Advertisement
E-Paper

বিদ্যুৎ-বিভ্রাটে নাকাল, পথ অবরোধে বাসিন্দারা

তীব্র গরম, তার সঙ্গে লোডশেডিং। জোড়া সমস্যার জেরে নাজেহাল উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকার জনজীবন। কোথাও টানা বিদ্যুৎ নেই। কোথাও আবার বিদ্যুৎ থাকলেও লো-ভোল্টেজ। শিলিগুড়ি, কোচবিহার, উত্তর দিনাজপুর বা দক্ষিণ দিনাজপুরের বিদ্যুৎ পরিষেবার কার্যত একই হাল। বিদ্যুৎ বিভ্রাটের প্রতিবাদে মঙ্গলবার মালদহের দু’জায়গায় রাজ্য ও জাতীয় সড়ক অবরোধও হয়। বিশ্বকাপের খেলা দেখতে না পেয়েও ক্ষোভ আরও বেড়ছে কিছু বাসিন্দার।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০১৪ ০২:২০
হরিশ্চন্দ্রপুরে পথ অবরোধে বাসিন্দারা। —নিজস্ব চিত্র।

হরিশ্চন্দ্রপুরে পথ অবরোধে বাসিন্দারা। —নিজস্ব চিত্র।

তীব্র গরম, তার সঙ্গে লোডশেডিং। জোড়া সমস্যার জেরে নাজেহাল উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকার জনজীবন। কোথাও টানা বিদ্যুৎ নেই। কোথাও আবার বিদ্যুৎ থাকলেও লো-ভোল্টেজ। শিলিগুড়ি, কোচবিহার, উত্তর দিনাজপুর বা দক্ষিণ দিনাজপুরের বিদ্যুৎ পরিষেবার কার্যত একই হাল। বিদ্যুৎ বিভ্রাটের প্রতিবাদে মঙ্গলবার মালদহের দু’জায়গায় রাজ্য ও জাতীয় সড়ক অবরোধও হয়। বিশ্বকাপের খেলা দেখতে না পেয়েও ক্ষোভ আরও বেড়ছে কিছু বাসিন্দার।

মঙ্গলবার মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের কনুয়া ও রতুয়ার পরাণপুর কালীতলায় মঙ্গলবার সকাল থেকে ওই অবরোধ-বিক্ষোভ হয়। বাসিন্দাদের অভিযোগ, দু’টি এলাকাতেই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অর্ধেক সময়ও বিদ্যুৎ থাকে না। যেটুকু সময় তখনও ভোল্টেজ এতটাই কম যে কোনও কাজেই আসে না। কর্তৃপক্ষকে বারবার বলার পরেও সমস্যা না মেটায় নাগরিক মঞ্চ গড়ে এদিন সকাল ৯টা থেকে কনুয়ায় ৮১ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন কয়েকশ বাসিন্দা। পরে বিদ্যুৎ বন্টন কোম্পানীর কর্মীরা এলাকায় কাজে গেলে তাঁদের গাড়ি আটকে রাখা হয়। একই অভিযোগে পরাণপুরে সকাল ৮টা থেকে রতুয়া-মালদহ রাজ্য সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু হয়। সকাল থেকেই দু’টি এলাকায় প্রায় ঘণ্টা পাঁচেক অবরোধে যোগাযোগ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ায় চূড়ান্ত নাকাল হন যাত্রীরা।

পরানপুরে বিদ্যুৎ বন্টন কোম্পানির কর্তাদের আশ্বাসে দুপুর ১টায় অবরোধ উঠে যায়। কিন্তু কনুয়ায় দফতরের তরফে কেউ এলাকায় যাননি বলে অভিযোগ। এমনকী ব্লক ও মহকুমা প্রশাসনের তরফে একাধিকবার দফতরের কর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কেউ এলাকায় যাননি বলে অভিযোগ। বিদ্যুৎ বন্টন কোম্পানীর ওই ভূমিকায় ক্ষুব্ধ প্রশাসনও। বিডিও ও পুলিশের হস্তক্ষেপে দুপুর দু’টোয় অবরোধ ওঠে। বিদ্যুৎ বন্টন কোম্পানির উত্তর মালদহের ডিভিশনাল ম্যানেজার সুমিত চৌধুরী বলেন, “কনুয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হওয়ার পরও কেন ওখানে জাতীয় সড়ক অবরোধ করে রাখা হল সেটা বুঝতে পারছি না। আর পরানপুর এলাকার সমস্যা যাতে দ্রুত মেটে তা দেখা হচ্ছে।” হরিশ্চন্দ্রপুরের বিডিও বিপ্লব রায় বলেন, “কনুয়ায় বিদ্যুৎ বন্টন কোম্পানির কেউ যাননি। ফলে বিদ্যুৎ বন্টন কোম্পানির দফতরে গিয়ে সমস্যা নিয়ে আন্দোলনকারীদের আলোচনা করার কথা বলা হয়েছে।”

বাসিন্দারা জানান, গরম পড়তেই কনুয়া, ভবানীপুর, কাবিলখানি, ইশাদপুর-সহ আটটি গ্রামের বাসিন্দাদের লোডশেডিংয়ের জেরে নাভিশ্বাস উঠেছে। কনুুয়া-সহ ওই আটটি এলাকায় সোমবার রাত থেকে এ দিন সকাল পর্যন্ত টানা ১০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছিল না। অষ্টগ্রাম নাগরিক মঞ্চ তৈরি করে বাসিন্দারা আন্দোলনে নামেন। মঞ্চের আহ্বায়ক আসরাফুল হক বলেন, “কনুয়ায় দুটি উচ্চমাধ্যমিক স্কুল গ্রন্থাগার, প্রাথমিক স্কুল রয়েছে। বিদ্যুৎ বিভ্রাটে কয়েক হাজার পড়ুয়ার পাশাপাশি সাধারণ মানুষদেরও গরমে নাভিশ্বাস উঠেছে। দিন-রাত মিলিয়ে অর্ধেক সময় বিদ্যুৎ থাকে না।”

নাজেহাল শিলিগুড়িও। গত দু’দিন ধরে শিলিগুড়ি এবং লাগোয়া এলাকায় এমনই বিদ্যুতের বিভ্রাটের জেরে বাসিন্দাদের ভোগান্তি চরমে উঠেছে। কোথাও দফায় দফায় ৭ থেকে ৮ বার। আবার কোথাও টানা ঘণ্টাখানেক। গত সোমবার সন্ধ্যা থেকে গভীর রাতের পর মঙ্গলবার রাত অবধি শহরের বিভিন্ন এলাকায় বহুবার লোডশেডিং হয়। ভারতনগর, বর্ধমান রোড, বিদ্যাসাগরপল্লি, হাকিমপাড়া। আশ্রমপাড়া, পূর্ব বিবেকানন্দপল্লি, প্রধাননগর, মিলনপল্লি-সহ বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট হয়। তারমধ্যে গত ৪৮ ঘণ্টা শিলিগুড়ি জুড়ে তীব্র দাবাদহ চলতে থাকায় বাসিন্দাদের ভোগান্তি বেড়েছে।

বাসিন্দারা জানান, শিলিগুড়ির তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির আশেপাশে ঘোরাফের করছে। এর মধ্যে সন্ধ্যার পর থেকে লোডশেডিং শুরু হচ্ছে। কখন ১০ মিনিট, কখনও আধঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না।” এ দিন সকাল ফের শুরু হয়ে যায় দফায় দফায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট। হিলকার্ট রোড, সেবক রোড, স্টেশন ফিডার, বিধান রোডের মত এলাকায় সন্ধ্যা অবধি দফায় দফায় লোডশেডিং হয়েছে। একই সমস্যায় দেখা দেয় ভারতনগর, ডাবগ্রাম, সুভাষপল্লি এলাকায়। বহু বাসিন্দা বিদ্যুৎ বিভ্রাটের জেরে সকালে পাম্পে জলও তুলতে পারেননি বলে অভিযোগ।

উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুর শহরের বিভিন্ন এলাকাতেও লো-ভোল্টেজ সমস্যা দেখা দিয়েছে। সেই সঙ্গে চলছে বিদ্যুৎ বিভ্রাট। বাসিন্দারা জানান, বেশির ভাগ বাড়িতেই কম ভোল্টেজের কারণে পাখা, টিভি ঠিকমত চলছে না। তার উপরে লোডশেডিং-এ নাকাল হতে হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে বিদ্যুৎ বন্টন কোম্পানির ইসলামপুরের ডিভিশন ম্যানেজার রমেশ মধু বলেন, “চাহিদা বেশি হওয়ায় ভোল্টেজ নিয়ে সাময়িক সমস্যা তৈরি হয়েছে। খুব শীঘ্রই সমস্যা মিটে যাবে।” এদিন দুপুরে ইসলামপুর শহরের প্রায় প্রতিটি এলাকাতেই আধঘন্টা করে বিদ্যুত পরিষেবা বন্ধ ছিল। একই অবস্থা চোপড়া, গোয়ালপোখর, চাকুলিয়ার। রাত দুটোর পর লোডশেডিং হয়, বিদ্যুৎ আসে ভোরের দিকে। রায়গঞ্জ শহরের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষিপ্তভাবে লোডশেডিং হচ্ছে।

কোচবিহার জেলার মাথাভাঙা এবং সদর মহকুমার সমস্যা প্রকট। বাসিন্দাদের অভিযোগ, সারাদিন থেকে শুরু করে রাতভর দফায় দফায় লোডশেডিং হচ্ছে। তৃণমূলের মাথাভাঙার নেতা আলিজার রহমান বলেন, “রাজ্যে বিদ্যুৎ যথেষ্ট। তার পরেও জেলার কিছু আধিকারিকদের গাফিলতির জেরে ঘন ঘন লোডশেডিং হচ্ছে। মাথাভাঙার কিছু প্লাইউড কারাখানা ক্ষতির মুখে পড়েছে।” বিদ্যুৎ বন্টন কোম্পানির কোচবিহারের ডিভিশনাল ম্যানেজার বিষ্ণু দত্ত বলেন, “বিদ্যুতের ঘাটতি নেই। স্থানীয় কোনও সমস্যার জেরে অসুবিধা হচ্ছে।” দক্ষিণ দিনাজপুরের একই দশা। এদিন দুপুরে এক পশলা বৃষ্টি নামতে বালুরঘাটে লোডশেডিং শুরু হয়। তারআগে শহরের বেলতলাপার্ক, রঘুনাথপুর, খিদিরপুর, সাহেবকাছারি, উত্তমাশা এলাকায় দীর্ঘ সময় ধরে লোডশেডিং হয়। জলপাইগুড়িতে কিছুটা স্বাভাবিক পরিস্থিতি থাকলেও ময়নাগুড়িতে বিদ্যুৎ বিভ্রাট ছিল। দুপুরে চারবার লোডশেডিং হয়।

power cut loadshedding distress harishchandrapur
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy