Advertisement
E-Paper

পোস্টার-হোর্ডিং সরানোয় দ্বিধা কর্মীদের

কিছুটা তৎপরতা বাড়লেও নির্বাচনের সময় লাগানো অবৈধ ব্যানার-হোর্ডিং সরাতে পুরোপুরি সাহস, শক্তি পাচ্ছেন না মডেল কোড অব কনডাক্ট (এমসিসি) সেল-এর কর্মীরা। সরকারি দফতরের দেওয়াল, লাইটপোস্ট, রাস্তার জায়গায় বাঁশ পুঁতে লাগানো পোস্টার, ব্যানার খুলতে অনেক ক্ষেত্রেই ‘যতটুকু না করলেই নয়’ গোছের মনোভাব নিয়ে চলছেন অনেকে।

সৌমিত্র কুণ্ডু

শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০১৪ ০২:২১
হিলকার্ট রোডে একটি সরকারি জায়গা থেকে বাম সংগঠনের হোর্ডিং খুলে নিচ্ছেন মডেল কোড অব কন্ডাক্টের কর্মীরা। ছবিটি তুলেছেন বিশ্বরূপ বসাক।

হিলকার্ট রোডে একটি সরকারি জায়গা থেকে বাম সংগঠনের হোর্ডিং খুলে নিচ্ছেন মডেল কোড অব কন্ডাক্টের কর্মীরা। ছবিটি তুলেছেন বিশ্বরূপ বসাক।

কিছুটা তৎপরতা বাড়লেও নির্বাচনের সময় লাগানো অবৈধ ব্যানার-হোর্ডিং সরাতে পুরোপুরি সাহস, শক্তি পাচ্ছেন না মডেল কোড অব কনডাক্ট (এমসিসি) সেল-এর কর্মীরা। সরকারি দফতরের দেওয়াল, লাইটপোস্ট, রাস্তার জায়গায় বাঁশ পুঁতে লাগানো পোস্টার, ব্যানার খুলতে অনেক ক্ষেত্রেই ‘যতটুকু না করলেই নয়’ গোছের মনোভাব নিয়ে চলছেন অনেকে। তবে হাবেভাবে তা যাতে প্রকাশ না পায় সেটাও চেষ্টা করছেন, কাজের দায়িত্ব পালন করছেন তা বোঝাতেই। বৃহস্পতিবার তাঁদের অভিযানেও সেটা ধরা পড়েছে।

শিলিগুড়িতে মডেল কোড অব কন্ডাক্টের ওসি বীরবিক্রম রাই বলেন, “কর্মীদের নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করতে বলা হয়েছে। সরকারি সম্পত্তিতে, কোনও দফতরের দেওয়ালে, লাইটপোস্টে থাকা হোর্ডিং ব্যানার খুলে ফেলা হচ্ছে। বেসরকারি জায়গা বা কারও বাড়িতে হোর্ডিং, দেওয়ালে লেখা থাকলে লিখিত অনুমতি রয়েছে কি না, তা দেখা হচ্ছে। সব কিছু ক্ষেত্রে এখনও দেখে ওঠা যায়নি। কর্মীরা বিভিন্ন এলাকায় ঘুরছেন। শীঘ্রই তাঁরা সেগুলি খতিয়ে দেখবেন।”

শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে সুপারের দফতরে ঢোকার গেটের দেওয়ালে, পাশে পূর্ত দফতরের গেটে বিজেপি প্রার্থীর প্রচারে পোস্টার সাঁটা রয়েছে। কয়েকটি রাজনৈতিক দলের হোর্ডিং, ব্যানার, ঝান্ডা টাঙানো রয়েছে হাসমিচক এবং লাগোয়া গলিগুলি রাস্তার বাতিস্তম্ভে। সরকারি দফতরের দেওয়াল, বাতিস্তম্ভে, রাস্তায় জায়গায় লাগানো পোস্টার, ব্যানার অনেক ক্ষেত্রে খুলে দিলেও ফের কিছু জায়গার নতুন করে লাগানো হচ্ছে বলে অভিযোগ। তা নিয়েও বিপত্তি দেখা দিয়েছে। এমসিসি ওসি’র দাবি, জেলা হাসপাতাল, লাগোয়া পূর্ত দফতরের অফিসের গেটের দেওয়ালে সাঁটা বেশ কিছু পোস্টার তাঁরা তুলে দিয়েছিলেন। ফের সেখানে কোনও রাজনৈতিক দল পোস্টার সেঁটেছে। কর্মীরা তা দেখবেন। রাজনৈতিক দলগুলিকেও সতর্ক করা হয়েছে। ব্যানার, পোস্টার সরিয়ে দেওয়ার পরও ফের কোনও রাজনৈতিক দলের তরফে তা লাগানো হলে প্রয়োজনে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ দিন শিলিগুড়িতে এমসিসি দলের অভিযানের কথাই ধরা যাক। বেলা ১টায় গাঁধী ময়দান লাগোয়া একটি গলি রাস্তায় বাঁশ পুঁতে তৃণমূলের তরফে লাগানো হোর্ডিং খুলতে যান তাঁরা। সঙ্গে সঙ্গে কর্মীদের এক জনের মোবাইলে ফোন আসে ওটা এক জনের বাড়ির ব্যক্তিগত গলি। হোর্ডিং খুলবেন না। ভিড়ও জমে যায়। কর্মীরা জানান, গলি হলেও রাস্তা কারও ব্যক্তিগত নয়। দ্রত হোর্ডিং খুলেই তারা চলে যান। পাশেই দেওয়ালে তৃণমূলের প্রচারে দেওয়াল লিখন রয়েছে। অনুমতি নিয়ে তা লেখা হয়েছে কি না, সেখানে কিছুক্ষণ থেকে তা নিয়ে খোঁজ খবর করতে ভরসা পাননি তাঁরা।

একই রকম ভাবে শিলিগুড়ি হিন্দি হাই স্কুলের দেওয়ালে বিজেপি, সিপিএম প্রার্থীর দেওয়াল লিখন এ দিন মুছে দিতে দেখা গিয়েছে তাঁদের। তবে তাঁর পাশে বাড়ির গাছে টাঙানো সিপিএমের হোর্ডিং-এর অনুমতি রয়েছে কি না, তা খোঁজ করেননি। দেওয়াল মোছার সময় দফতরের উদ্যোগে করা ডিভিও ফুটেজে যাতে চলে না আসেন সে জন্য পুলিশ কর্মী এবং অন্যরা দূরে দাঁড়িয়ে থাকেন। আবার একটি দেওয়ালের একাংশে সামান্য লেখা মুছতেই এ দিন তাঁদের রসদও ফুরিয়ে যায়। এর পর চুন কিনতে যেতেই প্রায় ঘন্টা খানেক সময় ব্যয় করতে হয় তাঁদের।

বেলা আাড়াইটে নাগাদ শিলিগুড়ি থানার দেওয়ালে থাকা মুখ্যমন্ত্রী এবং উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর ছবি সম্বলিত উত্তরবঙ্গ উৎসব এবং এসজেডিএ-র উদ্যোগে এক সেতু উদ্বোধনের হোর্ডিং সরিয়ে দেন তাঁরা। তবে প্রথমটায় সামনে গিয়ে কর্মীদের তা খুলে নিতে নির্দেশ দেওয়ার সময় ইতস্তত করতে দেখা যায় অভিযানের দায়িত্বে থাকা আধিকারিকদের একাংশকে। হোর্ডিং বা ব্যানার খোলার সময় ভিডিও রেকর্ডিং করে রাখে হচ্ছে।

বিধান রোড এবং ক্ষুদিরামপল্লির সংযোগস্থলে লাইটপোস্টে তৃণমূল প্রার্থীর লাগানো হোর্ডিং তাঁরা খুলে নিলেও নর্দমার উপর একটি গুমটির গায়ে লাগানো একই হোর্ডিং খুলতে ইতঃস্তত করেন কর্মীরা। দূরে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকজন পুলিশ কর্মীর দাবি, নর্দমার উপর দোকান এমনিতেই অবৈধ। তাই সেখানে লাগানো হোর্ডিং খুলে ফেলাই উচিত। তবে খুলবেন কি না, সাতপাঁচ ভেবে তা খোলা হয়নি। ক্ষুদিরামপল্লির বহু দোকানের শেডে তৃণমূলের ঝান্ডা লাগানো হয়েছে। সেগুলির একাংশের অনুমতি নিয়েও কোনও খোঁজ খবর নিতে দেখা যায়নি কর্মীদের। ব্যবসায়ীরা জানান, অনেক ক্ষেত্রেই এ ব্যাপারে অনুমতি নেওয়া হয়নি। শিলিগুড়ির থানার কাছে একটি মার্কেট কমপ্লেক্সের সীমানার রেলিংয়ে তৃণমূল প্রাথীর প্রচারে হোর্ডিং রয়েছে। রয়েছে সিপিএমের প্রার্থীর হয়ে প্রচার সভার হোর্ডিং। মার্কেট কমপ্লেক্সের মালিক জানিয়ে দেন তৃণমূল তাঁদের কাছ থেকে অনুমতি নিলেও সিপিএম এখনও নেয়নি। এ দিন খোলা হয়নি ওই হোর্ডিং। কর্মীদের একাংশ জানান, নোটিস দিয়ে তাঁরা ব্যবস্থা নেবেন।

election banner hoarding
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy