Advertisement
E-Paper

‘প্রাচীন মুদ্রা’র জন্য খুন প্রৌঢ়, ছ’মাস পরে ধৃত অভিযুক্ত

ব্রিটিশ আমলের একটি ‘১ আনা পয়সা’র জন্য এক প্রৌঢ়কে অপহরণের করে তাঁকে দু’দিন আটকে রেখে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মাস ছয়েক আগে শিলিগুড়ির মাটিগাড়া থানার দাগাপুর চা বাগান খুনের ঘটনাটি ঘটলেও শুক্রবার দুপুরে মামলার মূল অভিযুক্ত প্রমোদ রায় নামে এক যুবক ধরা পড়ার পরে পুলিশ খুনের কারণ জানতে পেরেছে।

কিশোর সাহা

শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:৪৪

ব্রিটিশ আমলের একটি ‘১ আনা পয়সা’র জন্য এক প্রৌঢ়কে অপহরণের করে তাঁকে দু’দিন আটকে রেখে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মাস ছয়েক আগে শিলিগুড়ির মাটিগাড়া থানার দাগাপুর চা বাগান খুনের ঘটনাটি ঘটলেও শুক্রবার দুপুরে মামলার মূল অভিযুক্ত প্রমোদ রায় নামে এক যুবক ধরা পড়ার পরে পুলিশ খুনের কারণ জানতে পেরেছে। শিলিগুড়ির মাটিগাড়া থানার দাগাপুর চা বাগান এলাকার ঘটনা। ওই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশের একজন সিভিক ভলান্টিয়ার্সও আগেই ধরা পড়েছেন। আরও ৩ জনকে পুলিশ খুঁজছে।

পুলিশের দাবি, মূল অভিযুক্ত কবুল করেছে ১ আনার ‘প্রাচীন মুদ্রা’ দেওয়ার নাম করে ঠকানোর জন্য ওই প্রৌঢ়কে খুন করা হয়েছে। শিলিগুড়ির কমিশনারেটের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার শ্যাম সিংহ বলেন, “খুনের কারণ নিয়ে ধন্দ ছিল। মূল অভিযুক্ত ধরা পড়ার পরে বোঝা গেল, প্রাচীন আমলের ১টি পয়সার জন্যই খুনের ঘটনা ঘটেছে। বিশদে জানতে ধৃতকে আরও জেরা করা হবে।”

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, ইংরেজ আমলে তৈরি ওই মুদ্রার এক পিঠে গদা হাতে হনুমানের উড়ে যাওয়ার ভঙ্গিমা খোদাই করা রয়েছে। কিন্তু পুরাতাত্ত্বিকেরা জানাচ্ছেন, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলের এমন মুদ্রা অস্বাভাবিক। কিন্তু উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকায় ওই মুদ্রাটি ‘হনুমান-পয়সা কিংবা ‘বীর-পয়সা’ বলে পরিচিত এবং তার চাহিদা রয়েছে। নানা মহলে কুসংস্কার রয়েছে, ওই ১ আনা পেলে নাকি ভাগ্য খুলে যায়। শিলিগুড়ির উপকণ্ঠে মাটিগাড়ার পাথরঘাটার বাসিন্দা তথা পেশায় রাজমিস্ত্রি প্রমোদ ও তাঁর সতীর্থ গণেশ দেবনাথ সহ কয়েকজনও তা-ই ভাবতেন। সে জন্য ওই ১ আনা পয়সা কোথায় মিলবে, তা হন্যে হয়ে খুঁজতেন ওঁরা। বছর চারেক আগে জলপাইগুড়ির পুলিশ লাইন লাগোয়া এলাকার বাসিন্দা দিলীপ দাস (৫২)-এর সঙ্গে পরিচয় হয় প্রমোদদের। সেই সময়ে দিলীপ একটি ‘হনুমান-পয়সা’ দেখান বলে প্রমোদ পুলিশকে জানান। ওই মুদ্রা পেতে কত টাকা লাগবে, তা নিয়ে দরাদরি চলে। প্রমোদের দাবি, কয়েক দফায় জমি, গয়না বেচে দিলীপকে প্রায় সাড়ে ৪ লক্ষ টাকা দেন তিনি। অন্যরাও ৩ লক্ষ টাকা দেন দিলীপকে। কিন্তু, ‘বীর-পয়সা’ হাতে না-আসায় সকলেই অধৈর্য হয়ে পড়েন।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে দিলীপবাবুর স্ত্রী কিডনির ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হন। সে খবর জানতে পেরে ৩ সেপ্টেম্বর দিলীপবাবুকে মেডিক্যাল কলেজ থেকে তুলে নিয়ে পাথরঘাটায় নিয়ে আটকে ফেলা হয়। অভিযোগ, সেই সময়ে পুলিশের সিভিক ভলান্টিয়ার তাপস বর্মনকে ডেকে ‘স্ট্যাম্প পেপারে’ লেখালেখি করিয়ে ‘হনুমান-পয়সা’ দ্রুত দেওয়া হবে বলে দিলীপকে দিয়ে সই করানো হয়। কিন্তু, সই করার পরে দিলীপ জানিয়ে দেন, তিনি ১ আনার মুদ্রা কিংবা টাকা ফিরিয়ে দিতে পারবেন না। ৫ সেপ্টেম্বর দাগাপুর চা বাগানে দিলীপের দেহ মেলে। তাঁর ছেলে দীপঙ্করের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ অপহরণ ও খুনের মামলা রুজু করে। মোবাইলের রেকর্ডের ভিত্তিতে সিভিক ভলান্টিয়ার তাপসকে গ্রেফতার করলেও পুলিশ খুনের কারণ নিয়ে অন্ধকারে ছিল। ইতিমধ্যে প্রমোদ এলাকা ছেড়ে পালানোয় পুলিশ তাঁকে খুঁজতে শুরু করে। সে ধরা পড়ার পরে পুলিশের জেরার মুখে ১ আনা পয়সার জন্য খুনের কথা কবুল করেছে বলে পুলিশের দাবি।

উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রাক্তন প্রধান আনন্দগোপাল ঘোষ বলেন, “ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে এই ধরনের মুদ্রা হয়েছিল বলে আমি শুনিনি। তবে এইটুকু বলতে পারি, কোম্পানি আমলের যে কোনও মুদ্রাই বহুমূল্য।”

kishor saha coin siliguri
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy