Advertisement
২২ মে ২০২৪
সিডব্লুসির কাছে আবেদন অভিভাবকদের

কেরল থেকে সন্তানদের ফেরাতে চায় পরিবার

মালদহের শিশুদের কেরল থেকে উদ্ধার হওয়া-সহ গোটা বিষয়টিতে নজর রাখছে রাজ্য সরকার। বৃহস্পতিবার এ কথা জানান রাজ্যের সমাজকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা। ওই নাবালকদের কেন মালদহ থেকে এত দূরে পড়তে পাঠানো হচ্ছে, সে বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে কেরলের সিআইডি-ও। বিনা টিকিটে ট্রেনে ওঠার জন্য মালদহের ১২৩ জন নাবালককে কেরলের পালাক্কাড় স্টেশনে ধরেছে স্থানীয় রেল পুলিশ। ২৩ মে ওই নাবালকদের ধরার পরে স্থানীয় প্রশাসন আদালতের নির্দেশে তাদের এলাকার একটি হোমে রেখেছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মালদহ ও চাঁচল শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০১৪ ০২:১৩
Share: Save:

মালদহের শিশুদের কেরল থেকে উদ্ধার হওয়া-সহ গোটা বিষয়টিতে নজর রাখছে রাজ্য সরকার। বৃহস্পতিবার এ কথা জানান রাজ্যের সমাজকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা। ওই নাবালকদের কেন মালদহ থেকে এত দূরে পড়তে পাঠানো হচ্ছে, সে বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে কেরলের সিআইডি-ও।

বিনা টিকিটে ট্রেনে ওঠার জন্য মালদহের ১২৩ জন নাবালককে কেরলের পালাক্কাড় স্টেশনে ধরেছে স্থানীয় রেল পুলিশ। ২৩ মে ওই নাবালকদের ধরার পরে স্থানীয় প্রশাসন আদালতের নির্দেশে তাদের এলাকার একটি হোমে রেখেছিল। সেই সময়েই ওই নাবালকদের যে তিন ব্যক্তি মালদহ থেকে কেরলে নিয়ে গিয়েছিলেন, তাঁদের গ্রেফতারও করা হয়। ওই নাবালকদের মধ্যে ৫৮ জন ইতিমধ্যে তাদের বাড়ি ফিরে এসেছে। কিন্তু আরও ৬৫ জন এখনও ওই হোমেই রয়েছে। তাদের অভিভাবকেরা তাঁদের সন্তানদের ফিরিয়ে আনার জন্য বৃহস্পতিবার জেলার চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করেছেন। অভিভাবকেরা জানিয়েছেন, ওই নাবালক কিশোরদের পড়তে পাঠানো হয়েছিল কেরলের একটি বিদ্যালয়ে। একটি ট্রাস্টের অধীন ওই বিদ্যালয়ে নাবালক কিশোরদের বিনে পয়সায় থাকা খাওয়া ও ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করানোর সুযোগ দেওয়া হয়।

এই নাবালক কিশোরদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল মালদহের রতুয়া ১, ২ চাঁচল ১, ২ এবং হরিশ্চন্দ্রপুর ব্লক থেকে। মালদহ জেলা প্রশাসন ইতিমধ্যেই কেরল সরকারের সঙ্গে এই ব্যাপারে যোগাযোগ করেছে। কেরল প্রশাসনও এর মধ্যে রাজ্য সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। রাজ্যের সমাজকল্যাণ সচিব রোশনী সেনের সঙ্গে কেরলের ওই জেলা মাল্লাপুরমের জেলাশাসক যোগাযোগ করেন। রাজ্য সরকারের তরফে সমাজকল্যাণ দফতরের সহকারী অধিকর্তা অনিল সরকারের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল কেরলে যান। ওই নাবালকদের কেন মালদহ থেকে এত দূরে পড়তে পাঠানো হচ্ছে, সে বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে কেরলের সিআইডি-ও। রাজ্যের সমাজকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা বলেন, “আমরা বিষয়টির উপরে সতর্ক নজর রাখছি।”

প্রশাসন সূত্রে খবর, কেরল থেকে সিআইডি-র একটি দলের ২৩ জুন মালদহে আসার কথা। রতুয়া, হরিশ্চন্দ্রপুর ও চাঁচলে গিয়ে কেন সেখান থেকে শিশু-কিশোরদের কেরলের ওই বিদ্যালয়ে পাঠানো হচ্ছে, কারা তাদের নিয়ে যাচ্ছেন, তা খতিয়ে দেখবেন। সেই সঙ্গে অতীতে পড়তে গিয়ে কোনও শিশু-কিশোর নিখোঁজ হয়েছে কি না, সেই ব্যাপারেও খোঁজখবর নেবে কেরল সিআইডি।

তবে জেলার চাইল্ড প্রোটেকশন অফিসার অরুণায়ন শর্মা বলেন, “মালদহ থেকে গত কয়েক বছরে যে সমস্ত শিশু কেরলে পড়তে গিয়েছিল, তাদের কেউ নিখোঁজ হয়েছে বলে অভিযোগ নেই।” জেলা চাইন্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির চেয়ারম্যান হাসান আলি শাহ জানান, সব অভিভাবকদের কেরলে নিয়ে যাওয়া হবে। সিডবলিউসি সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ১২৩টি নাবালকের মধ্যে ৬৫ জন ওই বিদ্যালয়েই পড়ত। গরমের ছুটিতে তারা বাড়িতে এসেছিল। মে-র শেষে ছুটি ফুরোলে ফের কেরলের স্কুলে ফিরছিল। সেই সময়ে আরও ৫৮ নাবালককে তাদের বাড়ির লোকেরা এক সঙ্গে কেরলে পড়তে পাঠিয়ে দেন। ওই সময়ে স্টেশনে বিনা টিকিটে যাওয়ার জন্য তারা ধরা পড়ে।

রতুয়ার মাকিয়া গ্রামের ফরিজুদ্দিন বলেন, “আমার দুই ছেলেকে ইংরেজি শেখানোর জন্য কেরলে পাঠিয়েছিলাম। এখন যা শুনতে পারছি ওখানে ইংরেজি শেখানো হতো না। এমনকি খাবার দাবারও ভালো দিত না। ছেলেকে আর কেরলে রাখতে চাই না। ছেলেকে ফিরিয়ে আনার জন্য চাইল্ড প্রোটেকশন অফিসারের কাছে আবেদন করেছি।” অরুণায়নবাবু নিজেও কেরলে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, “ওই ট্রাস্টের নথিপত্র দেখে একটু সন্দেহ হয়েছে। বাইরে যে সাইনবোর্ড রয়েছে, ভেতরের নথিতে তা নেই। সেই রিপোর্ট জেলা প্রশাসন ও রাজ্য সরকারকে পাঠাচ্ছি।”

তবে চাঁচলের অনেকেই দাবি করেন, কেরলের ভিট্টাথোর এলাকায় গিয়ে বহু অভিভাবক সব দেখে এসেছেন। এলাকার কয়েকজনের সঙ্গে তারা নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে ছেলেদের সেখানে পাঠিয়েছিলেন। চাঁচলের বত্রিশকোলার বাসিন্দা সফিকুল ইসলাম বলেন, “অন্যদের কাছে কেরলের কথা শুনে এ বার ছেলে মিনহাজুলকে পাঠাই।” বাসুদেবপুরের মোশারফ হোসেন বলেন, “আমার এক ছেলে গত এক বছর ধরে ওই প্রতিষ্ঠানে পড়ছে। তাই এবার ছোট ছেলেকেও সেখানে পাঠিয়েছিলাম।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

CWC kerala children malda chanchal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE