প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির আপত্তি কার্যত অগ্রাহ্য করেই বামফ্রন্ট পরিচালিত উত্তর দিনাজপুর জেলা পরিষদ ভাঙতে তৃণমূলের হাত ধরল কংগ্রেস।
শুক্রবার, ওই জেলা পরিষদের সভাধিপতি ও সহকারি সভাধিপতির বিরুদ্ধে অনাস্থা এনে তাঁদের অপসারণের দাবিতে জেলাশাসক ও জলপাইগুড়ির ডিভিশনাল কমিশনারের দ্বারস্থ হয় কংগ্রেস ও তৃণমূল। দুপুরে জেলা পরিষদে কংগ্রেসের বিরোধী দলনেতা পূর্ণেন্দু দে ও তৃণমূলের গৌতম পালের নেতৃত্বে যৌথ প্রতিনিধি দল জেলাশাসকের সঙ্গে দেখা করে লিখিতভাবে ওই দাবি জানান। পূর্ণেন্দুবাবু বলেন, “বামফ্রন্ট পরিচালিত জেলা পরিষদ এক বছরে জেলায় উন্নয়নে ব্যর্থ। সে কারণেই শাসক দলের সদস্যদের সঙ্গেই কংগ্রেস ও বামপ্রন্টের ৬ জন করে সদস্য ক্ষমতাসীন বোর্ডের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনে।” জেলার উন্নয়নের স্বার্থে তৃণমূলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বোর্ড গঠনেও যে তাঁদের আপত্তি নেই তা-ও স্পষ্ট করে দিয়েছেন ওই কংগ্রেস নেতা।
রাতে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী অবশ্য পরিষ্কার জানিয়ে দেন, কংগ্রেস-তৃণমূল আঁতাতের প্রশ্ন নেই। তিনি বলেন, “যাঁরা তৃণমূলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ওই কাজ করেছেন তাঁরা দলের নীতি মানেননি। দলও তাঁদের মানতে রাজি নয়। ওঁদের বহিষ্কার করা হচ্ছে।”
তাদের দলের করতে কোনও অসুবিধা নেই বলেও জানিয়ে দেন তিনি। তবে প্রদেশ সভাপতি অধীর চৌধুরী জানিয়ে দিয়েছেন, “দলের নীতি না মেনে তৃণমূল কে সমর্থন করা ওই সদস্যদের বহিষ্কার করা হবে।” তবে, নিজের অবস্থানে কিছুটা ধোঁয়াশা রাখলেন জেলা কংগ্রেস সভাপতি মোহিত সেনগুপ্ত। তিনি বলেন,,“অনাস্থা পাশ করিয়ে জেলা পরিষদ থেকে বামফ্রন্টকে হটানোই কংগ্রেসের মূল লক্ষ্য। পরে কী ভাবে বোর্ড গঠন হবে তা জেলা পরিষদের অন্য সদস্যরা আলোচনা করে ঠিক করবেন।”
জেলাশাসক স্মিতা পান্ডে বলেন, “জেলা পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য, সভাধিপতি ও সহকারি সভাধিপতির বিরুদ্ধে লিখিতভাবে অনাস্থা এনেছেন। বিষয়টি প্রশাসনের তরফে জলপাইগুড়ির ডিভিশনাল কমিশনারকে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তিনি নির্দেশ দিলেই পরবর্তীতে অনাস্থা সভার বিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে।” জেলা যুব তৃণমূল সভাপতি গৌতম পালের দাবি, কংগ্রেসের সমর্থনে তৃণমূল জেলা পরিষদে ক্ষমতা দখল করলে রাজ্য সরকার জেলার সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থে প্রস্তাব অনুযায়ী টাকা বরাদ্দ করবে। সেকারণেই তাঁরা কংগ্রেস ও দলত্যাগী ছয় বাম সদস্যকে নিয়ে অনাস্থা পেশ করেছেন। আর জেলা তৃণমূল সভাপতি অমল আচার্য জানিয়েছেন,জেলার সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থে বামফ্রন্টকে জেলা পরিষদ থেকে হটাতে কংগ্রেসের সমর্থন নিতে কোনও অসুবিধা নেই। এই বিষয়ে সিপিএমের সভাধিপতি লাডলি চৌধুরী ও আরএসপির সহকারি সভাধিপতি প্রফুল্লকুমার দেবসিংহ কোনও মন্তব্য করতে চাননি। সিপিএমের জেলা সম্পাদক তথা জেলা বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বীরেশ্বর লাহিড়ী বলেন, “ওই ছয় সদস্যকে দলবিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগে বহিষ্কার করা হয়েছে।”
গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে ২৬টি আসনের মধ্যে ১৩টি আসনে জয়ী হয়ে জেলা পরিষদের ক্ষমতা দখল করে বামফ্রন্ট। তারমধ্যে সিপিএম দশটি, আরএসপি দু’টি ও ফরওয়ার্ড ব্লক একটি আসন পায়। কংগ্রেস ও তৃণমূল জয়ী হয় আটটি ও পাঁচটি আসনে। গত ২২ অগস্ট চোপড়ার সিপিএম সদস্যা শিবানী সিংহ, ইসলামপুরের সিপিএম সদস্য মহম্মদ হাফিজুদ্দিন, গোয়ালপোখরের সিপিএম সদস্যা আলেমা নুরি, করণদিঘির সিপিএম সদস্যা বিপাশা দাস সিংহ, হেমতাবাদের সিপিএম সদস্য প্রফুল্লচন্দ্র বর্মন ও হেমতাবাদের আরএসপি সদস্যা মহসিনা খাতুন তৃণমূলে যোগ দেওয়ার জন্য কলকাতায় চলে যান। নিয়ম অনুযায়ী জেলা পরিষদ গঠন হওয়ার এক বছরের মধ্যে ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনা যায় না। গত ১০ সেপ্টেম্বর সেই মেয়াদ পূর্ণ হয়েছে। তবে জেলা পরিষদের ১৭ জন সদস্যের পেশ করা ওই অনাস্থায় জেলা পরিষদে বামফ্রন্টের ছয় দলত্যাগী সদস্য সহ তৃণমূলের পাঁচ ও কংগ্রেসের ছয় সদস্যের স্বাক্ষর থাকলেও কংগ্রেসের বাকি দুই সদস্য তাতে স্বাক্ষর করেননি। তবে পূর্ণেন্দুবাবুর দাবি, তাঁরা ব্যক্তিগত কাজে বাইরে রয়েছেন। তবে ফোন করে অনাস্থার প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy