সাতসকালে শিলিগুড়ি শহরে এক বধূকে গণধর্ষণের অভিযোগ ঘিরে রহস্য দানা বাঁধছে।
ওই বধূর আরও অভিযোগ, শনিবার সকালের এই ঘটনার পরে তিন অভিযুক্তের একজন মোবাইলে ওই বধূর নগ্ন ছবি তুলে তা ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। এমনকী, কাউকে জানালে বধূর দাদাকে মেরে ফেলার শাসানিও দেওয়া হয়। তবে ওই এলাকা, শহরের চার নম্বর ওয়ার্ডের গোয়ালাপট্টির বাসিন্দাদের একাংশ জানান, শুক্রবার রাতে ওই বধূর এক দাদার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ একটি বহুজাতিক সংস্থার নকল রাসায়নিক তৈরির সরঞ্জাম বাজেয়াপ্ত করে। সেই সময়ে ওই তিন যুবক পুলিশকে নানাভাবে সাহায্য করেছিলেন। ওই ঘটনার জেরেই তিনি বোনকে দিয়ে মিথ্যে অভিযোগ করিয়ে তিন জনকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছেন। শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার জগমোহন বলেন, “গণধর্ষণের মামলা রুজু করা হয়েছে। এক অভিযুক্ত ছোটু যাদবকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি দু’জন, বিনোদ পাসোয়ান ও মনোজ রায়ের খোঁজে তল্লাশি চলছে। দু’পক্ষের অভিযোগ, দাবি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” অভিযোগকারিণী বর্তমানে শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর বত্রিশের ওই মহিলার শ্বশুরবাড়ি আলিপুরদুয়ারে। শিলিগুড়িতে বাপের বাড়ি। তাঁর দাদার তিনদিন আগে একটি মেয়ে হওয়ার খবর পেয়ে শুক্রবার তিনি শিলিগুড়ি পৌঁছন। এ দিন সকাল ন’টা নাগাদ বাড়ি থেকে চা-জলখাবার নিয়ে দাদার স্ত্রী’কে দেখতে নার্সিংহোমে রওনা হন তিনি। ওই বধূ জানান, পাড়া থেকে বের হওয়ার সময় এলাকারই বিনোদ, ছোটু ও মনোজ তাঁকে দেখে কুশল জিজ্ঞাসা করতে এগিয়ে যায়। তাঁর অভিযোগ, কথার ফাঁকেই জলীয় পদার্থ ছিটিয়ে দেওয়া হয় তাঁর নাকে। এর পরেই জ্ঞান হারান তিনি। জ্ঞান ফিরলে তিনি দেখেন, মনোজের বাড়ির খড়ের গাদার মধ্যে শুয়ে রয়েছেন। ওই বাড়িতে খড় কাটার যন্ত্র রয়েছে। এরপরেই তাঁঁর ছবি তুলে কাউকে না জানানোর হুমকি দেওয়া শুরু হয়।
তবে ওই বধূর বয়ানে অসঙ্গতি রয়েছে বলে দাবি অভিযুক্তদের পরিবারের লোকেদের। তাঁদের দাবি, গোটা ঘটনা ভিত্তিহীন বলে দাবি করা হয়েছে। মনোজের বাড়ির লোকজনের অভিযোগ, কিছু দিন আগে অভিযোগকারিণীর দাদা ও বাবার মধ্যে ঝগড়া হয়। সেই সময়ে ওই বৃদ্ধকে তাঁর ছেলে মারধর করলে ওই তিন যুবক গিয়ে বাধা দেন। ওই বৃদ্ধকে হাসপাতালে নিয়ে যায় তিন যুবক। পরে তাঁরা হামলাকারী যুবককে সতর্ক করে দেয়। শুক্রবার রাতে ওই যুবকের বাড়ি থেকে নকল রাসায়নিক তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধারে ওই তিন জন পুলিশকে সাহায্য করাতেই তিনি বোনকে দিয়ে মিথ্যে অভিযোগ করিয়ে তিন জনকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছেন বলে অভিযুক্তদের বাড়ির লোকজন পুলিশকে জানিয়েছেন।
শিলিগুড়ি থানার পুলিশ অফিসারদের কয়েকজন জানান, ওই বধূটি প্রথমে থানায় গিয়ে ডিউটি অফিসারের কাছে তাঁকে মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। তখন তিনি লিখতে পারবেন কি না সেটা পুলিশ জানতে চায়। এর পরে তাঁকে লিখে আনতে বলা হয়। ওই পুলিশ অফিসারদের দাবি, দ্বিতীয় দফায় আইনজীবীকে নিয়ে থানায় ঢুকে গণধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করেন ওই মহিলা। পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যায়। হাসপাতাল সূত্রের খবর, জরুরি বিভাগে বধূটি তাঁকে মারধর করা হয়েছে বললেও গণধর্ষণের বিষয়টি উল্লেখ করেননি। হাসপাতালের এক চিকিৎসক জানান, বধূর কাছে মারধরের অভিযোগ পেয়ে পরীক্ষা করা হলে দেহের বাইরে কোনও আঘাতের চিহ্ন মেলেনি। তবে প্রথমে ওই বধূ কেন গণধর্ষণের অভিযোগ করেননি তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অভিযুক্তের পরিজনেরা। এই ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে বধূর দাদা দাবি করেন, “বোন ঘাবড়ে গিয়েছিল বলে প্রথমে গণধর্ষণের কথা বলেনি। পরে আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে ওই অভিযোগও সে করেছে।”
এ দিন দুপুরে হাসপাতালে ওই বধূ বলেন, “ঘটনার কথা কাউকে জানাব না বলতে ওরা ছেড়ে দেয়। কোনওরকমে বাড়ি ফিরে দাদাকে নিয়ে থানায় গেলে পুলিশ প্রথমে তা বানানো গল্প বলে উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। সেখানে তখন একজন তৃণমূল নেতা বসেছিলেন। তিনিও পুলিশের কাছে ঘটনাটি নিয়ে নানা কথা বলছিলেন। তখন আমরা থানা থেকে চলে যাই। পরে একজন আইনজীবীর মাধ্যমে থানায় গেলে অভিযোগ নিয়ে আমাকে হাসপাতালে পাঠানো হয়।” কমিশনার বলেন, “থানায় অভিযোগ নিয়ে গেলে ফেরানোর কথা নয়। যখন এরকম অভিযোগ উঠছে নিশ্চয়ই খোঁজ নেব। অভিযোগকারিণীর পরিবারের লোকজনদের দাবি, তাঁরা তৃণমূল সমর্থক। পক্ষান্তরে, অভিযুক্তেরাও তৃণমূল সমর্থক। তবে তৃণমূলের এক জেলা কমিটির নেতা অভিযুক্তদের হয়ে থানায় যাওয়ায় পুলিশ অভিযোগ নিতে গড়িমসি করছিল বলে বধূটির অভিযোগ। পুলিশ কমিশনার বলেন, “এটা ঠিক নয়। পুলিশের উপরে কোনও চাপ কেউ দেননি।”
তবে তৃণমূলের জেলা কমিটির নেতা মিলন দত্ত ওই অভিযোগের ব্যাপারে খোঁজখবর নিতে থানায় যাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। মিলনবাবুর দাবি, “ঠিক কী ঘটেছে তা জানতে আমি থানায় গিয়েছিলাম। অভিযোগের সত্যতা খতিয়ে দেখে পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলেছি।” ৪ নম্বর ওয়ার্ড কমিটির তৃণমূল সভাপতি সোমা দাস দাবি করেছেন, ওই অভিযুক্তরা নির্দোষ। তাঁর দাবি, “ওই ছেলেদের ফাঁসানো হয়েছে। অভিযোগকাারিণীর ভাই বেআইনি ব্যবসা করত। তাতে বাধা দিয়েছিল অভিযুক্তেরা। সেই আক্রোশ থেকেই এই অভিযোগ।” এর পিছনে কংগ্রেসেরও হাত থাকতে পারে বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন তিনি। এদিন সন্ধ্যায় ওয়াডের্র বেশ কিছু বাসিন্দা অভিযুক্তদের নির্দোষ দাবি করে শিলিগুড়ি থানায় স্মারকলিপি দেন। এলাকার সদ্য প্রাক্তন কাউন্সিলর কংগ্রেসের স্বপন চন্দ বলেন, “দুই পক্ষই তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত। তৃণমূলের নেতাদের একাংশের মদতে উভয় পক্ষ বাড়াবাড়ি করছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy