বেজায় গরম! শেষ বেলার প্রচারের মেয়াদ যখন ফুরিয়েছে, তাপমাত্রা ছিল ৩৭ ডিগ্রি। ভোটের আগের দিনও পারদ নামেনি, কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, উল্টে সূর্য তেজ বাড়িয়েছে। ফলের রস, ছাতু, আইসক্রিম বিক্রি বেড়েছে। শশা, তরমুজের চাহিদা বেড়েছে বাজারে। প্রখর দাবদাহে বাজারে পেট ‘ঠান্ডা’ রাখার খাদ্যবস্তুর চাহিদা বাড়লেও, ভোটের মেনুতে খুব একটা প্রভাব পড়েছে কী?
জলপাইগুড়ি থেকে কোচবিহার, যুযুধান বিভিন্ন শিবিরের প্রাথমিক প্রস্তুতি খোঁজ নিয়ে অন্তত জানা গেল, ভোটের ‘মেনুতে’ দাব-দাহ তেমন পাত্তা পাচ্ছে না। দলের কর্মীদের জন্য এক পক্ষ বিরিয়ানির ব্যবস্থা করেছে, কেউ আবার ফ্রায়েড রাইস আর চিলি চিকেন। দুপুরের খাবারে মেনুতে কোনও শিবিরের ভাত-মুরগির মাংস আর আলুভাজা, আবার অন্য শিবিরের বুথে জিরা রাইস আর মুরগির কষা ঝোল পৌঁছনোর কথা হয়েছে।
জলপাইগুড়ি সদরের একটি বুথে নিজেদের ‘এজেন্ট’ এবং কর্মীদের খাওয়ারের এমনই আয়োজন করেছে চার দলের স্থানীয় নেতৃত্ব। বুথে ভোট গ্রহণ চলাকালীন প্রতিটি দলকে এক জন করে এজেন্ট রাখতে হয়। থাকেন এক জন ‘রিলিভার’ও। সব মিলিয়ে একটি বুথে ভোট তদারকিতে অন্তত ১০/১২ জন কর্মীকে রাখতে হয়। বহু ভোট পরিচালনার অভিজ্ঞতা থাকা এক নেতার কথায়, “সকাল থেকে কর্মীরা খাটাখাটি করে, প্যাকেট খুলে ভাল খাবার না পেলে উৎসাহ পাবে?”
আজ বৃহস্পতিবার দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার জেলার চারটি আসনে সাড়ে পাঁচ হাজারেও বেশি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ করা হবে। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানা যায়, তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে পাঁচ ডিগ্রি বেশি আছে। আজ ভোটের দিন আকাশ মেঘলা থাকলেও, গরম কমার লক্ষণ নেই। তাই, মশলাদার খাবারে দলীয় ‘ভোট ম্যানেজারদের’ শরীর খারাপ হবে না তো?—এই বিষয়ে সর্তক থাকার নিদান দিয়েছেন চিকিৎসকরাও। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের এক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক শেখর চক্রবর্তী সাফ জানালেন, “যা গরম তাতে বেশি তেল-ঝাল মশলা চলবে না। ভোটের দিন সকাল থেকে চড়া রোদে দিনভর বা ঘরে বসে এক টানা যাঁদের কাজ করতে হবে, তাঁদের সহজপাচ্য খাবার খেতে হবে। বেশি করে জল খেতে হবে।” কর্মীদের জন্য একটি মেনু বেছে দিয়েছেন শেখরবাবু। লুচি-পুরির বদলে রুটি-তরকারি, মুড়ি-ছাতু কিংবা দুধ-কর্নফ্লেক্স। দুপুরের খাবারে ভাত-ডাল-হালকা সব্জি এবং ছোট মাছের ঝোল। তৈলাক্ত বা পাকা মাছ, মাংস না খাওয়াই ভাল। ঠান্ডা পানীয় এড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি।
যদিও ডান-বাম দলগুলির অন্দরে যে প্রস্তুতির তাতে ভোটের দিন সব দল-ই যে ‘স্বাস্থ্য বিধি’ ভাঙেছে এটা পরিষ্কার। জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া একটি বুথের কংগ্রেস কর্মীরা দলের নেতাদের সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, গত পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলের খাবারের প্যাকেটের ‘ওজন’ বেশি ছিল। এবার ‘ওদের’ টেক্কা না দিলে দলের কর্মীদের মান থাকবে না। মান রাখতে ফ্রায়েড রাইস এবং চিলি চিকেনের আয়োজন। জলপাইগুড়ির মণ্ডলঘাট হোক বা কোচবিহারের ভেটাগুড়ি বা শিলিগুড়ি সংলগ্ন নকশালবাড়ি অঞ্চলে সকালের প্যাকেটে সব দলই পুরি-সব্জি আর মিষ্টির ব্যবস্থা রাখছে। জলপাইগুড়ি শহর এলাকার এক বুথে ‘কমরেড’দের জন্য ভাত এবং মুরগির মাংসের ব্যবস্থা করে সিপিএম। কোচবিহার চৌধুরীহাট, সাহেবগঞ্জ, নয়ারহাটের বুথগুলিতে তৃণমূল নেতারা ভাতের সঙ্গে মাছের ঝোল বা কালিয়ার ব্যবস্থা রাখছেন। তবে শিলিগুড়ি লাগোয়া একটি বুথে বিরিয়ানির আয়োজন করা হয়েছে বলে খবর। পিছিয়ে নেই বিজেপিও। মেনুতে রয়েছে জিরে রাইস, সাদা ভাত সঙ্গে মুরগির কষা। বিজেপির জলপাইগুড়ি জেলার সাধারণ সম্পাদক বাপি গোস্বামী বলেন, “প্রতিটি বুথে নুন-চিনির জল রাখতে বলা হয়েছে। দুপুরে হালকা খাবারের ব্যবস্থা।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy