ছিটমহলের বাসিন্দাদের অধিকারের দাবিতে আন্দোলন গড়ে উঠেছে একের পর এক। যা নিয়ে জেলা, রাজ্য, দেশ ছাপিয়ে বিদেশেও গড়ে উঠেছে জনমত। তা ইতিমধ্যে নিয়ে আশার আলো দেখছেন দুই দেশের ছিটমহলের মানুষ। এই সময় ছিটমহলের আন্দোলনের ইতিহাস ও ছিটের মানুষের দুর্দশার কাহিনী জানাতে সংগ্রহশালা গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় কমিটি।
সংগ্রহশালার সঙ্গে থাকবে অতিথি নিবাসও। ছিটমহল নিয়ে আগ্রহীদের আকর্ষণ বাড়াতে ওই উদ্যোগ বলে কমিটির দাবি।
কমিটি সূত্রের খবর, ইতিমধ্যে জমি নির্বাচনের কাজ শেষ হয়েছে। পোয়াতেরকুঠি এবং বাত্রীগছ ছিটমহলে ওই সংগ্রহশালা ও অতিথি নিবাস গড়ে তোলা হবে। সাড়ে চার লক্ষ টাকা বাজেট ধরা হয়েছে। কমিটির নিজস্ব তহবিল থেকেই ওই টাকা খরচ করা হবে।
কমিটির সহকারি সম্পাদক দীপ্তিমান সেনগুপ্ত বলেন, “ছিটমহল নিয়ে আগ্রহী এমন বহু মানুষ বাইরে থেকে আসেন। তাঁরা নানা তথ্য জানতে চান। আর তাঁদেরকে কোচবিহার শহর অথবা দিনহাটা শহর থেকে ছিটমহলে যাতায়াত করতে হয়। যা সময়সাপেক্ষ। সেদিক থেকেই সংগ্রহশালা এবং অতিথি নিবাস গড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
দীপ্তিমানবাবু জানান, গ্রামের এক টুকরো জমির উপরে ওই সংগ্রশালা ও অতিথি নিবাস গড়ে তোলা হবে। সেখানে দুটি ঘর করে চারজনের একসঙ্গে থাকার ব্যবস্থা করা হবে। সোলার লাইট, ইন্টারনেট পরিষেবা, রান্না করে খাওয়ার সরঞ্জাম সেখানে তৈরি থাকবে। একজন কেয়ারটেকারও থাকবেন। আর সংগ্রহশালায় থাকবে ছিটমহল নিয়ে এ যাবত সমস্ত ঘটনার দলিল। ছিটমহলের উপরে লেখা বইপত্র, গবেষণার কাগজপত্র, ম্যাপ, দৈনিক সংবাদপত্রের কাটিং, ডকুমেন্টারি ফিল্মের সিডি, তিনবিঘা সহ বিভিন্ন আন্দোলনের ভিডিও, ছিটমহলের জনগণনার রিপোর্ট, কমিটির পক্ষ থেকে প্রণব মুখোপাধ্যায়ক ও লালকৃষ্ণ আডবাণীকে দেওয়া স্মারকলিপিও থাকবে।
কমিটির সদস্যরা জানান, সংগ্রহশালায় জেহাদের জন্ম সার্টিফিকেটও রাখা হবে। জেহাদ বাংলাদেশি ছিটমহল মশালডাঙার প্রথম সন্তান। যাঁর জন্ম হয়েছিল দিনহাটা মহকুমা হাসপাতালে। জেহাদকে নিয়ে মিছিল করে ছিটমহলে ফিরেছিলেন বাসিন্দারা। এমনই নানা ঘটনার তথ্য সমৃদ্ধ সংগ্রহশালা গড়া হচ্ছে। দীপ্তমানবাবু জানান, সীমান্ত গ্রামের পরিবেশ, বিএসএফের পাহারা সব দেখতে পারবেন আগ্রহীরা। পর্যটকেরাও আসতে পারবেন। চাহিদার কথা মাথায় রেখেই আমরা এই পরিকল্পনা নিয়েছি। সংগ্রশালার নাম হবে ‘স্মারকী’।
ছিটমহল কী, তা নিয়ে অনেকের মনেই প্রশ্ন থাকে। আদতে দেশের এমন একটি অংশ ছিটমহল, যা অন্য দেশের সীমানার মধ্যে রয়েছে। যা স্বাভাবিকভাবেই কোনও দেশের শাসনই পায় না। ভারত ও বাংলাদেশ মিলিয়ে ছিটমহলের সংখ্যা ১৬২। এর মধ্যে বাংলাদেশ ভূখন্ড ঘেরা ভারতীয় ছিটমহলের সংখ্যা রয়েছে ১১১টি। ভারতীয় ভূখণ্ড ঘেরা বাংলাদেশি ছিটমহলের সংখ্যা ৫১টি। ভারতীয় ছিটমহলে ৩৭ হাজারের কিছু বেশি মানুষ বসবাস করেন। বাংলাদেশি ছিটমহলে ১৪ হাজারের মত মানুষ আছেন। ছিটমহলের বাসিন্দারা জানান, কষ্টের মধ্যে দিন কাটাতে হয়। কোনও অধিকার নেই। না আছে কোনও আইনের শাসন। নেই ভোটার কার্ড, পড়াশোনার সুযোগ ও চিকিসার ব্যবস্থা নেই। এই সমস্ত সমস্যা মেটাতে ছিটমহল বিনিময়ের দাবিতে দীর্ঘদিন দিন ধরে আন্দোলনে সামিল হয়েছেন বহু মানুষ। বর্তমানে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হয়েছেন। বাংলাদেশ সরকারও সদর্থক মনোভাব দেখাচ্ছে।
তথ্যচিত্র নির্মাতা শর্মিষ্ঠা বিশ্বাস ছিটমহল নিয়ে কাজ করছেন। তিনি বলেন, “তথ্যচিত্র নিয়ে কাজ করতে গিয়ে আমাদের নানা অভিজ্ঞতা হয়েছে। সংগ্রহশালা রাখাটা খুবই জরুরি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy