Advertisement
১১ জুন ২০২৪

বাংলা ভাগের কথা দেয়নি বিজেপি: অহলুওয়ালিয়া

বাংলা বিভাজনের প্রশ্নে তাঁরা যে মোর্চা নেতৃত্বকে কোনও পাকা কথা দেননি শনিবার তা স্পষ্ট করে দিলেন পাহাড়ের বিজেপি প্রার্থী সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া। তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করে জিএনএলএফ সুপ্রিমো সুবাস ঘিসিঙ্গও জানিয়ে দিলেন, গোর্খাল্যান্ড দাবির ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ প্রয়োগের আর প্রয়োজন নেই। নির্বাচনের মুখে তাদের সমর্থিত বিজেপি প্রার্থীর এ হেন মন্তব্যে স্পষ্টই অস্বস্তিতে মোর্চা। আর, বিকেলে, এ ব্যাপারে জিএনএলএফ সভাপতির ওই উক্তিতে মোর্চা নেতৃত্ব ঘিসিঙ্গকে ‘গদ্দার’ বলে চিহ্নিত করছেন।

শিলিগুড়িতে অহলুওয়ালিয়া। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক

শিলিগুড়িতে অহলুওয়ালিয়া। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি ও দার্জিলিং শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৪ ০৪:০২
Share: Save:

বাংলা বিভাজনের প্রশ্নে তাঁরা যে মোর্চা নেতৃত্বকে কোনও পাকা কথা দেননি শনিবার তা স্পষ্ট করে দিলেন পাহাড়ের বিজেপি প্রার্থী সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া।

তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করে জিএনএলএফ সুপ্রিমো সুবাস ঘিসিঙ্গও জানিয়ে দিলেন, গোর্খাল্যান্ড দাবির ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ প্রয়োগের আর প্রয়োজন নেই।

নির্বাচনের মুখে তাদের সমর্থিত বিজেপি প্রার্থীর এ হেন মন্তব্যে স্পষ্টই অস্বস্তিতে মোর্চা।

আর, বিকেলে, এ ব্যাপারে জিএনএলএফ সভাপতির ওই উক্তিতে মোর্চা নেতৃত্ব ঘিসিঙ্গকে ‘গদ্দার’ বলে চিহ্নিত করছেন।

মোর্চার অন্দরের খবর, বিজেপির মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে জরুরি বৈঠক ডাকছে দলের কেন্দ্রীয় কমিটি।

এ দিন শিলিগুড়িতে দার্জিলিং কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী অহলুওয়ালিয়া বলেন, “‘বাংলা ভাগের চক্রান্ত করছে বিজেপি, এমনই একটা পরিকল্পিত অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। কয়েকটি হোর্ডিংয়েও তা লেখা হয়েছে বলে চোখে পড়ল। বিজেপি কোথাও বলেনি গোর্খাল্যান্ড দেওয়া হবে। আমরা বলেছি, মোর্চার ওই দাবির বিষয়টি সহানুভূতির সঙ্গে বিচার করা হবে। এটুকুই।” তাঁর দাবি, সুশাসনের প্রয়োজনে বিজেপি ছোট রাজ্যের পক্ষে। সেই প্রসঙ্গেই মোর্চার দাবি ‘সহানুভূতির সঙ্গে’ দেখা হবে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব আশ্বস্ত করেছিলেন। তারই ভুল ব্যাখ্যা করা হচ্ছে বলে বিজেপি প্রার্থীর দাবি।

যা শুনে মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি অবশ্য বলেন, “বিজেপি প্রার্থী কী বলেছেন তা নিজে না শুনে কোনও মন্তব্য করতে যাব কেন! আগে তো জানতে হবে উনি কী বলতে চেয়েছেন। আমরা অহলুওয়ালিয়ার সঙ্গে কথা বলব।”

কালিম্পঙের বিধায়ক তথা মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার সচিব হরকাবাহাদুর ছেত্রী এ দিন বিজেপি প্রার্থীর মন্তব্য প্রসঙ্গে বলেন, “বিজেপি প্রার্থী ঠিক কথাই বলেছেন। তাঁরা আমাদের দাবির বিষয়টি সহানুভূতির সঙ্গে দেখবেন বলে জানিয়েছেন। অন্য কোনও রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে এখনও আমরা সেই সহযোগিতার আশ্বাস পাইনি। গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে আমাদের আন্দোলন, লড়াইকে এগিয়ে নিয়ে যেতে তাই বিজেপি’কে আমরা সমর্থন করেছি।” তাঁর দাবি, “বিধানসভার সময় তৃণমূলের কাছ থেকে আমরা আশ্বাস পেয়েছিলাম। তা মাথায় রেখেই জিটিএ চুক্তি হয়েছে। এখন তারা পিছু হটছে।”

পাহাড়ে মোর্চার সমর্থনের ভিত্তিতেই বিজেপি জয়ের সম্ভবনা দেখছে। শুক্রবার বিকেলে ফেসবুকে সে ব্যাপারে পোস্ট করে মোর্চা প্রধান গুরুঙ্গও জানান, বিজেপিকে সমর্থন করে গোর্খাল্যান্ডের অন্তিম লড়াই লড়ছেন তাঁরা।

অহলুওয়ালিয়ার মন্তব্য নিয়ে মোর্চা নেতৃত্ব যখন বিড়ম্বনা আড়াল করতে ব্যস্ত তখনই এ দিন দুপুরে তাঁর জাকির হুসেন রোডের জিনএলএফ সভাপতি সুবাস ঘিসিঙ্গ মন্ত্যব করে বসেন, “আটের দশকে গোর্খাদের জাতিসত্তার সমস্যা ছিল। সেই পরিপ্রেক্ষিতে পাহাড়ে পৃথক রাজ্যের দাবি প্রাসঙ্গিক ছিল। এখন পরিস্থিতি অন্য। তাই ওই ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ প্রয়োগের আর দরকার নেই।” তিনি জানান, ষষ্ঠ তফসিল-ই এখন ‘শ্রেষ্ঠ বিকল্প’। নির্বাচন শেষে ওই দাবি নিয়েই তাঁরা এ ব্যাপারে কেন্দ্র এবং রাজ্যের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে চান। তিনি বলেন, “ভোটের আগে অনেকেই আমাদের সমর্থন চেয়েছিলেন। কিন্তু আমরা মনে করেছি, ভাইচুং দার্জিলিং কেন্দ্রের যোগ্যতম প্রার্থী। তাঁর বয়সও অল্প ও জনপ্রিয়। তাই কোনও শর্ত আরোপ ছাড়াই আমরা তাঁকে সমর্থন করছি।”

এ ব্যাপারে মোর্চার সহ-সম্পাদক বিনয় তামাঙ্গের মন্তব্য, “তৃণমূলকে সমর্থন করা থেকেই স্পষ্ট, গোর্খাল্যান্ডের দাবিকে খুন করার চেষ্টা করছেন ঘিসিঙ্গ। তিনি গদ্দার। এটাও প্রমাণ হল, যে কোনওদিনই পাহাড়ের জন্য গোর্খাল্যান্ড চাননি তাঁরা।”

সিপিএম নেতৃত্ব অবশ্য এই প্রসঙ্গ নিয়ে তৃণমূল এবং বিজেপি দু’দলকেই বিঁধেছে। প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যের দাবি, “২০০৯ সালে বিজেপি গোর্খাল্যান্ডের দাবির বিষয়টি মেনে নিয়ে সমর্থন আদায় করেছিল। ২০১১ সালে তৃণমূলও তাই করে। তারা জিটিএ চুক্তি করে সেই দাবিকে কার্যত স্বীকৃতি দিয়ে ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করেছে।”

এ দিন বিজেপি প্রার্থীর মন্তব্য নিয়ে কটাক্ষ করতে অবশ্য ছাড়েননি উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব। তিনি বলেন, “মানুষ সবই দেখছেন। বাংলা ভাগের চক্রান্ত এবং বহিরাগত বলে বিজেপি’র প্রার্থীকে চোপড়ায় ক্ষোভের মুখেও পড়তে হয়েছে। জিটিএ চুক্তি নিয়ে বিজেপি প্রার্থী যা বোঝাতে চাইছেন তা ঠিক নয়। তাতে লেখা রয়েছে পাহাড় বাংলার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।” এ দিন পাহাড় নিয়ে তৃণমূল প্রার্থী ভাইচুং ভুটিয়া একটি পুস্তিকাও প্রকাশ করেন। গোর্খাল্যান্ড প্রসঙ্গে যেখানে একটি শব্দও খরচ করা হয়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE