Advertisement
E-Paper

পুলিশের সামনে মারধরে জড়ালেন সাক্ষী-বন্দি

খুনের মামলায় জেলা হেফাজতে থাকা তিন বন্দি পুলিশের সামনেই আদালত চত্বরে মেরে এক সাক্ষীর নাক ফাটিয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার রায়গঞ্জ আদালতের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক উত্তমকুমার সাহুর এজলাসের সামনে এই ঘটনাটি ঘটেছে বলে অভিযোগ। পক্ষান্তরে, সাক্ষী ও তাঁর সঙ্গীদের বিরুদ্ধেও পাল্টা মারধরের অভিযোগ দায়ের করেছেন খুনের মামলায় অভিযুক্তদের এক জন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০১৪ ০১:৫০

খুনের মামলায় জেলা হেফাজতে থাকা তিন বন্দি পুলিশের সামনেই আদালত চত্বরে মেরে এক সাক্ষীর নাক ফাটিয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার রায়গঞ্জ আদালতের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক উত্তমকুমার সাহুর এজলাসের সামনে এই ঘটনাটি ঘটেছে বলে অভিযোগ। পক্ষান্তরে, সাক্ষী ও তাঁর সঙ্গীদের বিরুদ্ধেও পাল্টা মারধরের অভিযোগ দায়ের করেছেন খুনের মামলায় অভিযুক্তদের এক জন। পুলিশের দাবি, উভয় পক্ষের অভিযোগ নথিভুক্ত করে জেলা জজকে রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে। দু’পক্ষই তাঁদের বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগ মিথ্যে বলে দাবি করেছেন। উত্তর দিনাজপুরের পুলিশ সুপার অমিত জাভালগি বলেন, “ঘটনাটি এজলাসের সামনে ঘটেছে, তাই আমরা জেলা জজের কাছে প্রাথমিক রিপোর্ট পেশ করেছি। আদালত যেমন নির্দেশ দেবে, সেই মতো পদক্ষেপ করা হবে। ঘটনার সময়ে আদালত চত্বরে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশকর্মীদের ভূমিকাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

পুলিশ ও আদালত সূত্রের খবর, ওই দিন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারকের এজলাসে স্থানীয় কেবল টিভির আলোকচিত্রী বিশ্বজয় ঘোষকে খুনের মামলার শুনানি ছিল। ২০০৯ সালে ২৭ সেপ্টেম্বর রায়গঞ্জের উকিলপাড়া এলাকার বাসিন্দা বিশ্বজয়কে গুলি করে খুনের অভিযোগ ওঠে। অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ ৮ জনের নামে খুনের মামলা রুজু করে। মঙ্গলবার দুপুরে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের সময় খুনের ঘটনায় তিন অভিযুক্ত বিপ্লব ছেত্রী, বাবন দাস ও ভিকি সাহাকে পুলিশি নিরাপত্তায় আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়। তখন আদালতে সাক্ষ্য দিতে গিয়েছিলেন কেবল টিভি সংস্থার অন্যতম কর্ণধার অমিত সরকার। কেবল সংস্থার আরও তিন কর্ণধার উজ্জ্বল বিশ্বাস, অপূর্ব বিশ্বাস এবং তপন সাহাও সেখানে ছিলেন। ঘটনাচক্রে ওই তিন জন ২০১৩ সালে খুন হওয়া সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর সঞ্জীব বর্ধন খুনের মামলারও অন্যতম সাক্ষী। ওই মামলাতেও বিপ্লব ছেত্রী অভিযুক্ত।

অমিতবাবুর দাবি, শুনানি শুরু হওয়ার আগে তিনি আদালতের বারান্দায় দাঁড়িয়েছিলেন। ওই সময় পুলিশকর্মীরা অভিযুক্ত বিপ্লব ছেত্রী সহ তিন জনকে বিচার কক্ষে নিয়ে যাচ্ছিলেন। তখনই অমিতবাবুকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। তবে অভিযুক্তদের আইনজীবী আদালতে উপস্থিত না থাকায় শুনানি মুলতুবি হয়ে যায়। মিনিট পনেরো পরে এজলাস থেকে বের হওয়ার সময় ওই বারান্দাতেই অমিতবাবুর উপর ফের হামলা হয় বলে অভিযোগ। অভিযুক্তদের মার খেয়ে অমিতবাবুর নাক থেকে রক্ত বের হতে থাকলে, সঙ্গীরা তাঁকে আদালত চত্বরের বাইরে নিয়ে যান। অমিতবাবুর অভিযোগ, “দু’বার আমার উপর হামলা হয়েছে। প্রথমে বিপ্লব ছেত্রী আমার পেটে ঘুষি মারে। পরে বাবন ও ভিকি আমাকে মারে। নাক দিয়ে এতটাই রক্ত পরে যে, হাসপাতালে গিয়ে চিকিত্‌সা করতে হয়। তিন জনের নামেই থানায় অভিযোগ জানিয়েছি।”

অভিযুক্ত বিপ্লব ছেত্রী আদালতের ভারপ্রাপ্ত কোর্ট ইন্সপেক্টরের মাধ্যমে অমিতবাবু, উজ্বলবাবু, অপূর্ববাবু ও তপনবাবুর বিরুদ্ধে তাঁকে মারধর করার পাল্টা অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযুক্তদের আইনজীবী সুব্রত দে বলেন, “বিপ্লব ছেত্রীর বাঁ হাতে চোট থাকায় ওই দিন তাঁকে হুইল চেয়ারে চাপিয়ে এজলাসে তুলছিল পুলিশ। সে সময় অমিতবাবু, উজ্বলবাবু, অপূর্ববাবু ও তপনবাবুরা চোট লাগা হাতে প্রথমে মারেন। তাঁকে ধাক্কাধাক্কি ও মারধর করে এজলাস ছেড়ে চলে যান।”

এই ঘটনায় আদালতে পাহারায় থাকা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। রায়গঞ্জ জেলা আদালতের ভারপ্রাপ্ত কোর্ট ইন্সপেক্টর শ্যামল চট্টোপাধ্যায় তদন্ত শুরুর কথা স্বীকার করলেও কার গাফিলতিতে এমন হল, তা নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। রায়গঞ্জ বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক নারায়ণ ঘোষ বলেন, “আদালতে বিচার কক্ষের সামনে এমন ঘটনা হলে বিচারপ্রার্থীদের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে বাধ্য।” সরকারি আইনজীবী শেখর পাল বলেন, “পুলিশের উপস্থিতিতে আদালতের মারপিটের অভিযোগ ওঠা দুঃখজনক।” জেলার সরকারি আইনজীবী নীলাদ্রি সরকার বলেন, “অসুস্থতার কারণে আদালতে উপস্থিত ছিলাম না। এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না।”

raigunj court prisoner
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy