টিএমসিপি-র তাণ্ডবের পরে রাত পোহাতেই নির্ধারিত দিনের এক দিন আগে পুজোর ছুটি দিয়ে দেওয়া হল মালদহের সামসি কলেজে। নিরাপত্তার প্রশ্নে শিক্ষাকর্মীরা কলেজে যেতে রাজি না হওয়াতেই এই সিদ্ধান্ত বলে কলেজের একটি সূত্রের দাবি।
শনিবার মালদহে কলেজের টিচার ইনচার্জ প্রলয়কান্তি ঘোষের বাড়িতে যান শিক্ষাকর্মীরা। কলেজ সংক্রান্ত নানা সমস্যার জেরে ছাত্র সংগঠনগুলির সদস্যদের হাতে হেনস্থা হতে হচ্ছে বলে তাঁরা অভিযোগ জানান। এ দিন ক্লাস হয়ে পুজোর ছুটি পড়ার কথা ছিল। ছাত্রছাত্রীরা ক্লাস করতে এসেওছিলেন। কিন্তু এ দিনই ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়। প্রলয়বাবু বলেন, “ফের গণ্ডগোল হতে পারে ভেবে নিরাপত্তার স্বার্থেই এক দিন আগে পুজোর ছুটি দেওয়া হয়েছে।”
কলেজে-বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রেরা যাতে সংযত থাকেন তার জন্য বারবার বার্তা দিচ্ছে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় তো বটেই, যাদবপুর-পর্বে যুবনেতা অভিষেক চট্টোপাধ্যায়ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গুন্ডাগিরি ও নৈরাজ্যের বিরোধিতা করে বিবৃতি দিয়েছিলেন। কিন্তু তাতে যে পরিস্থিতি বদলাচ্ছে না, তা কার্যত পরিষ্কার।
দুঃস্থ ছাত্রছাত্রীদের কোটায় ১৩০ জনকে ভর্তির দাবিতে শুক্রবার সামসি কলেজের ভারপ্রাপ্ত টিচার ইনচার্জকে ঘেরাও করা হয়েছিল। শিক্ষাকর্মীদের অভিযোগ, যাদের ভর্তি করানোর জন্য টিএমসিপি দাবি জানাচ্ছিল, তারা যে গরিব পরিবারের তার প্রামাণ্য কোনও নথি ওই ছাত্রছাত্রীদের কাছে ছিল না। এই নিয়ে কথা কাটাকাটি, পরে জোরাজুরিও শুরু করেন টিএমসিপি সমর্থকেরা। শিক্ষাকর্মীদের চেয়ার থেকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেওয়া হয়। নিজেরাই ভর্তি প্রক্রিয়া চালাবে বলে এক টিএমসিপি নেতা কম্পিউটার খোলার পাসওয়ার্ড চান। তাতে সাড়া না পেয়েই ভাঙচুর চালানো হয় বলে অভিযোগ।
শিক্ষাকর্মীদের একটা বড় অংশ এ দিন টিচার ইনচার্জকে জানান, এই পরিস্থিতিতে তাঁরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। কিন্তু শাসকদলের ছাত্র সংগঠন জড়িত থাকায় কর্তৃপক্ষের তরফে পুলিশে অভিযোগ করা হয়নি বলে তাঁরা অভিযোগ করেন। এ প্রসঙ্গে প্রলয়বাবু বলেন, “আমি কাল ছিলাম না। থাকলে পুলিশে অভিযোগ করতাম। যেখানে আমি অনুপস্থিত, সেই ঘটনায় অভিযোগ জানানো ঠিক হবে না বলেই জানাইনি।”
যিনি কলেজের দায়িত্বে ছিলেন, সেই ভারপ্রাপ্ত টিচার ইনচার্জ শিক্ষক নারায়ণচন্দ্র বসুনিয়া অভিযোগ দায়ের করলেন না কেন, সেই প্রশ্নের উত্তরও মেলেনি। বারবার চেষ্টা করেও তাঁর মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা যায়নি। কলেজ পরিচালন সমিতি তথা জেলা যুব তৃণমূলের সভাপতি অম্লান ভাদুড়ির বক্তব্য, “এটা কলেজ কর্তৃপক্ষের বিষয়! আমার কিছু বলার নেই।” পরিচালন সমিতির সভাপতি কী ভাবে দায় এড়াতে পারেন, তা অবশ্য শিক্ষাকর্মীদের অনেকেরই বোধগম্য হয়নি।
বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলিও এই ঘটনা নিয়ে সরব হয়েছে। ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি বাবুল শেখ বলেন, “এই ঘটনার সঙ্গে আমাদের ছাত্র সংগঠনের নাম জড়ালে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা হত। কিন্তু শাসকদলের ছাত্র সংগঠন বলেই কর্তৃপক্ষ নীরব।” একই অভিযোগ এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক জাকির হোসেনেরও। টিএমসিপি-র জেলা সভাপতি প্রসেনজিত দাস অবশ্য দাবি করেন, “আমাদের কেউ ওই ঘটনায় জড়িত নয়। তা ছাড়া, তেমন কিছু ঘটেনি বলেই হয়তো কলেজ কর্তৃপক্ষ অভিযোগ করেননি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy