Advertisement
E-Paper

টেনিসের স্মৃতিতে আজও বিভোর শহর

ইংরেজ আমলে নিউ সিনেমা হলের পাশে সে সময় থেকেই মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকা যে ক্লাবটি টেবল টেনিসের পথ দেখাত তার নাম শহরের ক্রীড়াপ্রেমীদের কাছে অজানা নয়। সেহগল ইনস্টিটিউট। ১৯৩৭ সালে গড়ে ওঠে সেটি। শহরের ক্লাব বলতে তখন সেটাই। একটি মাত্র টেবল টেনিস বোর্ড পাতা ছিল খেলার জন্য। লন টেনিসও খেলা হত সে সময়ে।

সৌমিত্র কুণ্ডু

শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০১:৫৭
শিলিগুড়ির প্রথম টেবল টেনিস খেলার জায়গা দেশবন্ধুপাড়ার সায়গল ইনস্টিটিউট। এখন প্রশিক্ষণ পায় শিশুরাও। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

শিলিগুড়ির প্রথম টেবল টেনিস খেলার জায়গা দেশবন্ধুপাড়ার সায়গল ইনস্টিটিউট। এখন প্রশিক্ষণ পায় শিশুরাও। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

ইংরেজ আমলে নিউ সিনেমা হলের পাশে সে সময় থেকেই মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকা যে ক্লাবটি টেবল টেনিসের পথ দেখাত তার নাম শহরের ক্রীড়াপ্রেমীদের কাছে অজানা নয়। সেহগল ইনস্টিটিউট। ১৯৩৭ সালে গড়ে ওঠে সেটি। শহরের ক্লাব বলতে তখন সেটাই। একটি মাত্র টেবল টেনিস বোর্ড পাতা ছিল খেলার জন্য। লন টেনিসও খেলা হত সে সময়ে। দাবা, তাস খেলাই হত বেশি। অত্যুত্‌সাহীরা টেবল টেনিস খেলতেন। টিকিয়াপাড়ায় বর্তমানে যেখানে রেলওয়ে রিক্রুটমেন্ট বোর্ডের অফিস ওই জায়গায় কোর্ট ছিল লন টেনিসের।

সেহগল ছাড়া পরবর্তী কালে খেলার ব্যবস্থা হয় শহরের পুরসভার কাছে আরেকটি ক্লাবে। নাম ছিল টেনিস ক্লাব। এখন সেখানে অতিরিক্ত জেলা গ্রন্থাগার গড়ে উঠেছে। সেখানেও লন টেনিস এবং টেবল টেনিস দু’টিই খেলা হত। ক্রমে লন টেনিস খেলা হারিয়ে যায় শিলিগুড়ির বুক থেকে। জনপ্রিয় হয়ে ওঠে টেবল টেনিস। সেহগল ইনস্টিটিউটেই ছোট বেলায় খেলা শুরু করেছিলেন ভারতী ঘোষ। সেটা ষাটের দশকের মাঝামাঝি। আশির দশকের শেষ থেকে মান্তু ঘোষের মতো টেবল টেনিস তারকা উঠে আসে তাঁরই হাত ধরে। মান্তু, সুব্রত রায়, কৌশিক দাস, দেবাশিস ঘোষদের কোচ ছিলেন তিনি। রূপা চট্টোপাধ্যায়, দোলনচাঁপা মূর্তি, সঞ্জয় দে, প্রসেনজিত্‌ বসুর মতো তখনকার ইউনিভার্সিটি ব্লুজ উঠে আসে ভারতীদেবীর কাছ থেকে প্রশিক্ষণ পেয়েই।

অতীতের স্মৃতি হাতড়ে তাঁর সময়কার টেবল টেনিস খেলার কাহিনী শোনাচ্ছিলেন ভারতী ঘোষ। টেবল টেনিস খেলার ইচ্ছে জাগার পর, কী করে ক্লাবে ভর্তি হবেন সেই চেষ্টা করছিলেন। তখন তিনি তৃতীয় বা চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী। ভারতীদেবীর ভাইয়ের বন্ধু বিপ্লব ঘোষ তাঁকে সেহগাল ইনস্টিটিউটে ভর্তি করে দেন। সেখানে তখন আরও দু’জন মেয়ে অনুশীলন করতেন। চম্পা দাস এবং খেলা সরকার। পরবর্তী কালে রুমা দে নামে আরও এক জন আসেন। হাতে গোনা এই ক’জন মহিলাই তখন টেবল টেনিস খেলতেন শহরে। সেহগাল ইনস্টিটিউটের পুরনো টেবল টেনিস খেলোয়াড়দের মধ্যে ছিলেন স্বপন সরকার, বিবেক দাস, অজিত কুমার মিশ্র, বিমান সরকার, জিতেন দে সরকাররা। জিতেনবাবু ছিলেন তখন শহরের তারকা টেবল টেনিস খেলোয়াড়। মাঝেমধ্যে তাঁরা জলপাইগুড়িতে খেলতে যেতেন। সেখানে টেবল টেনিস খেলা হত। আরও পরে গণেশ কুণ্ডুর মতো খেলোয়াড়েরা খেলতেন সেহগল ইনস্টিটিউটে।

কোনও কোচ ছিলেন না। সিনিয়র খেলোয়াড়েরাই নতুনদের খেলা শিখতে সাহায্য করতেন। সে ভাবেই স্বপন সরকার, তপন চক্রবর্তী, কুমার চারের মতো খেলোয়াড়দের সাহায্য নিয়েই টেবল টেনিস শিখতে শুরু করেছিলেন ভারতীদেবী। ছোটদের খুব বেশি খেলার সুযোগ ছিল না। ধীরে ধীরে অবস্থার পরিবর্তন হতে শুরু করে। টেবল টেনিস খেলা শুরু হয় আরও কয়েকটি ক্লাবে। তার মধ্যে রামকৃষ্ণ ব্যায়াম শিক্ষা সঙ্ঘ, দেশবন্ধু ক্লাব অন্যতম। পরে বাঘা যতীন অ্যাথলেটিক ক্লাবেও শুরু হয়। স্বপনবাবু শিলিগুড়ি পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যানও। তিনি চেয়ারম্যান হওয়ার পর ১৯৮১ সালে মিউনিসিপ্যাল রিক্রিয়েশন ক্লাবের উদ্বোধন এবং টেবল টেনিস শুরু হয়। তার আগে ১৯৭২ সালে দেশ বন্ধু স্পোর্টিং ক্লাবেই তিনি টেবল টেনিসের কোচিংয়ের ব্যবস্থা করেছিলেন। রাজ্যস্তরে টেবল টেনিস সংস্থার প্রথম অনুমোদন পেয়েছিল রামকৃষ্ণ ব্যায়াম শিক্ষা সঙ্ঘই। তাদের মাধ্যমেই স্থানীয় টেবল টেনিস খেলোয়াড়রা রাজ্য স্তরের খেলাগুলিতে অংশ নিতে পারতেন। ছোটদের খেলার সুযোগ তখন কম ছিল। পরবর্তীতে দেশবন্ধু ক্লাবে ছোটদের খেলা শেখাতে প্রশিক্ষণ চালু করেন ভারতী ঘোষ। তাঁর হাত ধরেই সে সময় থেকে টেবল টেনিস খেলোয়াড় উঠতে শুরু করে।

(চলবে)

table tenis amar shohor siliguri soumitra kundu
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy