Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

দুর্যোগে ১১ কোটির ক্ষতি, মেলেনি সাহায্য

বালুরঘাটের জলঘর এলাকায় গম খেতের অবস্থা। ছবি: অমিত মোহান্ত।

বালুরঘাটের জলঘর এলাকায় গম খেতের অবস্থা। ছবি: অমিত মোহান্ত।

অনুপরতন মোহান্ত
বালুরঘাট শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৫ ০২:৪০
Share: Save:

ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে দক্ষিণ দিনাজপুরে প্রায় ১১ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে। গত মাসের শেষ নাগাদ দুদফায় ওই প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর প্রায় দু’সপ্তাহ কেটে গেলেও ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা সরকারি স্তরে কোনও সহায়তা পাননি বলে অভিযোগ উঠেছে। জেলা কংগ্রেস ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের বিকল্প চাষে সাহায্যের দাবি তুলে সরব হয়েছে। দক্ষিণ দিনাজপুরের কংগ্রেস জেলা সভাপতি নীলাঞ্জন রায় অভিযোগ করেন, গ্রামাঞ্চলে ১০০দিনের কাজ নেই। তার উপর সাম্প্রতিক ওই প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর খেত-খামারের কাজ ব্যাহত হয়ে পড়ায় কৃষির উপর নির্ভরশীল বাসিন্দারা কর্মহীন হয়ে চরম সমস্যার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। অবিলম্বে প্রশাসনের তরফে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের পাশে না দাঁড়ালে জেলাজুড়ে আন্দোলন হবে।

তবে তৃণমূলের বালুরঘাট ব্লক সভাপতি তথা রাজ্য তৃণমূল কিসান কংগ্রেস কমিটির সদস্য বিভাস চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ঝড়ে ঘরবাড়ি ভাঙা ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দাদের চিহিৃত করতে বিডিওর দফতর প্রক্রিয়া শুরু করেছে। ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের সহায়তার জন্য ব্লক কৃষি উন্নয়ন আধিকারিকদের বলা হয়েছে।”

ঝড়বৃষ্টিতে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বালুরঘাট, কুমারগঞ্জ ও গঙ্গারামপুরতিনটি ব্লকে ফসলের ক্ষতির পরিমাণ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত চাষির সংখ্যা প্রায় এক হাজার বলে জেলা কৃষি দফতর জানিয়েছে মঙ্গলবার বালুরঘাট থেকে ক্ষয়ক্ষতির রিপোর্ট রাজ্য কৃষি বিভাগে পাঠানো হচ্ছে জেলার সহকৃষি অধিকর্তা উত্‌পল মণ্ডল বলেন, ফেব্রুয়ারির ১৮ ও ২৬ তারিখে শিলাবৃষ্টি ও ঝড়ে আলুর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে এরপর গম, সর্ষে ও ডালশস্যের কিছু পরিমাণে ক্ষতি হয়েছে ক্ষতির পরিমাণ ১০ কোটি ৮৯ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা সহকৃষি অধিকর্তা জানিয়েছেন, জেলা থেকে পাঠানো ওই ক্ষয়ক্ষতির রিপোর্টের ভিত্তিতে রাজ্যস্তর থেকে বিপর্যস্ত এলাকার চাষিদের সহায়তার সিদ্ধান্ত হবে।

এ ক্ষেত্রে রাজ্য থেকে ওই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষি এলাকা চিহিৃত করা হলে সংশ্লিষ্ট এলাকার চাষিরা শস্যবিমা থেকে ব্যাঙ্ক ঋণের সুবিধা পেতে পারেন। তবে প্রাথমিকভাবে কৃষি দফতর থেকে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের আমন, কলাই ও তিল চাষে মিনিকিট দিয়ে সহায়তা করার প্রক্রিয়া চলছে।

কৃষি দফতর সূত্রের খবর, এ বছর জেলায় প্রায় ১৬,০০০ হেক্টর জমিতে আলুর চাষ হয়। কিন্তু গত মাসের ১৮ তারিখে বালুরঘাট, কুমারগঞ্জ ও গঙ্গারামপুরের একাংশ এলাকায় শিলাবৃষ্টিতে ব্যাপক এলাকার আলুর খেত নষ্ট হয়ে যায়। কৃষি দফতরের হিসাব অনুযায়ী, প্রায় ৫০০ হেক্টার এলাকা জুড়ে আলুর ক্ষতি সবচেয়ে বেশি। অন্তত প্রায় সাড়ে আট হাজার টন আলু শিলাবৃষ্টিতে নষ্ট হয়েছে।

এরপর ফের ঝড়বৃষ্টিতে বিস্তীর্ণ এলাকার জমির আলু পচে গিয়েছে। ঝড়ে বালুরঘাট ব্লকের জলঘর, ভাটপাড়া গ্রামপঞ্চায়েত এলাকার গম ও ডালশস্যের ক্ষতি বেশি হয়েছে। কুমারগঞ্জ এবং গঙ্গারামাপুর এলাকার একাংশ চাষের জমির আলু, গম ও ডালশ্যসের ক্ষতি হয়েছে। ওই তিনটি ব্লকে ২,০০০ হেক্টার জমির সর্ষে এবং ২০০ হেক্টার জমির ডালশস্য নষ্ট হয়ে গিয়েছে।

জেলায় এবারে প্রায় ২০,০০০ হেক্টর জমিতে চাষিরা গম লাগিয়েছিলেন। শিসও দানা বাঁধতে শুরু করেছিল। হঠাত্‌ করে নিম্নচাপের দরুণ ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে প্রবল ঝড় ও বৃষ্টির ফলে বিস্তীর্ণ এলাকার গম গাছ মাটিতে নুয়ে পড়েছে। জলঘর এলাকার চাষি নিমাই বর্মন, হরেন রায়, কমল হাঁসদাদের মতো কেউ ৩ বিঘে কেউ ৫ বিঘে জমিতে গমের আবাদ করেন। ঝড়বৃষ্টির দাপটে তাদের জমির অধিকাংশ গমের গাছ মাটিতে পড়েছে। তাঁরা বলেন, “মাঠে শুয়ে পড়া গম গাছে ফলন হবে না। সার বীজ ও জলসেচের খরচের বোঝার উপর ফসলের ক্ষতি কিভাবে সামাল দেব জানি না!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE