বিবেকানন্দের জীবন সম্পর্কে বক্তব্য রাখতে গিয়ে রাজ্যের ‘নতুন সরকারে’র প্রশংসা করে এবং মন্ত্রীর কাছে ‘কৃতজ্ঞ’ বলে সরকারি অনুষ্ঠানে জানালেন শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার জগমোহন। সোমবার সরকারি অনুষ্ঠানে সিপির এমন বক্তৃতাকে ঘিরে পুলিশ-প্রশাসন তো বটেই, তৃণমূলের অন্দরেও বিতর্ক দানা বেঁধেছে।
তৃণমূলের জেলা স্তরের একাধিক নেতা একান্তে জানিয়েছেন, সিপি ওই ধরনের মন্তব্য সরকারি অনুষ্ঠানে করায় দল ও পুলিশের সম্পর্কে জনমানসে ভুল বার্তা যেতে পারে। তবে পুলিশ ও তৃণমূলের অনেকেই মনে করেন, খোলা মনে ওই ধরনের কথা বলার মধ্যে কোনও অন্যায় নেই।
এ দিন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের উদ্যানে স্বামী বিবেকানন্দের মূর্তি স্থাপিত হয়েছে। সকালে মূর্তি স্থাপনের জন্য দফতরের সামনে মঞ্চ বেঁধে অনুষ্ঠানও হয়েছে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব, রামকৃষ্ণ মিশন নিবেদিতা এডুকেশনাল এন্ড কালচারাল মিশনের সচিব স্বামী নিত্যসত্যানন্দজি ছাড়াও শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার জগ মোহনও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
সেই অনুষ্ঠানেই কমিশনার বলেন, “রাজ্যে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পরে ২-৩ বছরে খুব ভাল উদ্যোগী হয়েছেন। মহাপুরুষদের কর্মকাণ্ড সকলকে জানিয়ে মানুষের সঙ্গে তাঁদের সেতুবন্ধন করছেন।” মঞ্চে বসে থাকা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের কথা উল্লেখ করে পুলিশ কমিশনারের সংযোজন, “এই কাজের জন্য রাজ্য সরকার এবং মাননীয় মন্ত্রীর কাছে আমি কৃতজ্ঞ। ভবিষ্যতেও কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য শুভেচ্ছা জানাই।”
পুলিশ কমিশনারের এই বক্তব্যের পরেই শুরু হয় বির্তক। সরকারি মঞ্চে, পুলিশের উর্দি পড়ে রাজ্য সরকারকে ‘নতুন’ এবং ‘পুরোনো’ এই দুই সময়ের ব্যবধানে চিহ্নিত করতে পুলিশ কমিশনার পারেন কিনা সে প্রশ্ন উঠেছে। বিরোধীদের দাবি, সরকারি আধিকারিক বা কর্মীদের কাছে সরকারের মধ্যে কোনও ভাগ থাকতে পারে না। কয়েক মাস পরেই শিলিগুড়ি পুরসভার ভোট হওয়ার কথা। তার আগে রাজ্য সরকারের দরাজ প্রশংসা এবং মন্ত্রীর কাছে ‘কৃতজ্ঞ’ থাকার কথা প্রকাশ্য মঞ্চে খোদ পুলিশ কমিশনার জানিয়ে দেওয়ায়, পুলিশের নিরপেক্ষতা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে বলে বিরোধীদের দাবি।
বিবেকানন্দ সম্পর্কে নিজের বিশ্লেষণ শেষ করেই তিনি বলেন, “আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা রয়েছে। যেটা আমি বলতে চাই।” তার পরেই রাজ্যে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসা এবং মহাপুরুষদের প্রসঙ্গের অবতারণা করে রাজ্য সরকারের প্রশংসা শুরু করেন কমিশনার।
মন্ত্রী গৌতমবাবু অবশ্য এ প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। পুলিশ কমিশনারের বক্তব্য নিয়ে রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দ্বারস্থ হবেন বলে জানিয়েছেন প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য। তিনি অভিযোগ করে বলেন, “পুলিশ যে নিরপেক্ষ নয় তা কমিশনারের বক্তব্যেই সাফ হয়েছে। বিবেকানন্দের জন্মজয়ন্তী পালনের সরকারি নির্দেশিকায় বিবেকানন্দের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীকেও মহাপুরুষ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছিল।” বিজেপির জেলা সভাপতি রথীন বসুর বলেন, “কমিশনার নিজেকে জননেতা হিসেবে তুলে ধরতে চাইছেন। শাসক দলের কথা শোনাই ওঁর একমাত্র কাজ। ওই মন্তব্য নিয়ে কটাক্ষ করেছেন জেলা কংগ্রেস সভাপতি শঙ্কর মালাকারও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy