Advertisement
০৬ মে ২০২৪

জাল টোম্যাটো সসের কারবার শহরে, সতর্কতা জারি প্রশাসনের

টোম্যাটো সস খাওয়ার আগে সাবধান থাকুন। অন্তত, পুলিশ-প্রশাসন ও রেস্তোরাঁ মালিকদের একাংশ এমনই সতর্ক-বার্তা দিচ্ছেন। পুলিশ সূত্রের খবর, শিলিগুড়ি শহর ও লাগোয় এলাকায় জাল টোম্যাটো সসের কারবার ফেঁদে বসেছে একটি চক্র। শহর লাগোয়া কয়েকটি এলাকায় ওই জাল সস ‘প্যাকেজিং’ হচ্ছে। তা বোতলবন্দি করে ছড়িয়ে পড়ছে শহরের আনাচে কানাচে, দোকানে, রেস্তোরাঁয়। তা নিয়ে পুলিশ প্রশাসনের তরফেও তত্‌পরতা শুরু হয়েছে। শীঘ্রই অভিযান চালানো হবে বলে প্রশসানিক সূত্রের খবর।

সংগ্রাম সিংহ রায়
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:২৬
Share: Save:

টোম্যাটো সস খাওয়ার আগে সাবধান থাকুন। অন্তত, পুলিশ-প্রশাসন ও রেস্তোরাঁ মালিকদের একাংশ এমনই সতর্ক-বার্তা দিচ্ছেন।

পুলিশ সূত্রের খবর, শিলিগুড়ি শহর ও লাগোয় এলাকায় জাল টোম্যাটো সসের কারবার ফেঁদে বসেছে একটি চক্র। শহর লাগোয়া কয়েকটি এলাকায় ওই জাল সস ‘প্যাকেজিং’ হচ্ছে। তা বোতলবন্দি করে ছড়িয়ে পড়ছে শহরের আনাচে কানাচে, দোকানে, রেস্তোরাঁয়। তা নিয়ে পুলিশ প্রশাসনের তরফেও তত্‌পরতা শুরু হয়েছে। শীঘ্রই অভিযান চালানো হবে বলে প্রশসানিক সূত্রের খবর।

শিলিগুড়ির এডিসি ভোলানাথ পাণ্ডে বলেন, “খাদ্যে জালিয়াতি করাটা ভয়ঙ্কর অপরাধ। আমরা নজরদারি বাড়িয়েছি। সুনির্দিষ্ট খবরের ভিত্তিতেই শীঘ্রই অভিযান হবে।” নকল সস নিয়ে উদ্বিগ্ন চিকিত্‌সক ও ব্যবসায়ী সংগঠনগুলিও।

শিলিগুড়ি, মাটিগাড়া, খালপাড়া ও ইস্টার্ন বাইপাস লাগোয়া কয়েকটি এলাকায় ওই সস তৈরি হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। বাড়িতে তৈরি ওই সসের বেশিরভাগই পাহাড়, উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় চলে যাচ্ছে আসলের সঙ্গে মিলে। এর মধ্যে কয়েকটি নামী ব্র্যান্ডের নকলও রয়েছে। স্বাদে গন্ধে প্রায় নিখঁুত করে তৈরি করা হচ্ছে এই প্রাণঘাতী সস। পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগকে নজরদারির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।

কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশিত মাপকাঠির ভিত্তিতে সাধারণত তিন কিলো টোম্যাটো থেকে আড়াই কিলো সস তৈরি সম্ভব। সরকারি নির্দেশে বলা হয়েছে, শুধুমাত্র জৈব সারে প্রস্তুত টোম্যাটো দিয়েই সস তৈরি করা যাবে। কেন্দ্রীয় নির্দেশ মেনে চললে উত্‌পাদন খরচ বেশি হয়। সসের দামও বেশি হয়। তাই সস্তায় সস তৈরির প্রবণতা বাড়ছে। কী ভাবে তৈরি হচ্ছে এই নকল সস?

পুলিশ জানাচ্ছে, নকল সসে অনেক ক্ষেত্রেই টোম্যাটোর নামগন্ধ থাকে না। সস্তা দামে কেনা গাজর এবং মিষ্টি আলু ব্যবহার করে এই নকল সস তৈরি হয়। বড় পাত্রে গাজর এবং মিষ্টি আলু জলে ফুটিয়ে নিয়ে রাসায়নিক রং এবং গন্ধ মেশানো হয়। উত্‌পাদিত সসকে ঘন করতে কিছু ক্ষেত্রে বেকারিতে তৈরি সস্তার ক্রিমও মেশানো হয় বলে অভিযোগ। সসে কৃত্রিম ঝাঁঝ আনতে বেশি পরিমাণে পেঁয়াজ দেওয়া হয়। মূলত রাসায়নিক রং এবং গন্ধ মিশিয়েই লাল রঙের ঘন সস তৈরি করে ফেলা সম্ভব বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। এই পদ্ধতিতে তৈরি সসের উত্‌পাদন খরচ অন্তত চার ভাগ কম। সহজ পদ্ধতির জন্য এই সস তৈরিতে পৃথক কারখানারও প্রয়োজন হয় না। বাড়িতে বসে সাধারণ পাত্র এবং উনুনেই নকল সস তৈরি সম্ভব।

এই ধরণের সস শরীরের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকারক বলে দাবি করেছেন চিকিত্‌সক এবং বিশেষজ্ঞেরা। এ বিষয়ে উত্তরবঙ্গের বৃহত্তর ব্যবসায়ী সংগঠন ফেডারেশন অব চেম্বার অব কমার্সের অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ নর্থবেঙ্গল (ফোসিন)-এর সম্পাদক বিশ্বজিত্‌ দাস বলেন, “কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর জন্য অন্যান্য ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। অবিলম্বে কড়া হাতে তা বন্ধ করা দরকার। তা ছাড়া নিম্নমানের সস খেলে অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।”

হোটেল ব্যবসায়ী সংগঠনের সদস্য বিপ্লব ঘোষ বলেন, “নকল থেকে বাঁচতে ব্র্যান্ডেড পণ্য ব্যবহারের প্রবণতা বাড়ছে। এখন নকল পণ্যে যদি নামী ব্র্যান্ডের তকমা থাকে, তাহলে তা যথেষ্ট আশঙ্কার।” বিপ্লববাবুর অভিযোগ, শহরের অনেক সস্তা হোটেলে নকল ব্যবহারের প্রবণতা বাড়ছে। শিলিগুড়ি পুর এলাকায় এ ব্যাপারে নজরদারির চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুরসভার ফুড লাইসেন্স বিভাগের আধিকারিক গণেশ ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “কোথাও এ ধরণের অভিযোগ পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE