দ্বন্দ্বের জেরে পুড়েছে মোটরবাইক। —নিজস্ব চিত্র।
বাজারে স্টল বিক্রির লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ নিয়ে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে মঙ্গলবার সকালে যেন রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে কোচবিহারের সুটকাবাড়ি। দু’পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে বোমা, গুলি ছোড়ার অভিযোগ তুলেছে। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ৩টি বাইক। তৃণমূলেরই একটি পার্টি অফিসে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। তৃণমূলের সুটকাবাড়ি অঞ্চল সভাপতি আবুল হোসেনের বাড়ি ভাঙচুর করে আলমারি থেকে সাড়ে তিন ভরি সোনা লোপাট করার অভিযোগও উঠেছে। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। দু’পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছে। অভিযুক্তদের কাউকে অবশ্য গ্রেফতার করা যায়নি। কোচবিহারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দেবর্ষি দত্ত বলেন, “এলাকায় পুলিশি টহল চলছে। অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।”
দলীয় সূত্রে খবর, এক বছরের বেশি সময় ধরে সুটকাবাড়িতে তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ এবং সহ সভাপতি আব্দুল জলিল আহমেদের গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘাত চলছে। মাস ছ’য়েক আগে জলিল গোষ্ঠীর নেতা সিরাজুল হককে সুটকাবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। দায়িত্ব দেওয়া হয় রবীন্দ্রনাথ গোষ্ঠীর নেতা মজিউল হককে। সেই সময় থেকে এলাকায় মাঝে মধ্যে গণ্ডগোলের ঘটনা ঘটতে থাকে। এ দিনের সংঘর্ষে আব্দুল জলিল আহমেদের অনুগত দুই ব্যক্তি সামান্য আহত হয়েছেন বলে দাবি।
গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ভাঙচুর করা হয় তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি
আবুল হোসেনের বাড়ি। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।
সিরাজুল হকের অভিযোগ, এদিন সকাল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ জনা পঞ্চাশেক লোক মুখে কাপড় বেঁধে সশস্ত্র অবস্থায় এলাকায় ঢুকে বোমা ছুড়তে শুরু করে। তাঁর বাড়ির দিকেও বোমা ছোড়া হয় বলে দাবি। পাকা রাস্তার ধারে থাকা পার্টি অফিসে তাঁরা আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। ওই ঘটনার পর এলাকার বাসিন্দারা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। মজিউল হকের পাল্টা অভিযোগ, দলের কাজে তাঁর ছোট ভাই সহ কয়েকজন সুটকাবাড়ি অঞ্চল সভাপতি আবুল হোসেনের বাড়ি যান। তাঁরা বাইক বাইরে রেখে বাড়ির ভিতরে গিয়েছিলেন। সে সময় সিরাজুল হক কিছু লোকজন নিয়ে হামলা চালান বলে অভিযোগ। ৩টি বাইক পুড়িয়ে দেওয়া হয়। তার মধ্যে একটি বাইক প্রধানের। তাঁর ভাই সেটি নিয়ে গিয়েছিলেন।
আবুল হোসেনের বাড়িতে ঢুকে ঘরের আসবাবপত্র ভেঙে দেয় দুষ্কৃতীরা। তাঁর স্ত্রী রাবেয়া বিবি জানান, তাঁরা বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান। তিনি বলেন, “আলমারিতে তিন ভরি সোনা ছিল। তা-ও নিয়ে গিয়েছে।” ঘটনার পর এলাকার সমস্ত দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। ব্যবসায়ীরা নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগ তুলে পুলিশকে ঘিরে বিক্ষোভও দেখান।
তবে গোষ্ঠী লড়াইয়ের অভিযোগ অবশ্য জেলা নেতাদের কেউ স্বীকার করতে চাননি। রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন, “কিছু দুষ্কৃতী আমাদের অঞ্চল সভাপতির বাড়িতে ঢুকে ভাঙচুর করে সোনা, টাকা লুঠ করেছে। বাইক পুড়িয়েছে। পুলিশকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।” সহ সভাপতি আব্দুল জলিল আহমেদ বলেন, “দুষ্কৃতীরা বাইরে থেকে এসে হামলা করে পার্টি অফিসে আগুন লাগিয়েছে। রাজ্য নেতৃত্বকে সব জানাব।” এদিন দুই নেতাই আলাদা আলাদা ভাবে সুটকাবাড়িতে যান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy