নিম্নমানের কাঁচা চা পাতা বেশি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলল বটলিফ কারখানাগুলির মালিকদের একাংশ। মঙ্গলবার শিলিগুড়িতে তাঁদের সংগঠন নর্থবেঙ্গল টি প্রডিউসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের তরফে সাংবাদিক বৈঠক করে ওই অভিযোগ জানানো হয়। তাঁরা জানান, ইতিমধ্যেই শিলিগুড়িতে টি বোর্ডের ডেপুটি ডাইরেক্টরের দফতরে এই নিয়ে অভিযোগ জানিয়েছেন। টি বোর্ডের তরফে ঠিক হয়েছে বাগানগুলি থেকে যে পাতা সরবরাহ করা হবে তার মধ্যে ৬৫ শতাংশ গুণগত মানের পাতা থাকবে। সেই হিসাবে গত মাসে টি বোর্ডের তরফে দাম ঠিক করে দেওয়ায় প্রতি কেজি চা পাতার দাম ১২ থেকে ১৪ টাকা দিতে হচ্ছে। অথচ নিলামে উৎপন্ন চায়ের দাম মিলছে না। উৎপন্ন চায়ের দাম কেজি প্রতি ১২০ টাকা আশা করা হলেও প্রতি কেজি চা কখনও ৮৩ টাকা কখনও ৯০, কখনও ৭২ টাকাতেও বিক্রি হচ্ছে। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে ফ্যাক্টরি বন্ধ করে দিতে হবে বলে তারা দাবি করেন। সংগঠনের তরফে জানানো হয়, সমস্যার কথা জানিয়ে সরবরাহ করা কাঁচা চা পাতার গুণগত মান যেন ঠিক থাকে টি বোর্ডকে তা দেখতে বলা হয়েছিল । ১০ দিন সময় দেওয়া হয়েছিল। সেই মতো এ দিনই সময় সীমা শেষ হচ্ছে। ৬৫ শতাংশ গুণগত মানের পাতা না মিললে আজ, বুধবার থেকে তাঁরা কাঁচা পাতা কেনা বন্ধ করে দেবেন বলে জানিয়েছেন। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে আলোচনার মধ্য দিয়ে সমস্যা মেটাতে আজ, বুধবার বটলিফ ফ্যাক্টরি এবং ক্ষুদ্র চা বাগান মালিকদের বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক ডেকেছেন টি বোর্ডের উত্তরবঙ্গের দায়িত্বে থাকা ডেপুটি ডিরেক্টর। শিলিগুড়ির সেবক রোডের দফতরে বৈঠক হবে। ডেপুটি ডিরেক্টর চন্দ্র শেখর মিত্র বলেন, “উভয়পক্ষকে নিয়ে বৈঠক ডাকা হয়েছে। আশা করি উভয়পক্ষকে নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে মেটানো যাবে।”
ক্ষুদ্র চা চাষিদের বিভিন্ন সংগঠনের তরফে জানানো হয়েছে বটলিফ ফ্যাক্টরির মালিকদের দাবি ঠিক নয়। কেন না টি বোর্ডের তরফে ৬৫ শতাংশ গুণগত পাতা সরবরাহ করার ক্ষেত্রে যে দাম ঠিক করে দেওয়া হয়েছে অধিকাংশ বটলিফ ফ্যাক্টরিই তা দিচ্ছে না। গত ১৫ দিন ধরে ৭ থেকে ১০ টাকা কেজি দরে পাতা বিক্রি হয়েছে বলে দাবি করেন জলপাইগুড়ি ক্ষুদ্র চা চাষি সমিতি-সহ অন্যান্য সংগঠনগুলির একাংশ। তবে তারা এটাও মেনে নিয়েছেন টি বোর্ডের তরফে ৬৫ শতাংশ গুণগত মানের পাতা সরবরাহ করার যে নিয়ম করা হয়েছে বাস্তবে তা সম্ভব নয়। সংগঠনের সম্পাদক বিজয় গোপাল চক্রবর্তী বলেন, “মালিকপক্ষ ঠিক কথা বলছেন না। জলপাইগুড়িতে টি বোর্ডের তরফে কাঁচা পাতার দর এখন কেজি প্রতি ১৪ টাকা ৯৬ পয়সা চলছে। অথচ চা বাগানগুলিকে অনেক কম দামে পাতা সরবরাহ করতে হচ্ছে। কাঁচা পাতা রাখা যাবে না। তাই বটলিফ কারখানাগুলি ইচ্ছে মত চাপ দিয়ে কম দামে পাতা কিনতে চায়। তাঁরা চাইছে ৫ টাকা দরে পাতা কিনতে। এমন হলে ক্ষুদ্র চা চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।”
নর্থবেঙ্গল টি প্রডিউসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি প্রবীর শীল জানান, নিয়ম তৈরি করলেও কাঁচা চা পাতার গুণগত মান ঠিক রাখতে টি বোর্ডের নজরদারি নেই। তাতে সমস্যা হচ্ছে। নিম্নমানের পাতাও বটলিফ কারখানাগুলিকে বেশি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে। অথচ উৎপন্ন চায়ের দাম না মেলায় লোকসানে পড়ছেন বটলিফ কারখানার মালিকেরা। প্রবীরবাবু বলেন, “অসমে একই সমস্যা হয়েছিল। গুণগত মানের পাতা না মেলা পর্যন্ত সরবরাহকারী এবং বটলিফ কারখানার মালিকপক্ষ আলোচনা করে স্থানীয়স্তরে পাতার দাম ঠিক করবে বলে আসমে ঠিক হয়েছে। এখানে ক্ষুদ্র চা চাষিদের নিয়ে বৈঠক করে সমস্যা মেটাতে বারবার বলা হচ্ছে। অথচ টি বোর্ডের তরফে তা করা হচ্ছে না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy