সোনালি চা বাগানের ঘটনাকে কেন্দ্র করে মাওবাদী সংগঠন অভিনন্দন জানানোয় নড়েচরে বসল শ্রম দফতর। বুধবারই দফতরের তরফে আগামী ৮ ডিসেম্বর চা শ্রমিক মজুরি নিয়ে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে।
শ্রম দফতরের যুগ্ম শ্রম কমিশনার মহম্মদ রিজওয়ান বলেন, “আগামী ৮ ডিসেম্বর শিলিগুড়ির উত্তরকন্যায় ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ডাকা হয়েছে। বৈঠকে শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটকও উপস্থিত থাকতে পারেন। দ্রুত মালিকপক্ষ এবং শ্রমিক সংগঠনগুলিকে লিখিত আকারে বৈঠকের কথা জানানোর প্রক্রিয়াও শুরু হবে।”
ঘটনাচক্রে এ দিনই শাসক দলের শ্রমিক সংগঠনের তরফেও চা শ্রমিকদের ‘ক্ষোভের’ কথা উল্লেখ্য করেছিলেন। বুধবার দুর্গাপুরে একটি আলোচনাসভায় আইএনটিটিইউসি নেতা শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় চা বাগানের মালিক খুনের ঘটনার প্রসঙ্গে বলেন, “দিনের পর দিন ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হতে হতে ক্ষোভ তৈরি হয়। হঠাত্ ঘটে যাওয়া একটি ঘটনার পিছনে কেউ মদত দেয় না। চা বাগানের মালিকদের আরও বেশি সতর্ক থাকতে হবে। আমাদের তরফ থেকেও শ্রমিকদের আরও দায়িত্বশীল করে তোলার চেষ্টা করছি। পাশাপাশি, শ্রমিক সংগঠনের সঠিক নেতৃত্ব তৈরি করার চেষ্টা হচ্ছে, যাতে এই ধরনের ঘটনা এড়ানো যায়। ন্যায্য দাবি নিয়ে আন্দোলন হবে, তবে অন্যায্য দাবি চলবে না।”
চা শ্রমিক মজুরি বৃদ্ধি নিয়ে শেষ বৈঠক হয়েছে গত ৮ অগস্ট। সেই বৈঠকও ব্যর্থ হওয়ার পরে ন্যূনতম মজুরি প্রদানের দাবিতে চলতি মাসে চা শিল্প এবং সাধারণ ধর্মঘটও করেন শ্রমিক সংগঠনগুলি। কিন্তু এরপরেও ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ডাকতে শ্রম দফতর উদ্যোগী হয়নি বলে অভিযোগ। গত ২২ নভেম্বর ডুয়ার্সের সোনালি চা বাগানে মালিক খুনের পর পরিস্থিতি পাল্টাতে শুরু করে বলে একাংশ শ্রমিক সংগঠন দাবি করেছে। এই ঘটনায় গত মঙ্গলবার থেকে মাওবাদীরা শ্রমিকদের লড়াকু অভিনন্দন জানিয়েছেন বলে খবর পেয়ে উদ্বেগ তৈরি হয় সরকারি স্তরে। সূত্রের খবর, এরপরই দ্রুত শ্রমিক হতাশা কাটাতে চা বাগানে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে ত্রিপাক্ষিকের তারিখ ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নেয় শ্রম দফতর।
ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের খবরে খুশি শ্রমিক সংগঠনগুলিও। আদিবাসী বিকাশ পরিষদের রাজ্য সম্পাদক তেজকুমার টোপ্পোর কথায়, “সে দিনই যাতে চুক্তি হয়ে যায় তার জন্য রাজ্য সরকারকে দায়িত্বও নিতে হবে। না হলে চা বাগানে শ্রমিক হতাশা আরও বাড়বে।” ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে বসার আগে নিজেদের মধ্যে আরও একবার আলোচনা করতে আগামী শুক্রবার ডুয়ার্সের চালসায় বৈঠক করবে ২৩টি চা শ্রমিক সংগঠনের যৌথ মঞ্চ। সংগঠনের আহ্বায়ক জিয়াউল আলম বলেন, “আমদের দাবি থেকে সরার কোন প্রশ্নই নেই। সরকার এবং মালিকপক্ষের সদিচ্ছা থাকলে তবেই ফলপ্রসু বৈঠক হবে।”
বৈঠকের ঘোষনায় খুশি মালিকপক্ষও। ইন্ডিয়ান টি প্লানটেশন অ্যাসোসিয়েশন এর ডুয়ার্স শাখার চেয়ারম্যান রজত দেব বলেন, “আমরা চাই শ্রমিক মালিক সর্বসম্মত ক্রমে মজুরি চুক্তি সম্পাদিত হয়ে যাক। চা বাগানের সার্বিক পরিবেশ রক্ষার্থেও ফলপ্রসু বৈঠক হওয়া প্রয়োজন।” চা বাগান মালিকপক্ষ সংগঠনগুলির সম্মিলিত মঞ্চ কনসালটেটিভ কমিটি অব প্লান্টার্স অ্যাসোসিয়েশন এর পক্ষে সেক্রেটারি জেনারেল মনোজিত দাশগুপ্ত বলেন, “বৈঠক যাতে ফলপ্রসূ হয় তারই আশা করছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy