Advertisement
২২ মে ২০২৪

ধৃতের গ্রামে ঘুরে গেলেন তদন্তকারীরা

আমরা গরিব। তাই রুজির টানেই বাবা কেরলে গিয়ে আনোয়ারুল হুদা কমপ্লেক্সে আরবি পড়াতেন। সেখানে থাকা ছেলেদের দেখভাল করে যে মাইনে পেতেন তা দিয়ে সংসার চলত। ওখানে নিখরচায় ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়ার সুযোগ থাকায় বাবা আমাকেও সেখানে নিয়ে গিয়েছিলেন। চার বছর আমিও কেরলে ছিলাম। আমার বাবা পাচারকারী নন। বাবাকে আপনারা ছেড়ে দিন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
চাঁচল শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০১৪ ০২:০২
Share: Save:

আমরা গরিব। তাই রুজির টানেই বাবা কেরলে গিয়ে আনোয়ারুল হুদা কমপ্লেক্সে আরবি পড়াতেন। সেখানে থাকা ছেলেদের দেখভাল করে যে মাইনে পেতেন তা দিয়ে সংসার চলত। ওখানে নিখরচায় ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়ার সুযোগ থাকায় বাবা আমাকেও সেখানে নিয়ে গিয়েছিলেন। চার বছর আমিও কেরলে ছিলাম। আমার বাবা পাচারকারী নন। বাবাকে আপনারা ছেড়ে দিন। কেরল থেকে আসা সিআইডি-র দল এ দিন শিশু-কিশোর পাচারকারী সন্দেহে ধৃতের বাড়ি হাজির হয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই তাদের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়ল পাচারকারী সন্দেহে ধৃতের কিশোর ছেলে।

মালদহের চাঁচল, হরিশ্চন্দ্রপুর ও রতুয়ার বিভিন্ন এলাকা থেকে কেরলে যাওয়ার পর ৫৮ জন শিশু-কিশোরকে পরিচয়পত্র না থাকায় তাদের গ্রেফতার করে সেখানকার রেল পুলিশ। পরে তাদের অভিভাবকদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। ওই ঘটনায় পাচারের অভিযোগে ৩ জনকে গ্রেফতারও করা হয়। সেই ঘটনার তদন্তে কেরল পুলিশ সিআইডির দলটি মালদহে এসে বুধবার পাচারকারী সন্দেহে ধৃত রতুয়ার রুহিমারি এলাকার মৌলবী মনসুর রহমানের বাড়িতে যান। তিনি কেরলে আনোয়ারুল হুদা কমপ্লেক্সে শিক্ষকতা করতেন। তার পর এদিন সিআইডির দলটি যায় পাচারকারী সন্দেহে ধৃত হরিশ্চন্দ্রপুরের উত্তর তালসুরের আর এক মৌলবী আবু বক্করের বাড়িতে। তার মেজো ছেলে ফাহিম খাত্তাব কেরলে ৪ বছর পড়াশুনা করেছে। ফলে, মালয়ালম ভাষায় দক্ষ ওই কিশোর অফিসারদের বিশদ জানানোর পাশাপাশি বাবা পাচারকারী নন বলে দাবি করে কান্নায় ভেঙে পড়ে।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, এ দিন হরিশ্চন্দ্রপুর থানার এক অফিসার গৌতম মাহাতোকে সঙ্গে নিয়ে প্রথমে মৌলবী আবু বক্করের বাড়িতে যান সিআইডির ৬ সদস্যের দলটি। সেখানে বিস্তারিত খোঁজ নেওয়ার পাশাপাশি ধৃত আবু বক্করের ভোটের পরিচয়পত্র, রেশন কার্ডও খতিয়ে দেখেন তারা। তাদের দেখে সেখানে হাজির হন গ্রামবাসীরাও। মৌলবী সাহেব ভালো লোক বলে তাদের দাবির কথা সিআইডিকে জানান গ্রামবাসীরাও।

এর পরেই ধৃতের ছেলে ফাহিমের মুখে মালয়ালম ভাষা শুনে তার কাছে সিআইডি দলের সদস্যরা জানতে চান। যে তার কোথায় থাকতে ভালো লাগে, পশ্চিমবঙ্গে নাকি কেরলে। কেরলে ভালো লাগে জানতে পেরেই তার কারণ জানতে চাওয়া হয়। ফাহিম তখন জানায় যে, ওখানে নিখরচায় ইংরেজি পড়ার সুযোগ রয়েছে। ওখানে পড়াশুনার মানও ভাল। কিন্তু এখানেও তো নিখরচায় পড়া যায়। সিআইডির মুখে সেই কথা শুনে ফাহিমের জবাব, “এখানে গরিব পরিবারের ছেলেদের ইংরেজি মাধ্যমে পড়ার সামর্থ নেই। তাই ওখানেই গিয়েছিলাম।” এর পরেই বাবাকে নিরপরাধ দাবি করে কবে বাবা ছাড়া পাবে তা সিআইডির কাছে জানতে চায় ফাহিম। জবাবে সিআইডির এক অফিসার জানান যে, এখানে তদন্তে করে রিপোর্ট জমা দেওয়ার পরেই পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে। এর পর ওই গ্রামের রশিদ আলির ছেলে ওয়াসিম আখতারকেও জেরা করে সিআইডি। সেও কেরলে পড়াশোনা করেছে। ফাহিম বলেন, “সিআইডি অফিসারদের সব বলেছি। আমরা গরিব। তাই বাবা ওখানে আরবি পড়িয়ে সংসার চালান। বাবা পাচারকারী নন। বাবা যাতে ছাড়া পায় কেরল পুলিশ সিআইডিকে সেই ব্যবস্থা করতে অনুরোধ করেছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

child trafficking visit of investigator chanchal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE