Advertisement
০২ জুন ২০২৪

বাম জমানায় কী পেয়েছি, ক্ষোভের মুখে বিধায়কেরা

বন্ধ রায়পুর চা বাগান পরিদর্শনে গিয়ে বাসিন্দাদের ক্ষোভের মুখে পড়লেন বাম বিধায়কেররা। ক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা তাঁদের কাছে জানতে চাইলেন, “বামফ্রন্টের জমানায় বন্ধ বাগানের মানুষ কী পেয়েছে?” শুক্রবার সকাল দশটা নাগাদ সাত বাম বিধায়ক যখন রায়পুর বাগানে যান তখন সেখানে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি। তাঁরা গাড়ি থেকে নেমে বাগানের অফিস ঘরের বারান্দায় ওঠেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
জলপাইগুড়ি ও ফালাকাটা শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০১৪ ০২:৩০
Share: Save:

বন্ধ রায়পুর চা বাগান পরিদর্শনে গিয়ে বাসিন্দাদের ক্ষোভের মুখে পড়লেন বাম বিধায়কেররা। ক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা তাঁদের কাছে জানতে চাইলেন, “বামফ্রন্টের জমানায় বন্ধ বাগানের মানুষ কী পেয়েছে?”

শুক্রবার সকাল দশটা নাগাদ সাত বাম বিধায়ক যখন রায়পুর বাগানে যান তখন সেখানে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি। তাঁরা গাড়ি থেকে নেমে বাগানের অফিস ঘরের বারান্দায় ওঠেন। নেতৃত্বে ছিলেন আরএসপি বিধায়ক সুভাষ নস্কর। অন্য বিধায়কদের মধ্যে ছিলেন উপেন কিস্কু, পরেশ অধিকারী, মনোজ ওঁরাও, মমতা রায়, বুলু চিক বড়াইক এবং অক্ষয় ঠাকুর। ওই ঘরের বারান্দাতেই দাঁড়িয়ে থাকা শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেন বিধায়কেরা। সেই সময়, সুভাষবাবু অভিযোগ করেন, “রাজ্য সরকারের অপদার্থতার জন্য শ্রমিকরা বিপাকে পড়েছেন। একের পর এক মৃত্যুর পরেও তাঁদের টনক নড়ছে না।”এ কথা শুনে ক্ষোভে ফেটে পড়েন কয়েক মাস আগে সিপিএম থেকে তৃণমূলে যোগ দেওয়া স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য প্রধান হেমব্রম। তিনি পাল্টা প্রশ্ন করেন, “এখন ওই কথা উঠছে কেন? বামফ্রন্ট দীর্ঘদিন ক্ষমতায় ছিল। কী করেছে বাগানের শ্রমিকদের জন্য?

সুভাষবাবুর পাশে বসেছিলেন পরেশ অধিকারী। তিনি প্রধানবাবুকে শান্ত করার চেষ্টা করলে রবি মুন্ডা, বুধন মুন্ডা, সাধু ওঁরাও, বিরসা মুন্ডার মত শ্রমিকরা প্রশ্ন তোলেন, “আমরা কি চিড়িয়াখানার জন্তু! প্রতিদিন গাড়ি নিয়ে আমাদের দেখতে আসবেন আর ভাষণ দিয়ে চলে যাবেন! ত্রাণ চাই না। বাগান খোলার ব্যবস্থা করুন।” প্রধান বলেন, “আগে সিপিএমে ছিলাম। বাগান আজ বন্ধ হয়নি। আপনারা কোনও ব্যবস্থা নেননি।” পরিস্থিতি সামাল দিতে বিধায়কেরা চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে শ্রমিকদের শান্ত করেন।

সুভাষবাবু শ্রমিকদের জানান, রায়পুর বাগানে মৃত্যুর মিছিলের খবর পেয়ে তাঁরা বিষয়টি বিধানসভায় তোলার চেষ্টা করছেন। কিন্তু সুযোগ দেওয়া হয়নি। বিধায়কদের অভিযোগ, “মন্ত্রীরা দাবি করছেন অনাহারে কেউ মারা যায়নি। কিন্তু শ্রমিকদের চেহারা ও চোখমুখ অন্য কথা বলছে।” রাজ্য সরকারের কাছে মৃত শ্রমিকদের পরিবার পিছু দু’লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্যের দাবি করেন তিনি। কথা শেষ না হতে কয়েকজন শ্রমিক ফের গলা চড়িয়ে জানতে চান, “বামফ্রন্টের আমলে শ্রমিকের মৃত্যু হয়নি?” সুভাষবাবু ফের শান্ত হতে অনুরোধ করে বলেন, “আমরা এখানে বিবাদ করতে আসিনি। আপনাদের মত আমরাও চাই বাগান খুলুক, মৃত্যু বন্ধ হোক। মৃত্যুর কারণ নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে কিন্তু কোনও মৃত্যুই কাম্য নয়। এখান থেকে ফিরে বিধানসভার বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রীকে বাগানের পরিস্থিতির কথা জানাব।”

তাতেও শ্রমিকদের ক্ষোভ কমেনি। পরেশবাবু, উপেনবাবু এরপর জানতে চান, “আপনারা কি মনে করেন দু’লক্ষ টাকা মৃত শ্রমিকের পরিবার পেলে খারাপ হবে?” শ্রমিকেরা জানান, “সেটা দিলে ভাল। কিন্তু বাগান খোলার ব্যবস্থা করতে হবে।” প্রায় চল্লিশ মিনিট বিধায়কেরা শ্রমিক বস্তির দিকে রওনা দেন। কাদাজল ভেঙে মৃত শ্রমিক পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন।

এ দিন রায়পুরে যান এগারোটি শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিরাও। সেই দলে ছিলেন চা শ্রমিক সংগঠনের যৌথ কমিটির আহ্বায়ক চিত্ত দে, ইউটিইউসির বরুণ চৌধুরী, গোপাল প্রধান, আইএনটিইউসির রমেন পাণ্ডে, বিএমএসের সত্যব্রত দাস, এআইটিইউসির আনিসুর হক, এআইসিসিটিইউর বাসুদেব বসু, সিটুর সমন পাঠক, জিয়াউল আলম-সহ অন্য শ্রমিক নেতারা। ওই বাগানে সরকারি সমীক্ষার পদ্ধতি নিয়েই ক্ষোভ জানান রমেনবাবু-সহ অন্য নেতারা। রমেনবাবুর অভিযোগ, বাগানে স্বাস্থ্য শিবির চলছে একটি ঘরে। তাই শয্যাশায়ী একাধিক বাসিন্দার পক্ষে বাগানে আসা কার্যত অসম্ভব বলে তিনি জানান। খাদ্য দফতরের সমীক্ষাও হচ্ছে একই ভাবে। রমেনবাবু জানান, এ দিন বাগানে তাঁরা এন্ড্রা মুন্ডা নামে এক বৃদ্ধাকে দেখেন, যাঁর শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ। সেখান থেকেই তাঁরা জেলাশাসক পৃথা সরকারকে ফোন করে তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করানোর অনুরোধ জানান।

বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ বিধায়করা চলে যান ডুয়ার্সে। সেখানে রেডব্যাঙ্ক বাগানে মৃতদের পরিবারকে এককালীন দু’লক্ষ টাকা অনুদান দেওয়ার দাবি তোলেন বাম বিধায়কেরা। শ্রমিকেরা বলেন, “বাগান চালু না হলে আমাদের সমস্যা মিটবে না। আপনারা সরকারকে বাগান চালু করার জন্য চাপ দিন।” সুভাষবাবুর বলেন, “বাগান ঘুরে গিয়ে দুরবস্থার বিষয়টি বিরোধী দলনেতার কাছে তুলে ধরব।” ফরওয়ার্ড ব্লক বিধায়ক পরেশ অধিকারী বলেন, “বিষমদে মৃতদের পরিবারকে সরকার দু’লক্ষ টাকা অনুদান দিলে চা বাগানের ক্ষেত্রে কেন দেওয়া হবে না।”

রায়পুর চা বাগানে বাম বিধায়কদের সঙ্গে কথা বলছেন শ্রমিকেরা। শুক্রবার দুপুরে সন্দীপ পালের তোলা ছবি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

aipu tea gaden agitation of wokes mla falakata
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE