বিশ্বকাপ শুরু হল বৃহস্পতিবার। উত্তরবঙ্গে লাফিয়ে বাড়ছে লোডশেডিংয়ের বহর। শুধু তাই নয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উত্তরবঙ্গ সফরের সময় দু’দফায় ঘণ্টা দেড়েকের লোডশেডিংয়ের জেরে সাসপেন্ড হতে হয়েছে বিদ্যুৎ বণ্টন দফতরের আলিপুরদুয়ারের ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ারকে। তাও লোডশেডিংয়ের হাত থেকে রেহাই মেলেনি।
বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, গোটা রাজ্য জুড়েই বিদ্যুতের ঘাটতি চলছে। দিনের যে সময়ে বিদ্যুতের চাহিদা সর্বোচ্চ থাকে, সে সময় কলকাতা ছাড়া বাকি রাজ্যে ঘাটতির পরিমাণ কমপক্ষে ৭০০ মেগাওয়াট ছুঁয়ে যায়। চলতি সপ্তাহে এক দিন ঘাটতির পরিমাণ প্রায় ১২৯৯ মেগাওয়াটে পৌঁছে যায় বলে জানা গিয়েছে। দিনের অন্য সময়ে রাজ্য জুড়ে ঘাটতির পরিমাণ থাকছে ২৫০ মেগাওয়াট। ঘাটতি মোকাবিলা করতে প্রতিদিন কয়েক দফায় লোডশেডিং হচ্ছে বলে বিদ্যুৎ বণ্টন দফতর সূত্রের খবর। কোথাও কয়েক দফায়, কোথাও আবার এক টানা। দিন-রাতের যে কোনও সময়েই লোডশেডিঙের দাপটে নাকাল হতে হচ্ছে বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। বুধবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত চার দফায় শিলিগুড়িতে লোডশেডিং হয়। একই অবস্থা ছিল মালদহেও। চাঁচল মহকুমায় এ দিন দুপুরের পরে টানা ২ ঘণ্টারও বেশি লোডশেডিং চলে বলে অভিযোগ। কোচবিহার থেকে উত্তর দিনাজপুর সর্বত্র লোডশেডিঙের সময় বেড়েই চলছে বলে অভিযোগ। গত বুধবার সকাল সাড়ে ১১টা থেকে কয়েক দফায় লোডশেডিং হয় শিলিগুড়িতে। বিকেলেও পরপর দু’বার লোডশেডিং হয় বলে অভিযোগ।
হঠাৎ কেন এই বিদ্যুৎ ঘাটতি?
বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার তরফে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় সংস্থা এনটিপিসি এবং ডিভিসি থেকে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ মিলছে না। দুই সংস্থা থেকে চাহিদার অন্তত ২৫ শতাংশ কম বিদ্যুৎ পাচ্ছে রাজ্য। সে কারণেই তৈরি হয়েছে বিদ্যুৎ ঘাটতি। তবে কেন্দ্রীয় সংস্থা সূত্রে জানা দিয়েছে, কম উৎপাদনের সমস্যা গত তিন মাস ধরেই চলছে। সেখানেই প্রশ্ন উঠেছে, তিন মাসে ঘাটতি থাকলেও, হঠাৎই এই সময়ে লোডশেডিঙের পরিমাণ বাড়ছে কেন?
বিদ্যুৎ দফতরের অন্দরের খবর, এর আগে ঘাটতি হলে, অন্য রাজ্যের কয়েকটি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী সংস্থা থেকে অথবা কেন্দ্রীয় সংস্থার থেকেই চড়া দামে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ কেনা হত। তাতে রাজ্য সংস্থার ক্ষতি হত। বিদ্যুৎ দফতরের একটি সূত্রের দাবি, তবে সে সময়ে অর্থাৎ লোকসভা ভোটের আগে রাজ্য সরকার অলিখিত নির্দেশ দিয়ে কোথাও যেন লোডশেডিং না হয় তা নিশ্চিত করতে বলেছিল। সেই মতো বাড়তি বিদ্যুৎ কেনা হয়। ভোট পর্ব চুকতে সেই নির্দেশ কার্যত তুলে নিয়েছে রাজ্য সরকার। ফলে ক্ষতি এড়াতে বাড়তি বিদ্যুৎ কিনছে না সংস্থা। গরম বাড়তে বিদ্যুতের চাহিদাও বেড়েছে। সে কারণেই দেদার লোডশেডিং হচ্ছে বলে অভিযোগ।
বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার উত্তরবঙ্গের জোনাল ম্যানেজার অশোক কুমার সিংহ বলেন, “লোডশেডিঙের সমস্যা হচ্ছে ঠিকই। তবে আমরা নিরুপায়। চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ মিলছে না। সে কারণেই কিছু এলাকায় লোডশেডিং হচ্ছে।” লোডশেডিংয়ে নাজেহাল কোচবিহারের বাসিন্দারাও। রাতেও ঘনঘন লোডশেডিং হচ্ছে বলে অভিযোগ। এ ছাড়াও কোচবিহার শহর সহ লাগোয়া এলাকায় গত ১৫ দিনে প্রায় প্রতিদিনই অন্তত কয়েক দফায় লোডশেডিং হয়েছে বলে অভিযোগ। বাসিন্দাদের অভিযোগ, ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি হলেও শহরে লোডশেডিং হয়ে যাচ্ছে। সমস্যা চলছে আলিপুরদুয়ারেও। প্রতিদিন তিন বার শহরে লোডশেডিং যেন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ। বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার আলিপুরদুয়ারের বিভাগীয় ম্যানেজার দীপঙ্কর দাস বলেন, “কামাখ্যাগুড়িতে বেশ কয়েক দিন ধরে বিদ্যুৎ বিভ্রাট হওয়ায় আগে থেকে মাইকে প্রচার করা হয়েছিল। মঙ্গলবার এলাকায় বিদ্যুতের তারের রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করা হয়েছে। বজ্রপাতের কারণেও বিভিন্ন এলাকায় ট্রান্সফরমারে সমস্যা দেখা দিয়েছে। সেগুলি মেরামতের জন্যও মাঝেমধ্যে সরবরাহ বন্ধ রাখতে হচ্ছে।”
গত তিন দিন ধরে রায়গঞ্জ শহরে মাঝেমধ্যেই ব্যাপক লোডশেডিং হচ্ছে। সর্বাধিক সমস্যা হচ্ছে ইসলামপুর মহকুমার চাকুলিয়া ও গোয়ালপোখর ব্লকে। গত এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে দিন ও রাত মিলিয়ে ছয় থেকে সাত দফায় লোডশেডিং চলছে বলে নালিশ। আধ ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টার আগে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হচ্ছে না। রায়গঞ্জ মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক অতনুবন্ধু লাহিড়ি বলেন, “লোডশেডিংয়ের সমস্যার সমাধান না হলে ব্যবসায়ী, পড়ুয়া সহ জেলাবাসীর স্বার্থে আন্দোলনের কথা ভাবতে হবে।”
বলছে বিদ্যুৎ বণ্টন দফতর
• সারা রাজ্যেই বিদ্যুৎ ঘাটতি চলছে।
• দিনে কখনও কখনও হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত ঘাটতি দাড়াচ্ছে।
• বজ্রপাতের কারণে নানা এলাকায় ট্রান্সফর্মারের গণ্ডগোল হচ্ছে।
• সামান্য বৃষ্টিতে বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy