কয়েকদিন আগেই তৃণমূলের দার্জিলিং জেলা সভাপতি তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব শিলিগুড়ির কংগ্রেস পুরবোর্ড উন্নয়নে পুরোপুরি ব্যর্থ বলে তোপ দেগেছেন। কিন্তু, মঙ্গলবার শিলিগুড়ির বাঘাযতীন পার্কে শতাধিক প্রকল্পের ঘোষণার প্রকাশ্য সভায় গিয়ে সেই কংগ্রেস পরিচালিত পুরবোর্ডের ভূয়সী প্রশংসা করলেন তৃণমূল কাউন্সিলর তথা পুর চেয়ারম্যান অরিন্দম মিত্র।
এই ঘটনার জেরে বিতর্ক দানা বেঁধেছে তৃণমূলের অন্দরেই। তৃণমূল সূত্রের খবর, একাধিক তৃণমূল কাউন্সিলর ওই ঘটনাকে কেন দলবিরোধী কাজ হিসেবে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না সেই প্রশ্ন তুলেছেন। পক্ষান্তরে, তৃণমূলের কয়েকজন নেতা অরিন্দমবাবু চেয়ারম্যান হিসেবে ওই সভায় গিয়ে নিরপেক্ষ মতামত প্রকাশ করেছেন বলে যুক্তি দিয়েছেন। যা শোনার পরে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতমবাবুর মন্তব্য, “কংগ্রেস পরিচালিত পুরবোর্ডের অনুষ্ঠানে অরিন্দম মিত্র কোন প্রেক্ষাপটে, কী বলেছেন তা বিশদে খোঁজ নিয়ে দেখব। তার পরেই তা বলার বলব।”
যাঁকে ঘিরে এত বিতর্ক সেই অরিন্দমবাবু কিন্তু মনে করেন, তিনি ঠিক কাজই করেছেন। তাঁর কথায়, “যাঁরা বলছেন, পুর পরিষেবা বেহাল হয়ে পড়েছে, তাঁরা ঠিক বলছেন না। আমি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় বলছি, বাম আমলের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি কাজ হয়েছে।” তাঁর নিজের দল তৃণমূল ক’দিন আগে পুরবোর্ডের বিরুদ্ধে অনাস্থা এনেছে। খোদ উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী প্রতি পদে পুরবোর্ডকে ব্যর্থ বলে অভিযোগ করেন। তা হলে তিনি দলের নেতা-কাউন্সিলরদের সঙ্গে সহমত নন? অরিন্দমবাবু বলেন, “এটা আমার ব্যক্তিগত মতামত। দলের বিষয়ে দলীয় নেতৃত্ব বলবেন।”
এই ঘটনায় কংগ্রেস শিবির উল্লসিত। শিলিগুড়ি পুরসভার মেয়র তথা কংগ্রেস নেত্রী গঙ্গোত্রী দত্ত বলেন, “অরিন্দমবাবু চেয়ারম্যান হিসেবে নিরপেক্ষ মতামত দিয়েছেন। এতে রাজনীতি খোঁজা ঠিক নয়।” অরিন্দমবাবুর বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়ে জেলা কংগ্রেস সভাপতি শঙ্কর মালাকার বলেন, “পুরসভা ভাল কাজ করছে। সেটা অন্তত অরিন্দমবাবু বুঝতে পেরেছেন। সে জন্য ওঁকে ধন্যবাদ।”
বাম শিবির অবশ্য দাবি করছে, তারা দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূল ও কংগ্রেসের মধ্যে যে আঁতাত চলছে বলে অভিযোগ করছেন, সেটাই স্পষ্ট হয়েছে। পুরসভার বিরোধী দলনেতা নুরুল ইসলাম বলেন, “দু’দল জোটে জিতে পুরবোর্ড দখল করেছিল। কিন্তু পরে নিজেদের মধ্যে রেষারেষিতে বোর্ড ছাড়ে তৃণমূল। তবে তলে তলে দু’দলই বোঝাপড়া করে চলছে। এখন পুরভোটের আগে তা ক্রমশ প্রকাশ্যে আসছে। সত্যি কোনদিন চেপে রাখা যায় না।”
তবে অরিন্দমবাবুর বক্তব্যকে গুরুত্ব দিতে নারাজ তৃণমূল কাউন্সিলর রঞ্জন শীলশর্মা। তিনি বলেন, “দল মনে করছে, পুরসভা ব্যর্থ। কে কী বলল তা নিয়ে মাথা ঘামানোর কোনও মানে হয় না।” কংগ্রেস পরিচালিত পুরবোর্ডের সমালোচনা করেছেন তৃণমূলের অন্যতম জেলা সম্পাদক কৃষ্ণ পালও। তিনি বলেন, “আমরা দলীয়ভাবে পুরবোর্ডের কাজের বিরোধিতা করেছি। কংগ্রেস পরিচালিত পুরসভা সম্পূর্ণ ব্যর্থ।” তবে অরিন্দমবাবুর বক্তব্য নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি তিনি। আরেক তৃণমূল কাউন্সিলর নিখিল সাহানি সরাসরি অভিযোগ তোলেন মেয়রের প্রতি। তিনি বলেন, “যেখানে অনুষ্ঠান হয়েছে সেখানকার বরো চেয়ারম্যান আমি। আমাকে ডাকা হয়নি। কাকে দিয়ে কাজ হাসিল হবে সেটা বুঝেই হয়তো ওঁরা ডাকেন। উন্নয়ন যে ভাবে স্তব্ধ হয়ে রয়েছে তাতে আমি অন্তত কংগ্রেসের পুরবোর্ডের প্রশংসা করতে পারব না।”