন একাধিক সংগঠন। রাজনৈতিক দলগুলির নেতা-মন্ত্রীরাও চুপিসাড়ে স্বীকার করেন এই শহরকে হেরিটেজ ঘোষণা করা উচিত।

নমিতেশ ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:৪৮
রাজ আমলের এই বাড়ি সংরক্ষণ না করে সরকারি ভাবে ভেঙে ফেলা হয়েছে। —ফাইল চিত্র।

রাজ আমলের এই বাড়ি সংরক্ষণ না করে সরকারি ভাবে ভেঙে ফেলা হয়েছে। —ফাইল চিত্র।

বাম আমলে কোচবিহারকে হেরিটেজ শহর ঘোষণার দাবি উঠেছে বারবার। তৃণমূল সরকারের আমলেও সেই দাবি নিয়ে সরব হয়েছেন একাধিক সংগঠন। রাজনৈতিক দলগুলির নেতা-মন্ত্রীরাও চুপিসাড়ে স্বীকার করেন এই শহরকে হেরিটেজ ঘোষণা করা উচিত।

কোচবিহার হেরিটেজ সোসাইটি দাবি, হেরিটেজ শহর ঘোষণা করা হোক কোচবিহারকে। বাঁচানো হোক শহরের একশো বছরের ইতিহাসকে। কোচবিহার শহরকে হেরিটেজ ঘোষণার দাবি নিয়ে জনমত গড়ে তুলতে রাস্তায় নামবে হেরিটেজ সোসাইটি। শত বছরের ইতিহাসকে রক্ষা করে বাড়িগুলি সংস্কার করে পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়ার দাবিও তাঁরা তুলবে। ইতিমধ্যেই শহরের পুরনো বাড়ি নিয়ে একটি সমীক্ষার কাজ শেষ করেছেন তাঁরা। সেখানে সেই বাড়িগুলির ইতিহাস থেকে শুরু করে বর্তমান অবস্থার কথা তুলে ধরা হয়েছে, যা নিয়ে হতাশার শেষ নেই সোসাইটির।

কোচবিহার হেরিটেজ সোসাইটির সম্পাদক অরূপ মজুমদার বলেন, “কোচবিহার ঐতিহাসিক শহর। কোচবিহারের পুরনো বাড়ি, রাস্তা সেই ইতিহাস বহন করে চলেছে। যে ইতিহাস নিয়ে রাজস্থানের একাধিক শহর এখন বিশ্বের দরবারে পৌঁছে গিয়েছে, সেখানে কোচবিহার পিছিয়ে থাকবে কেন? এই শহরের ইতিহাসকে হাতিয়ার করেই যাতে জেলার অর্থনীতির চিত্র পাল্টে দেওয়া যায়, তা মাথায় রেখে এগোতে হবে।”

শুধু হেরিটেজ সোসাইটি নয়, কোচবিহারের এই আবেগের সঙ্গে একমত উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের প্রাক্তন অধ্যাপক আনন্দগোপাল ঘোষ। বাম আমলে উত্তরবঙ্গের হেরিটেজ বাড়ি কোনগুলি তা নিয়ে সমীক্ষায় নামে রাজ্য হেরিটেজ কমিশন। সেই সময়ে আনন্দবাবুকে ওই কমিটির দায়িত্ব দেওয়া হয়। সে সময়ে তিনি কোচবিহার আসেন। সেই রিপোর্ট জমাও পড়েছিল সরকারের ঘরে। তার পর আর কিছু হয়ে উঠেনি। আনন্দবাবু বলেন, “উত্তরবঙ্গের শহরগুলির মধ্যে কোচবিহারই একমাত্র হেরিটেজ শহর ঘোষণা হতে পারে। রাজ্য হেরিটেজ আইন মেনেই এটা হতে পারে। এই শহরেই একশ বছরের পুরনো অসংখ্য বাড়ি রয়েছে, যেগুলি জাতীয় সৌধ হিসেবে ঘোষণা করা দরকার। তারা নিজেরাই সে কৃতিত্ব দাবি করে। আমরা সে সময় রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের কাছে সুপারিশ করেছিলাম। কাজ হয়নি।” জানা গিয়েছে, ওই রিপোর্ট জমা দেওয়ার পরেই রাজ্যে সরকার পরিবর্তন হয়।

রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের চেয়ারম্যান হন শিল্পী শুভাপ্রসন্ন। সারদা কেলেঙ্কারিতে নাম জড়িয়েছে তাঁর। সিবিআই তাঁকে তলব করেছে। এর পরে হেরিটেজ কমিশন কোনও কাজ করতে সমর্থ হবে কি না তা নিয়েও সংশয় তৈরি হয়েছে। অভিযোগ, শুভাপ্রসন্ন বিষয়টিকে কোনও গুরুত্ব দেননি। লেখক কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “নতুন প্রজন্মের অনেকেই শহরের ইতিহাস জানেন না। হেরিটেজ কমিশন থাকলেও তাঁরা কী করছেন, আমরা স্বাধীনতার পরে এত বছরেও বুঝে উঠতে পারিনি।”

গবেষক নৃপেন পাল বলেন, “ইতিহাসকে রক্ষা করার মানসিকতা কারওর মধ্যে নেই। একটা শহরের ইতিহাস ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে। এটা ক্ষতিকারক। বহু বাড়ি এর মধ্যে ভেঙে ফেলা হয়েছে। অনেক বাড়ি এখন ভগ্নপ্রায়। বাকি বাড়িগুলির অবস্থা সঙ্কটজনক।”

তৃণমূল অবশ্য দাবি করেছে, দীর্ঘ দিন ধরেই কোচবিহারকে হেরিটেজ শহর ঘোষণার দাবি করে আসছে তারা। কেন্দ্রীয় সরকার অনুমতি না দেওয়ায় তা এখনও হয়ে ওঠেনি। জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা পূর্ত দফতরের পরিষদীয় সচিব রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “দ্বিতীয়বার জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে আমরা একটি তালিকা তৈরির কাজে নেমেছি। যেখানে শহরের সমস্ত বাড়ি, পুরনো রাস্তা থেকে শুরু করে মহারাজাদের স্মৃতি বিজড়িত সব কিছুর তালিকা তৈরি করে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পাঠানো হবে। সেই বাড়িগুলি রক্ষার জন্য আর্থিক সুবিধে দেওয়ার দাবিও করব আমরা। হেরিটেজ শহর ঘোষণা হলে আমরা সে সুবিধে এমনিতেই পাব।”

কেমন লাগছে আমার শহর? নিজের শহর নিয়ে আর কিছু বলার
থাকলে ই-মেল পাঠান district@abp.in-এ। subject-এ লিখুন
‘আমার শহর কোচবিহার’। ফেসবুকে প্রতিক্রিয়া জানান:
www.facebook.com/anandabazar.abp বা
চিঠি পাঠান ‘আমার শহর’, উত্তরবঙ্গ বিভাগ, জেলা দফতর,
আনন্দবাজার পত্রিকা, ৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা ৭০০০০১ ঠিকানায়।

amar shohor namitesh ghosh coochbehar heritage reservation
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy