পানশালায় নবাগত দুই গায়িকা অপরিচিত দুই যুবকের কুপ্রস্তাবে রাজি না-হওয়ায় তাঁদের উপরে অ্যাসিড ছোড়া হয়েছে বলে সন্দেহ করছেন সহকর্মীদের অনেকেই। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দুজন গায়িকা অ্যাসিডে জখম হয়ে হাসপাতালে ভর্তির পরে পানশালার অন্য গায়িকারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।
শঙ্কিত গায়িকাদের কয়েকজনের অভিযোগের তির গিয়েছে মালিকপক্ষের একাংশের দিকে। তাঁদের অভিযোগ, মালিকপক্ষের একজনের প্রশ্রয়েই পানশালায় অসামাজিক কার্যকলাপও হয়। এমনকী, দুজন গায়িকা গুরুতর জখম হলেও কেন সরযূ তাঁদের দেখতে কিংবা চিকিত্সার খরচ দেওয়ার ব্যাপারে এগিয়ে যাননি তা নিয়েও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে সহগায়িকাদের মধ্যেও। বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে পানশালার মালিক সরযূ শর্মা কোনও মন্তব্য করতে চাননি। কেন তাঁর পানশালার বিরুদ্ধে নানা অসামাজিক কাজকর্মে মদত দেওয়ার অভিযোগ উঠছে, সেই প্রশ্নে সরযূ সব কিছু ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন।
তবে শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের অফিসারদের একাংশ অবশ্য দাবি করেন, অতীতেও ওই পানশালার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠেছে। সে সময়ে পানশালাটি অন্য নামে ছিল বলে পুলিশের দাবি। পুলিশের এক প্রবীণ অফিসার জানান, ওই পানশালায় দেহব্যবসা চালানোর অভিযোগে বাম আমলে তল্লাশি চালিয়ে কয়েকজনকে গ্রেফতারও করা হয়। তৃণমূলের দার্জিলিং জেলার কার্যকরী সভাপতি তথা এসজেডিএ’র সদস্য নান্টু পাল বলেন, “পুলিশ ঘটনার তদন্ত করছে। দ্রুত অভিযুক্তদের ধরে কঠোর শাস্তি দিতে হবে।”
এই ঘটনার পরে প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য বলেন, “কলকাতার মতো শহরে এ সব ঘটনা ঘটার কথা শুনেছি। কিন্তু শিলিগুড়িতে এ সব কোনও দিন হয়নি। ভয়ঙ্কর ব্যাপার। বাসিন্দাদের নিরাপত্তা দিতে পারছে না পুলিশ প্রশাসক। মন্ত্রী, পুলিশ, প্রশাসনের আধিকারিকরা সকলেই উত্সব নিয়ে মেতে রয়েছেন। পুলিশ মেরুদণ্ডহীন হয়ে পড়েছে।” অশোকবাবু জানান, আজ, শুক্রবার তিনি নার্সিংহোমে জখমদের দেখতে যাবেন। কংগ্রেসের জেলা সভাপতি শঙ্কর মালাককারের অভিযোগ, “পুলিশ শাসক দলের নেতাকে খুশি করতে ব্যস্ত। শহরের নিরাপত্তা নিয়ে তাদের যেন কোনও ভাবনা নেই। তারা বাসিন্দাদের নিরাপত্তা দিতে পারছেন না এই ঘটনাতেই তা স্পষ্ট।”
বিজেপির তরফে শহরে ডান্স-বার নিয়ন্ত্রণের দাবি তোলা হয়েছে। বিজেপি’র জেলা সভাপতি রথীন্দ্র বসু বলেন, “ডান্সবারগুলি শহরে নিয়ম মেনে চলছে না। সেগুলি দেখা দরকার। শহরের মধ্যে এই ঘটনায় নিরাপত্তা কতটা ঢিলেঢালা, দুষ্কৃতীরা যে পুলিশ প্রশাসনকে গুরুত্ব দিচ্ছে না তা স্পষ্ট।”
ঘটনার পরে এ দিন পানশালায় গানবাজানা চললেও, গায়িকাদের চোখে মুখে আতঙ্ক। এক গায়িকার কথায়, “সন্ধ্যায় ঘটনার খবর পাওয়ার পর থেকে আতঙ্ক কাটছে না। এমন একটি ঘটনার পরেও পানশানা বন্ধ রাখা হল না। এমনকী অনান্য দিনের মতোও গানবাজানা হয়েছে। আমাদের অনেকেই গান গাইতে রাজি ছিলেন না, তবু জোর করায় গাইতে হয়েছে।” অন্য এক গায়িকার কথায়, “রাতের দিকে যখন পানশালা ভিড় হয়ে যায়, তখন অনেকেই নেশাগ্রস্ত অবস্থায় গায়ে ঢলে পড়তে চায়। প্রতিবাদ করলে গালিগালাজ শুনতে হয়। পুলিশ প্রশাসনের এ দিকে নজর দেওয়া উচিত।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy