শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠান বাতিল। ধূপগুড়ির নিহত দশম শ্রেণির ছাত্রীর স্মরণে শুক্রবার নীরবতা পালন করলেন ওই স্কুলের শিক্ষক ও পড়ুয়ারা। সন্দীপ পালের তোলা ছবি।
ধূপগুড়ি কাণ্ডে জড়িত সন্দেহে ধৃত দুই যুবককে ১২ দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে নিল রেল পুলিশ। শুক্রবার তহিদুল রহমান এবং হামিদুল আলি নামে ওই দুই যুবককে জলপাইগুড়ি মুখ্য বিচার বিভাগীয় আদালতে শান্তনু দত্তের এজলাসে পেশ করা হয়। বিচারক তাদের ১২ দিনের পুলিশি হেফাজত মঞ্জুর করেছেন। ধৃতদের পরিবারের পক্ষ থেকে অবশ্য তাঁরা কেউ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন বলে দাবি করা হয়েছে।
ধূপগুড়ি কাণ্ডে জড়িতদের গ্রেফতারের দাবিতে শুক্রবার সকালে জেলা পুলিশ সুপারকে স্মারকলিপি দেন জেলা বামফ্রন্টের নেতারা। ওই কিশোরীর বাড়িতে যান মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআরের সদস্যরা। শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ারের নাগরিক সমাজও পথে নামার হুমকি দিয়েছে। তবে জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল বলেন, “ঘটনার তদন্ত ঠিকঠাকই হচ্ছে। তা করছে রেল পুলিশ। আমরা যা সাহায্য প্রয়োজন, তা করছি। ঘটনার সঙ্গে জড়িত প্রত্যেককে খোঁজা হচ্ছে।”
এদিন তহিদুলের আইনজীবী সমীর দাস আদালতে জানান, তাঁর মক্কেলের নামে কোনও অভিযোগ নেই। পুলিশের কাছে যে ১৩ জনের নামে অভিযোগ করা হয়েছে সেখানে যে, তহিদুল ইসলামের নাম আছে তাঁর বাবার নাম আজিমুদ্দিন। কিন্তু যে তহিদুল রহমানকে ধরা হয়েছে তাঁর বাবার নাম ওসমান আলি। অপর ধৃত হামিদুল আলির আইনজীবী ছিল না। সরকারি আইনজীবী শান্তা চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ওই ঘটনায় আরও অনেকে জড়িত থাকতে পারে। সে বিষয়ে ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি।”
ধূপগুড়িতে এবিটিএ-র মিছিল। ছবি: রাজককুমার মোদক।
তহিদুলের স্ত্রী রিনা ইয়াসমিনের দাবি, “গত বুধবার রাত ১০টা নাগাদ পুলিশ বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায় স্বামীকে। সঙ্গে যায় এক গাড়ি চালককেও নিয়ে যায়। তাকে ছেড়ে দিলেও তহিদুলকে পুলিশ আটকে রাখে। বৃহস্পতিবার সকালে খবর পাই স্বামীকে গ্রেফতার করে ময়নাগুড়ি রেল পুলিশের কাছে পাঠানো হয়েছে।” রিনা আরও অভিযোগ করেন, “স্বামী মাংসের ব্যবসা করেন। কোনও দিন রাজনৈতিক সভা সমিতিতে যাননি। যেদিন সালিশি সভা হয়, সেদিন বাড়িতে ছিলেন না। আসল অপরাধীদের না ধরে ষড়যন্ত্র করে আমাদের ফাঁসানো হচ্ছে।”
পুলিশ সুপারের কাছে স্মারকলিপি দিতে যান বামফ্রন্টের যে প্রতিনিধিরা, তাতে ছিলেন সিপিএমের মানিক সান্যাল, জিতেন দাস, সলিল আচার্য, আরএসপি-র প্রকাশ রায়, ফরওয়ার্ড ব্লকের আব্দুস সাত্তার এবং সিপিআই-এর রণগোপাল ভট্টাচার্য। তাঁরা পুলিশ কর্তাদের কাছে অভিযোগ করেন, প্রকৃত অপরাধীদের না গ্রেফতার করে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করা হচ্ছে। সলিলবাবু বলেন, “প্রকৃত অপরাধীদের ধরার জন্য পুলিশকে ৭ দিন সময় দেওয়া হয়েছে। ওই সময়ের মধ্যে অপরাধীরা ধরা না পড়লে সিবিআই তদন্তের দাবি তলার কথা ভাবা হচ্ছে। পরে বামফ্রন্টের সভায় ওই বিষয়ে কথা হবে।” বিজেপি-র পক্ষ থেকেও পুলিশকে ৭ দিন সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। দলের জেলা সভাপতি দীপেন প্রামাণিক বলেন, “সাত দিনের মধ্যে অপরাধীরা গ্রেফতার না হলে সিবিআই তদন্তের দাবিতে আন্দোলন শুরু হবে।” ময়নাগুড়িতে বিজেপি মোমবাতি মিছিলও করেছে।
ধূপগুড়ি-কাণ্ডের প্রতিবাদ ময়নাগুড়িতেও। বিজেপির মোমবাতি মিছিল। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক।
এদিন কিশোরীর বাড়িতে যান জলপাইগুড়ি জেলা এপিডিআর-এর সম্পাদক জাতিস্মর ভারতী। তাঁর অভিযোগ, “পুলিশের একাংশ শাসকদলের অনুগত হয়ে পড়েছে। মামলার তদন্তে পুলিশি গফিলতি দেখলে আমরা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কমিশনের দ্বারস্থ হব।”
একের পর এক ঘটনায় রাজ্য সরকারের চরিত্র প্রকাশ হয়ে পড়ছে বলে মনে করছেন প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যও। অশোকবাবু বলেন, “তৃণমূল সরকার রাজ্যে আইন শৃঙ্খলাকে প্রহসনে পরিণত করেছে। সরকারি দলের কর্মী সমর্থকেরা ধর্ষণ করে খুন করছে, এটা বন্ধ হওয়া দরকার। নারী নির্যাতনে দেশের মধ্যে সেরার শিরোপা লাভ করতে চলেছে রাজ্য সরকার।” এ বিষয়ে রাজ্য সরকারকে আরও তীব্র ভাষায় সমালোচনা করেন বিজেপি-র দার্জিলিং জেলা সভাপতি রথীন বসু। তিনি বলেন। “রাজ্য সরকার তিন ‘ধ’ এর মধ্যে প্রথম। ধার, ধাপ্পাবাজি এবং ধর্ষণ। বামফ্রন্ট ৩৪ বছরে রাজ্যের যা ক্ষতি করেছে, তৃণমূল সাড়ে তিন বছরেই তা করে ফেলেছে।”
অন্য দিকে দার্জিলিয়ের জেলা আইনি পরিষেবা সমিতির সম্পাদক অমিত সরকার এই ধরণের ঘটনায় প্রমাদ গুণেছেন। তিনি বলেন, “অনেক ক্ষেত্রেই কাজ করতে গিয়ে শাসকদল পুলিশকে প্রভাবিত করছে। এটা বন্ধ না হলে ন্যায় বিচার পাওয়া মুশকিল।” দার্জিলিং জেলা কংগ্রেসের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক বিকাশ সরকার অভিযোগ করেন, “রাজ্যে এখন একটাই ইস্যু। জেলায় জেলায় ধর্ষণ আর শ্লীলতাহানি। এছাড়া অন্য কোনও বিষয় নেই। উন্নয়নের দিক থেকে নজর সরে গিয়েছে সরকারের।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy