Advertisement
০২ মে ২০২৪

ফের আলুর দর ঊর্ধ্বমুখী, কালোবাজারির অভিযোগ

এক বাজার থেকে আরেক বাজারের দূরত্ব বড় জোর দেড় থেকে দুই কিলোমিটার। যানজট এড়িয়ে রিকশা বা বাইকে পৌঁছাতে সময় লাগে পনেরো মিনিট থেকে আধঘন্টা। আর তার মাঝেই বদলে যাচ্ছে একই আলুর দাম। সাদা আলু কোথাও ২৫ টাকা আবার কোথাও ২৮ টাকা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০১৪ ০১:২০
Share: Save:

এক বাজার থেকে আরেক বাজারের দূরত্ব বড় জোর দেড় থেকে দুই কিলোমিটার। যানজট এড়িয়ে রিকশা বা বাইকে পৌঁছাতে সময় লাগে পনেরো মিনিট থেকে আধঘন্টা। আর তার মাঝেই বদলে যাচ্ছে একই আলুর দাম। সাদা আলু কোথাও ২৫ টাকা আবার কোথাও ২৮ টাকা। আবার পাহাড়ের বা ভিনরাজ্যের আলু বিকোচ্ছে ৩০-৩৫ টাকা কিলো দরে। কোথাও ৪০টাকা কেজিও। শিলিগুড়ি শহর এবং লাগোয়া এলাকায় আলুর এই বাজার দরে নাজেহাল হয়ে পড়েছেন সাধারণ ক্রেতারা। সরকারি স্তরে কোথাও নজরদারি চালানো হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।

সাধারণ বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রশাসনিক নজরদারির অভাবেই এক শ্রেণির পাইকারি এবং খুচরো বিক্রেতারা দেদার মুনাফা লুঠছেন মানুষকে আলু বিক্রি করে। সরকার ১৪-১৬ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রির কথা বলেও কোথাও সেই দরে আলু বিক্রি হচ্ছে না। এমনকি, সরকারের তৈরি আলুর টাক্স ফোর্সের নায্য মূল্যের আলুর গাড়িরও আর দেখা মিলছে না। শুধু বাসিন্দারাই নন, বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন কংগ্রেস, সিপিআই-এর মত রাজ্যের বিরোধী দলগুলিও।

ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। তিনি বলেন, “কিছুদিন আগেই আমরা বিভিন্ন পক্ষকে বসে আলুর বাজার দর স্বাভাবিক রাখার নির্দেশ দিয়েছিলাম। কেন ফের এমন হচ্ছে তা দেখছি। প্রশাসনিক আধিকারিকদের সঙ্গেও কথা বলছি।” আর শিলিগুড়ি পাইকারি বাজার কমিটির চেয়ারপার্সন তথা মহকুমা শাসক দীপাপ প্রিয়া বলেন, “বাজারে জ্যোতি আলুর ১৬ টাকা কিলোর বেশি বিক্রির কথা নয়। তবে পাহাড়, ভিনরাজ্যের কিছু আলুর দামের পার্থক্য রয়েছে। আমাদের নজরেও দামের বিষয়টি এসেছে। আমরা দেখছি।”

শিলিগুড়ির বিধান মাকের্ট, মহাবীরস্থান উড়ালপুল, সুভাষপল্লি, ঝংকার মোড়, হায়দারপাড়া বাজারে কার্যত আলাদা আলাদা দরে কেজি প্রতি আলু বিক্রি হতে দেখা গিয়েছে। সাদা বা জ্যোতি আলু ২৫-২৮ টাকা কিলো দরে বিক্রি হয়েছে। সেখানে লাল এবং পাহাড়ের আলু ৩০-৩৫ টাকা কিলোর নিচে দেখাই মেলেনি। আবার কয়েকটি বাজারে ‘স্থানীয়’ আলু বলে ৪০ টাকা কিলো দরেও নতুন আলু বিক্রি হয়েছে। বুধবার বিধান মার্কেটে প্রায় সব কজন বিক্রেতা ন্যূনতম ২৮ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি করেছেন। ভুটানের আলুর দাম সেখানে ৪০ টাকা কেজি। দরদাম করলে বিক্রেতাদের একাংশ দুর্ব্যবহার করছেন বলেও ক্রেতাদের অনেকের অভিযোগ।

সিপিআই-র জেলা সম্পাদক উজ্জ্বল চৌধুরী বলেন, “এদিনই বাজারে গিয়ে দেখেছি, আলুতে যেন ফের আগুন লেগেছে। কোনও বাজারে ২৫ টাকার নিচে আলু বিক্রিই হচ্ছে না। সরকার কী করছে বোঝাই যাচ্ছে না।” জেলা কংগ্রেস নেতা সুবীন ভৌমিক বলেন, “সরকারি নিয়ন্ত্রণ, নজরদারি বলে কিছুই নেই। একাংশ ব্যবসায়ী যা ইচ্ছা তাই করছেন। দুর্ভোগে পড়ছেন সাধারণ মানুষ।”

খুচরো ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, “আমরা পাইকারি বাজারে যে দামে পাচ্ছি, তার সঙ্গে সামান্য কিছু লাভ এবং পরিবহণ খরচ ধরে বিক্রি করছি। এদিনও পাকারি বাজার থেকে ২০ টাকা কিলো দরে আলু কিনতে হয়েছে। অন্য আলু ২৮ টাকা অবধিও বিক্রি হয়েছে। এতে সাধারণ বিক্রেতাদের কিছুই করার থাকছে না।” শহরের আলু আলু ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, উত্তরবঙ্গে এবার হিমঘরে ১ কোটি ২০ লক্ষ বস্তা আলু ছিল। জুন মাস থেকে তা বিক্রি হয়ে আসছে। বর্তমানে কৃষকদের বীজ তৈরির জন্য ওই আলুর ২০-২২ শতাংশ বস্তাই রয়েছে। বাকি আলু শেষ হয়ে গিয়েছে। তা ছাড়া সেপ্টেম্বর, অক্টোবর মাসে বৃষ্টি হওয়ায় স্থানীয় বহু খেতে নতুন আলু নষ্ট হয়েছে। শিলিগুড়ি মহকুমাতেই প্রায় ১০০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। তবে বৃষ্টির জন্য চাষিরা সমস্যা পড়ায়, ওই নতুন আলুও নভেম্বর মাসের শেষের আগে ওটার সম্ভাবনা নেই। আর ছত্তিশগড় এবং পঞ্জাবের থেকে এখনও পুরোদমে আলু আসা শুরু না হওয়ায় সমস্যা বেড়েছে। এতে পাইকারি ব্যবসায়ীদেরও বেশি দামে আলু কিনতে হচ্ছে।

উত্তরবঙ্গ আলু ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক কার্তিক দাস বলেন, “ব্যবসায়ীদেরও বেশি দামে আলু কিনতে হচ্ছে। পুজোর সময় থেকেই আলুর সরবরাহ কমতে শুরু করে। হিমঘরেও বিক্রির আলু প্রায় শেষ। তবে আমাদের আশা, এ মাসের শেষের দিকে পরিস্থিতি পাল্টাতে শুরু করবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

potato price siliguri rising
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE