Advertisement
১৮ মে ২০২৪

চা বাগানে বিনা চিকিত্‌সায় মৃত্যু

রায়পুরের পরে ডুয়ার্সের আর একটি বন্ধ চা বাগান রেডব্যাঙ্কেও বিনা চিকিত্‌সায় ও অপুষ্টিতে এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠল। বুধবার রেডব্যাঙ্ক চা বাগানের শ্রমিক শেখর নাগারচির (৩২) মৃত্যু হয়। মাসখানেক আগে পেটে ব্যথা হলে বীরপাড়ায় হাসপাতালে যান তিনি। তাঁর পরিবারের কাছ থেকে জানা গিয়েছে, সেখানে চিকিত্‌সকেরা তাঁকে জানান তাঁর ‘জন্ডিস’ হয়েছে। ক’দিন হাসপাতালের ওষুধও খান।

নিলয় দাস
বানারহাট শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৪ ০৩:১৫
Share: Save:

রায়পুরের পরে ডুয়ার্সের আর একটি বন্ধ চা বাগান রেডব্যাঙ্কেও বিনা চিকিত্‌সায় ও অপুষ্টিতে এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠল।

বুধবার রেডব্যাঙ্ক চা বাগানের শ্রমিক শেখর নাগারচির (৩২) মৃত্যু হয়। মাসখানেক আগে পেটে ব্যথা হলে বীরপাড়ায় হাসপাতালে যান তিনি। তাঁর পরিবারের কাছ থেকে জানা গিয়েছে, সেখানে চিকিত্‌সকেরা তাঁকে জানান তাঁর ‘জন্ডিস’ হয়েছে। ক’দিন হাসপাতালের ওষুধও খান। কিন্তু রবিবার থেকে তিনি শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন। পরিবারের দাবি, টাকার অভাবে শেখরকে আর চিকিত্‌সকের কাছে তাঁরা নিয়ে যেতে পারেননি। যদিও বন্ধ বাগানে সপ্তাহে তিন দিন করে সরকারি স্বাস্থ্য শিবির হয়। স্বাস্থ্যকর্মীরাও শ্রমিকদের বাড়িতে গিয়ে কেউ অসুস্থ কি না, খোঁজ করেন। কিন্তু শেখরের বাড়িতে কোনও স্বাস্থ্যকর্মী যাননি বলে তাঁর বাড়ির লোকজনের দাবি। শেখরের পরিবারের সদস্য বলতে বৃদ্ধা মা এবং তিন বছরের মেয়ে। সে কারণে রবিবার থেকে তিন দিন পেটের ব্যথায় কাতরালেও, শেখরকে স্বাস্থ্য শিবিরে কেউ নিয়ে যেতে পারেননি। এ নিয়ে ৯ মাসে ওই বাগানে অর্ধাহার, অপুষ্টি, বিনা চিকিত্‌সায় ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে শ্রমিকদের অভিযোগ। একই সময়ে বন্ধ হওয়া রেডব্যাঙ্ক গোষ্ঠীর অন্য দু’টি বাগানে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে শ্রমিকেরা জানিয়েছেন। এদিন, শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনার খবর পেয়ে জলপাইগুড়ির অতিরিক্ত জেলাশাসক এবং ধূপগুড়ির বিডিও সৌমেন্দ্র দূতরাজ বাগানে যান। বাগানের শ্রমিকেরা সরকারি সাহায্য পাচ্ছেন কি না, তা তাঁরা জানতে চান। যদিও, শ্রমিকদের অনেকের প্রশ্ন, শুধু কারও মৃত্যু হলেই প্রশাসনের আধিকারিকরা বাগানে কেন আসবেন? বাগানে কেউ অসুস্থ রয়েছেন কি না, সে ব্যাপারে কেন নজরদারি থাকবে না?

প্রশাসনের তরফে অবশ্য বিনা চিকিত্‌সায় শেখরের মৃত্যু হয়েছে এই অভিযোগ মানতে চাওয়া হয়নি। জলপাইগুড়ির সদর মহকুমা শাসক সীমা হালদার বলেন “জন্ডিসে আক্রান্ত হয়ে এক শ্রমিকের মৃত্যুর কথা শুনেছি। বাগানে তো তিন দিন করে চিকিত্‌সা শিবির হচ্ছে।” সেই সঙ্গে অবশ্য আশ্বাস দিয়ে মহকুমা শাসক বলেন, “তবে আদিবাসী শ্রমিক পরিবারগুলিকে আর্থিক ভাবে সরকারি অনুদান দেওয়ার জন্য কয়েকটি প্রকল্পের প্রস্তাব রাখা হবে।”

বাগান সূত্রে জানা গিয়েছে, আট মাস আগে শেখরের স্ত্রী বাড়ি ছেড়ে চলে যান। বৃদ্ধা মা আখজি এবং মেয়ে শালিনীকে নিয়ে তিন জনের সংসার চালাতে বাগান বন্ধ হওয়ার পরে শেখর পাথর ভাঙার কাজ শুরু করে। ভুটানের পাথরের খাদানেও কাজ করতে গিয়েছিলেন শেখর। অনেক সময় বুনো কচু, শাকপাতা সেদ্ধ খেয়েও থাকতে হয়েছে বলে জানান সত্তর ছুঁইছুঁই আখজি জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, রেশনের চাল গম কিনতে মাসে ১০ থেকে ২০ টাকা লাগে। কিন্তু ছেলে অসুস্থ হয়ে শুয়ে থাকায় রোজগার ছিল না। তিনি বলেন, “ভরপেট খাওয়াও জুুটছে না, ওষুধ কেনারও টাকা নেই। ছেলেটাকে চোখের সামনে মরতে দেখলাম।” কিন্তু স্বাস্থ্য শিবিরে কেন নিয়ে যাননি? আখজির জবাব, “স্বাস্থ্য শিবিরে কার্যত কোনও চিকিত্‌সাই হয় না। তা ছাড়া, ওঁরা হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলতেন। সে টাকা আমাদের নেই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE