আগাছায় ভরা স্টেডিয়ামের পিছনে সন্ধ্যার পরে অসামাজিক কাজকর্ম চলার অভিযোগ ছিল। স্টেডিয়াম বলতে মাঠের দু’দিকে দু’টি করে চারটি স্টেডিয়াম। দিনের বেলায় দেখা যেত স্টেডিয়ামের পেছনের ঝোপের ফাঁকে ছড়িয়ে রয়েছে নিষিদ্ধ কাশির ওষুধ, মাদক ট্যাবলেটের ছেঁড়া স্ট্রিপ, মদ-বিয়ারের ফাঁকা বোতল। তাই জলপাইগুড়ি স্পোর্টস কমপ্লেক্স চত্বরে পুলিশি অভিযানও প্রায়ই হতো।
এই এলাকাতেই এখন এলইডি আলোয় চকচক করছে পালিশ করা নাইজিরিয়ান টিকের ‘উডেন ফ্লোর’। ফ্লোরের উপর রাখা হাইড্রোলিক বেশ কয়েকটি বার। যেগুলি সাজিয়ে ব্যাটমিন্টন কোর্টকে নিমিষেই বদলে ফেলা যাবে ভলিবল অথবা বাস্কেট বল কোর্টে। ফ্লোর ঘিরে দোতলা স্টেডিয়ামে বসতে পারবেন হাজার চারেক দর্শক। একসময়ে বিকেলের পরেই যে এলাকা অন্ধকারে ঢাকা পড়ত, সেখানে এখন অন্তত পঞ্চাশটি এলইডি আলোর রশ্মি এসে পড়ছে। সাদা আলোয় ২২ হাজার ৭০০ বর্গফুট এলাকা এখন সন্ধ্যের পরেও দিন বলে বিস্ময় জাগাতে পারে।
জলপাইগুড়ি স্পোর্টস কমপ্লেক্স চত্বরে তৈরি হয়েছে ইন্ডোর স্টেডিয়াম। নীল সাদা রঙের অর্ধবৃত্তাকার ভবনটি মূল প্রবেশ পথে প্রশস্ত কাঁচের দরজা। অনেকটা কেতাদুরস্ত শপিং মলে ঢোকার আদলে তৈরি প্রবেশ পথ। মূল স্টেডিয়ামের চারপাশ ঘিরে রয়েছে পৃথক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। প্রথম ঘরেই পাশাপাশি দুটি ব্যাডমিন্টন কোর্ট। এই কোর্টগুলিও হাইড্রলিক বার দিয়ে তৈরি, যে কোনও সময় কোর্টগুলিকে সরিয়ে নেওয়া যাবে। ব্যাডমিন্টনের পাশের ধর বরাদ্দ টেবিল টেনিসের জন্য। রয়েছে মাল্টিজিম। সেখানে অত্যাধুনিক ট্রেডমিল-সহ ভারত্তোলনের স্বয়ক্রিয় কিছু যন্ত্র। বিলিয়ার্ড এবং স্নুকার্সের জন্যও তৈরি হয়েছে পৃথক একটি ঘর। তৈরি করা হয়েছে ক্যাফেটেরিয়াও।
সুইমিং পুল এবং লন টেনিস কোর্ট তৈরির কাজ চলছে ইন্ডোর স্টেডিয়ামের দু’পাশে। স্টেডিয়াম ঘেঁষেই তৈরি হয়েছে আরেকটি ঘর। যেখানে স্কোয়াশ খেলার ব্যবস্থা রয়েছে। তিরন্দাজি, বক্সিঙের জন্যও পৃথক ব্যবস্থা রয়েছে ইন্ডোর স্টেডিয়ামে। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, অন্তত ১৫ কোটি টাকা ব্যয় করে ইন্ডোর স্টেডিয়াম তৈরি হয়েছে। ইন্ডোরের সঙ্গে মূল স্টেডিয়াম তৈরির কাজও শেষ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে। গত ৩ ডিসেম্বর উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী কমপ্লেক্স চত্বরের নাম রাখেন জলপাইগুড়ি বিশ্ববঙ্গ ক্রীড়াঙ্গন।
নব্বইয়ের দশকে শুরু হওয়া স্পোর্টস কমপ্লেস তৈরির কাজ শুরু হয়। বহু আন্দোলনের ফসল এই কমপ্লেক্সে দু’টি স্টেডিয়াম তৈরির পরেই কাজ থমকে যায় বলে অভিযোগ। কাজ শেষ করার দাবিতেও শহর জুড়ে নানা সময়ে একাধিক সংগঠন আন্দোলন করেছে। অবশেষে ইন্ডোর স্টেডিয়াম তৈরি এবং স্টেডিয়ামের কাজ শেষ করার উদ্যোগ শুরু হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছে জেলার ক্রীড়া মহল। জেলা ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “শুধু ক্রীড়াপ্রেমীরাই নন, শহরের সর্বস্তরের বাসিন্দার আবেগ রয়েছে স্পোর্টস কমপ্লেক্স ঘিরে। সে কারণে যে কোনও শুভ উদ্যোগ জলপাইগুড়িবাসী স্বাগত জানায়। আশা করব দ্রুত কাজ শেষ হয়ে রাজ্যের মধ্যে এই ক্রীড়াঙ্গনটি গর্বের ক্ষেত্র হবে।”
ক্রীড়া ক্ষেত্রে যে রুপোলি রেখা তৈরি হয়েছে সংস্কৃতি ক্ষেত্রে তা কবে আসবে সে প্রশ্নেরও উত্তর চায় শহরবাসী। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরই ক্রীড়াঙ্গন তৈরির দায়িত্বে ছিল। দফতরের মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “জাতীয় স্তরের ক্রীড়াঙ্গন তৈরি হয়েছে জলপাইগুড়িতে। খুব যত্ন নিয়ে যথাযথ পরিকল্পনা করে এটি তৈরি হয়েছে। জলপাইগুড়ির রবীন্দ্রভবন বা আর্ট গ্যালারি নিয়েও উদ্যোগ চলছে। শহরবাসীর নিরাশ হওয়ার কোনও কারণ নেই। আমরা জলপাইগুড়ির আবেগের কথা জানি।”
শুধু ক্রীড়া বা সংস্কৃতি ক্ষেত্রেই নয়, স্বাধীনতার পর থেকেই নানা বিষয়ে আশ্বাস-প্রতিশ্রুতির সাক্ষী উত্তরবঙ্গের এই বিভাগীয় সদর। সেই আশ্বাস-প্রতিশ্রুতির কিছু রূপায়িত হলেও, সিংহভাগ এখনও অধরা বলে দলমত নির্বিশেষে বাসিন্দাদের অভিযোগ। শহরের সংস্কৃতি ক্ষেত্রেও কে সেই একই ভবিতব্য, নাকি কোনও ব্যতিক্রমী পদক্ষেপ এই শহরের জন্য অপেক্ষা করে রয়েছে, সেটাই এখন দেখার।
কেমন লাগছে আমার শহর? নিজের শহর নিয়ে আরও কিছু বলার থাকলে
আমাদের জানান। ই-মেল পাঠান district@abp.in-এ।
Subject-এ লিখুন ‘আমার শহর-শহরের নাম’।
অথবা চিঠি পাঠান, ‘আমার শহর-শহরের নাম’,
আনন্দবাজার পত্রিকা, ১৩৬/৮৯ চার্চ রোড,
শিলিগুড়ি ৭৩৪০০১।
প্রতিক্রিয়া জানান এই ফেসবুক পেজেও:
www.facebook.com/anandabazar.abp।