Advertisement
০৩ মে ২০২৪

ফের ঝড়বৃষ্টি, বিপর্যস্ত তিন জেলার জনজীবন

ঝড় বৃষ্টির জেরে বিপর্যস্ত হল উত্তরের তিনটি জেলার একাংশ। গত বুধবার সন্ধ্যা থেকে রাত অবধি দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি এবং কোচবিহারে ঝড়-বৃষ্টির দাপট চলে। বিদ্যুৎ পরিষেবা বন্ধ হওয়া ছাড়াও ঘরবাড়ি, ফসলের ক্ষতি হয়েছে। রাত ৮টা নাগাদ আধঘণ্টার ঝড়ে শিলিগুড়ি মহকুমার নকশালবাড়ি ব্লকে বাড়িঘরের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে মাটিগাড়া ব্লক এলাকাতেও। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, রাতের ঝড়ে নকশালবাড়ির ৫০টি বাড়ির চাল উড়ে গিয়েছে।

ঝড়ের চিহ্ন। (বাঁ দিকে) জাতীয় সড়কে পড়ে বিদ্যুতের খুঁটি। (ডান দিকে) ময়নাগুড়িতে। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক।

ঝড়ের চিহ্ন। (বাঁ দিকে) জাতীয় সড়কে পড়ে বিদ্যুতের খুঁটি। (ডান দিকে) ময়নাগুড়িতে। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০১৪ ০১:৫৫
Share: Save:

ঝড় বৃষ্টির জেরে বিপর্যস্ত হল উত্তরের তিনটি জেলার একাংশ। গত বুধবার সন্ধ্যা থেকে রাত অবধি দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি এবং কোচবিহারে ঝড়-বৃষ্টির দাপট চলে। বিদ্যুৎ পরিষেবা বন্ধ হওয়া ছাড়াও ঘরবাড়ি, ফসলের ক্ষতি হয়েছে।

রাত ৮টা নাগাদ আধঘণ্টার ঝড়ে শিলিগুড়ি মহকুমার নকশালবাড়ি ব্লকে বাড়িঘরের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে মাটিগাড়া ব্লক এলাকাতেও। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, রাতের ঝড়ে নকশালবাড়ির ৫০টি বাড়ির চাল উড়ে গিয়েছে। আরও কিছু বাড়ির দরমার বেড়া ঝড়ে ভেঙে গিয়েছে। এর আগে ১ মে’র ঝড়েও বেশকিছু বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। সবগুলিকে চিহ্নিত করে ত্রাণের ব্যবস্থা শুরু করেছে প্রশাসন। দুদিনের ঝড়ে মোট ১২৫ টি বাড়ির ক্ষতি হয়েছে। ১১০০ বাড়ির আংশিক ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন নকশালবাড়ি ব্লকের ত্রাণ আধিকারিক যামিনীকান্ত দাস। রাতে মাটিগাড়ার উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে একটি বড় গাছ পড়ে রোগীকে পৌঁছতে আসা একটি গাড়ি দুমড়ে মুচড়ে যায়। শিলিগুড়ি শহর এবং লাগোয়া এলাকা জুড়েও রাতে প্রবল বৃষ্টি হয়। নকশালবাড়ির বিডিও কিংশুক মাইতি জানান, ত্রাণ বিলির কাজ শুরু হয়েছে। প্রায় ৬০০ পরিবারকে ত্রিপল দেওয়া হয়েছে। আরও কিছু দেওয়া হবে। তবে হতাহতের কোনও খবর নেই।”

আধঘন্টার ঝড় ও শিলাবৃষ্টির জেরে কোচবিহারের বিস্তীর্ণ এলাকায় প্রায় ১৫০ হেক্টর জমির বোরো ধান, পাট, সব্জি চাষের খেতের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছে ৯ হেক্টর জমি এলাকার ভুট্টা, তরমুজ খেতও। লঙ্কা, পটল, ঝিঙে, বেগুনের মত সব্জি চাষেও বিস্তর ক্ষতি হয়েছে। কিছু এলাকায় কাঁচা বাড়ির ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি কোচবিহার সদর মহকুমার অন্তত তিনটি এলাকায় বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে গিয়েছে। জেলাশাসক মোহন গাঁধী বলেন, “বিডিওদের কাছ থেকে ক্ষয়ক্ষতির রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। কৃষি দফতরের আধিকারিকেরাও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দেখছেন।”

রাত নয়টা নাগাদ কোচবিহারে দমকা হাওয়া, বৃষ্টি শুরু হয়। তার কিছুক্ষণের মধ্যে কোচবিহার সদর ও তুফানগঞ্জ মহকুমার কিছু এলাকায় ব্যাপক ঝড় ও শিলাবৃষ্টি শুরু হয়। মাত্র কুড়ি মিনিটের ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে দুই মহকুমার বলরামপুর ১, ২ ও কোচবিহার সদরের দেওয়ানহাট গ্রাম পঞ্চায়েতের বিস্তীর্ণ এলাকায় ধান, পাট, সব্জি খেত লন্ডভন্ড হয়ে যায়। কোচবিহার সদরের সহকারি কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) বলরাম দাস বলেন, “তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েত থেকেই প্রাথমিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির রিপোর্ট এসেছে। বিস্তারিত খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।” আলু-ধান-পাট ধান চাষি সংগ্রাম সমিতির সম্পাদক নৃপেন কার্জি বলেন, “ক্ষতিগ্রস্থ চাষিদের ১০ হাজার টাকা করে এককালীন আর্থিক সাহায্য দেওয়ার দাবি তুলেছি।” ঝড়বৃষ্টির জেরে রাতে কোচবিহার-দিনহাটা রাস্তায় দেওয়ানহাটের কাছে দুটি ছোট গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে উল্টে পড়ায় প্রায় আধঘন্টা যান চলাচল ব্যাহত হয়।


শিলিগুড়ির অদূরে পেলকুজোত এলাকায় ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

ওইদিন সন্ধ্যা ৭টা থেকে দুই দফায় বাজ-সহ প্রবল ঝড়-বৃষ্টির জেরে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে ময়নাগুড়ি শহর ও সংলগ্ন এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা। ঝড়ের দাপটে বিদ্যুতের কংক্রিটের খুঁটি উপড়ে কয়েক ফুট দূরে ছিটকে পড়ে। রাস্তার পাশে থাকা গাছ উপড়ে ও ডাল তাতে ভেঙে পড়ে জড়িয়ে যায়। ছিঁড়ে পড়ে টেলিফোনের তারও। এলাকায় গাড়ি চলাচল বিপর্যস্ত হয়ে যায়। রাতে গাছগুলি সরানো হলেও বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে পাঁচটায় আগে বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক হয়। দিনভর টেলিফোন, ইন্টারনেট পরিষেবায় সমস্যা দেখা দেয়। ব্যাঙ্কের এটিএম, বিদ্যুতের বিল সহ অন্য সমস্ত দফতরের পরিষেবাও ব্যাহত হয়।

ময়নাগুড়ির বিডিও সংহিতা তলাপাত্র বলেন, “শহর এলাকায় ক্ষতক্ষতি হয়েছে। বিদ্যুৎ পরিষেবা, ঘরবাড়ির ক্ষতি হয়েছে।” বিদ্যুৎ বন্টন কোম্পানিরর ময়নাগুড়ির স্টেশন ম্যানেজার সোনম ডুকপা জানান, অন্তত ১৯টি বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়েছে। গাছের ডাল ভেঙে প্রচুর জায়গায় তার ছিঁড়েছে। বাজ পড়ে কয়েকটি ট্রান্সফর্মার বিকল হয়েছে। পরিষেবা স্বাভাবিক করার জন্য কাজ চলছে। মাঝখানে ভেঙে ঝুলে পড়েছে আরও অন্তত ১১টি খুঁটি। সার্ক রোড সংযোগকারী রাস্তা ও ময়নাগুড়ি-মালবাজার ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে বিদুতের তার ও খুঁটির সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

বাসিন্দারা জানান, ময়নাগুড়ি-মালবাজার ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক, ইন্দিরা মোড় সংলগ্ন সার্ক রোড সংযোগকারী রাস্তা, হাসপাতাল রোডে গাছ ভেঙে, খুঁটি উপড়ে পড়ে। যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পথচারীরা রাস্তার পাশে স্কুটার, বাইক, গাড়ি রেখে বিভিন্ন দোকানে আশ্রয় নেন। গাছের ডাল ভেঙে কিছু গাড়ির ক্ষতি হয়। সুভাষনগর, দেবীনগর, আনন্দনগর, বাগজান, দক্ষিণ মৌয়ামারি-সহ বিভিন্ন এলাকায় গাছের ডাল ভেঙে প্রচুর বাড়ির টিনের চাল ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ছয়টি বাড়ির ইনর্ভাটার জ্বলে যায়। ময়নাগুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান কমল দাস জানান, প্রাথমিক সমীক্ষায় ২৫টি ক্ষতিগ্রস্থ বাড়ি মিলেছে। এলাকায় ত্রাণ সামগ্রী পাঠানো হয়েছেয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

storm raining uttarbanga
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE