নদীর মুখে আটকে, নদীখাত এবং চরের জায়গা দখল করে ‘প্লট’ বানিয়ে মোটা টাকায় বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। শিলিগুড়ির বাগডোগরার রূপসিংহ জোতে, ডুমড়িগুড়িতে বুড়ি বালাসন নদী এলাকায় ওই সমস্ত জমি এ ভাবেই বিক্রি করতে একটি চক্র সক্রিয় বলে অভিযোগ। সেখানে এলাকার একটি গ্রামীণ সড়ক যোজনা প্রকল্পে তৈরি রাস্তা, শ্মশান, কবরস্থানের জায়গাও ছাড়েননি জমির কারবারিরা। ওই সমস্ত জায়গাগুলি নিয়েই ‘প্লট’ করা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জেলাশাসক-সহ প্রশাসনের বিভিন্নস্তরে অভিযোগ জানালেও তা দেখা হচ্ছে না বলে তাঁরা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
অভিযুক্তরা অনেক বাসিন্দাদের কাছে আগে জমির একাংশ বিক্রিও করেছেন। ফের তাঁদের জায়গা অপর কাউকে জবরদস্তি বিক্রি করে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে বলেও অভিযোগ। নদীর চর লাগোয়া ওই সমস্ত জায়গার একাংশ আাদিবাসী জমি হিসাবেই জানেন স্থানীয়দের একাংশ। এ ভাবে সেই সমস্ত জমি প্লট করে বিক্রি হতে দেখে তারাও হতবাক। জমি হিসাবে নদীর জায়গা এ ভাবে দখল করার বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন পরিবেশপ্রেমীরাও। বিশেষ করে নদীর গতিপথ আটকে জমি দখল করে এ ভাবে বিক্রি করার চেষ্টা রুখতে প্রশাসনের তরফে কে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না সেই প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। দার্জিলিঙের জেলাশাসক পুনীত যাদব বলেন, “আমার দফতরে এ ধরনের কোনও অভিযোগ এসেছে কি না খোঁজ নেব। সমস্যা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, এ ভাবে জমি বিক্রির জন্য চক্রটি সক্রিয় হওয়ায় এলাকার পরিবেশ বিপন্ন হয়ে পড়েছে। পনেশ্বর সিংহ, জিতেন বর্মন, নবীন রায়-সহ এলাকার বাসিন্দারা অনেকেই জানান, তাঁরা স্থানীয় মমতানগরে বসবাস করেন। কিছু অসাধু জমি ব্যবসায়ী এলাকায় নদীর জায়গা এবং খাস জমির অংশ দখল করে বিভিন্ন বাসিন্দদের কাছে বিক্রি করছেন। এর বিরুদ্ধে পুলিশ, প্রশাসনের কর্তাদের অভিযোগ জানানো হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ হয়নি। অভিযোগ জানানো হয়েছিল দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কাছেও। কিন্তু তারাও বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন না বলে অভিযোগ। এলাকায় একটি আশ্রম ছিল। তাদের ভয় দেখিয়ে উচ্ছেদ করে ওই চক্রটি আশ্রমের জমিও দখল করেছে বলে অভিযোগ। এক বাসিন্দা সুরজ লিম্বু জানান, তাঁর আত্মীয় এলাকার জমি কিনেছিলেন। এখন বুঝতে পারছেন জমি কেনা ভুল হয়েছে। তাদের জমিও দখলের চেষ্টা করছে চক্রটি। এমন পরিস্থিতি সঞ্জয় নিরোলাদেরও।
শিলিগুড়িতে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের উত্তরবঙ্গ আঞ্চলিক শাখার আধিকারিক গৌতম পাল বলেন, “নদীর চর, খাস জমি দখল করার মতো বিষয়টি সেচ দফতর, ভূমি সংস্কার দফতরই দেখে। বাসিন্দাদের অভিযোগের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দফতরের কাছে জানিয়ে দেওয়া হবে। তারাই যথাযত ব্যবস্থা নেবে।” পরিবেশপ্রেমীদের অভিযোগ, প্রশাসনের কর্তারা বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চাইছেন। এমনিতেই শহরের নদীগুলির পরিস্থিতি ভাল নয়। তার উপর জমি দকল করে এ ভাবে বিক্রির করার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া হলে তারা পেয়ে বসবে।
হিমালয়ান নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশন (ন্যাফ)-এর মুখপাত্র অনিমেষ বসু বলেন, “নদীর গতি আটকানো, জমি দখল করা এসব কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে লছকা নদী খাতের ধারেও এ ভাবে জমি দখল করে প্লাট বানিয়ে বিক্রির চেষ্টা হচ্ছে বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ রয়েছে। প্রশাসনের তরফে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy