বিভিন্ন বেসরকারি অর্থলগ্নি হাতে প্রতারিত গ্রাহক এবং এজেন্টদের তিনদিনের অবস্থান বিক্ষোভ কর্মসূচি নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে শিলিগুড়ির মহানন্দা সেতু লাগোয়া রেল পুলিশের দফতরের সামনে ওই অবস্থান বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। উত্তরবঙ্গ আমানতকারী সুরক্ষা সমিতির নামের সংগঠনটির প্রথম দিনের অবস্থান সকাল থেকে বিকাল ৫টা অবধি চলে। দিনভর হিলকার্ট রোড ও বধর্মান রোডের বিভিন্ন প্রান্তে মাইক লাগিয়ে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সদস্যারা। প্রথম দিনের অবস্থানে জেলা কংগ্রেসের নেতৃত্বও উপস্থিত ছিলেন। আজ, বুধবার বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের অবস্থান মঞ্চে যাওয়ার কথা রয়েছে।
তবে তিনদিনের আন্দোলন বিনা অনুমতিতে শুরু হয়েছে বলে হিলকার্ট রোড, বর্ধমান রোডের ব্যবসায়ীদের একাংশের অভিযোগ, “দিনভর প্রচন্ড জোরে মাইক বাজানো হয়েছে। তার পর রাস্তা পাশে চেয়ার পেতে অনুষ্ঠান করায় অনেক গাড়ি মালিক এবং পথচারীর যাতায়াতের অসুবিধাও হয়েছে।” যে খবর পেয়েছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবও। মন্ত্রী বলেন, “সব কিছুর একটা নিয়ম রয়েছে। তা মেনেই করতে হবে।” তাঁর কটাক্ষ, “শিলিগুড়িতে রামধনু জোটের ঝিলিক দেখা যাচ্ছে। আগে রামঘাটে শহরবাসী দেখেছেন, কী ভাবে কংগ্রেস-সিপিএম-বিজেপি মিলে উন্নয়ন প্রকল্পের বিরোধিতা করেছে। এখন নীতি-আইনের তোয়াক্কা না করে নানা জায়গায় রামধনু জোট দেখা যাবে। শহরবাসী সব বিচার করবেন।”
বিনা অনুমতিতে কর্মসূচির অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেছেন সমিতির সভাপতি অলকেশ চক্রবর্তী। তাঁর দাবি, “বিনা অনুমতির কোনও বিষয়ই নেই। আমরা পুলিশে লিখিত আবেদন করেছিলাম। পুলিশ অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না তা লিখিতভাবে কিছুই দেয়নি। মৌখিকভাবে তাঁদের কোনও সমস্যা নেই বলে জানিয়েছে। তবে আমরা তো আইন শৃঙ্খলার কোনও সমস্যা করছি না। লক্ষ লক্ষ প্রতারিত মানুষদের দুর্দশার অবস্থা মানুষকে জানাচ্ছি।”
তিনি জানান, দুই সপ্তাহ আগে অবস্থানের অনুমতির জন্য পুলিশের কাছে লিখিত আবেদন করা হয়। জায়গাটি পূর্ত বিভাগের আওতায় থাকায় পুলিশ সেই অনুমতি দেখতে চায়। কিন্তু এই ধরণের কোনও অনুমতি দেওয়া হয় না বলে পূর্ত দফতর তাঁদের জানিয়ে দেয়। এই প্রসঙ্গে পূর্ত দফতরের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনয়র (নর্থবেঙ্গল কনস্ট্রাকশন) আরকে শর্মা বলেন, “আমাদের এই ধরণের অনুষ্ঠান বা অবস্থানের জন্য অনুমতি দেওয়ার কোনও বিষয় নেই। আমি বাইরে রয়েছি। দফতরের অফিসারদের সঙ্গে কথা বলছি। আগামীতে কী করা হবে তা দেখা হচ্ছে।”
শহরবাসীদের অনেকেরই অভিযোগ, ব্যস্ত রাস্তায় চড়া শব্দে মাইক বাজানো হলে হাঁটাচলার সমস্যা ছাড়াও গাড়ির হর্ন শোনাও সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। এমন চললে আগামী দিনে যে কেউ মঞ্চ বেঁধে, মাইক বাজিয়ে যেখানে সেখানে সভা, জমায়েত করা শুরু করবে। বাসিন্দাদের মতই জেলা তৃণমূল কংগ্রেস নেতা তথা পুরসভার প্রাক্তন মেয়র পারিষদ কৃষ্ণ পাল বলেন, “সভা, সমিতি তো পুরো অনুমতি নিয়ে করার কথাই। এক্ষেত্রে তা হয়নি বলে শুনছি। আর কে কী উদ্দেশ্যে এসব করছেন তাও দেখা দরকার। আর তা করতে গিয়ে তাঁরা সাধারণ মানুষের হয়রানি বাড়াচ্ছেন।”
প্রায় ৭ ঘন্টা শহরের ব্যস্ততম রাস্তায় অবস্থানও হলে তা জানেন না বলে দাবি করেছেন শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার জগমোহন। আর ডিসি (ট্রাফিক) শ্যাম সিংহ জানান, ট্রাফিকের কোনও সমস্যা হলে আমরা দেখব। আইন শৃঙ্খলা হলে তা স্থানীয় থানার দায়িত্ব। এর থেকে বেশি কিছু বলতে পারব না।
সমিতির সদস্যদের অবশ্য দাবি, পুলিশের কাছে হাসমিচকে অবস্থান করার আবেদন করা হয়েছিল। তখনই পুলিশের একাংশ বিধান রোড বা রেল পুলিশের একটি জায়গা দেখিয়ে দেয়। সেইভাবে অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করা হয়েছে। তিনদিন কর্মসূচি চলবে। এদিন মঞ্চ থেকে সমস্ত প্রতারণার দায়ে অভিযুক্ত অর্থলগ্নি সংস্থার মালিকদের গ্রেফতার, জাতীয় অর্থনীতি বিপর্যয় ঘোষণা এবং সারদা ছাড়া অন্য সব সংস্থার তদন্ত দ্রুত সিবিআই-কে করার দাবি তোলা হয়েছে।
এদিন দুপুরে অবস্থান মঞ্চে যান কংগ্রেস নেত্রী তথা প্রাক্তন মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত ছাড়াও জেলা কংগ্রেস নেতা কুন্তল গোস্বামী এবং বিকাশ সরকার। প্রতারিত আমনতকারীদের পাশে থাকার কথাও তাঁরা মঞ্চ থেকে ঘোষণা করেন। তবে অবস্থানের অনুমতি না থাকার অভিযোগ প্রসঙ্গে আলাদা ভাবে হলেও তিন জনের একই বক্তব্য। তা হল, “সব দলকে ডাকা হয়েছে। আমাদেরও ডাকা হয়েছিল। অনুমতি বা প্রয়োজনীয় বিষয়গুলি তো সমিতির বিষয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy